যে কোনো ধরণের জাতীয়তাবাদ কেন খারাপ?
একটি রাষ্ট্র থেকে অন্য একটি রাষ্ট্র পৃথক হয় কয়েকটি কারণে। ১) ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে, ২) ভাষার ভিন্নতার কারণে, ৩) ধর্মের ভিন্নতার কারণে, ৪) গোত্রের ভিন্নতার কারণে, ৫) মর্যাদাগত ভিন্নতার কারণে, ও ৬) মতাদর্শিক ভিন্নতার কারণে।
পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র সৃষ্টি হয় সাধারণত ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে; যেমন, পৃথিবীর বিভিন্ন মসজিদ তৈরি করতে হয় কেবল ভৌগোলিক দূরত্বের কারণেই। কিন্তু কিছু কিছু রাষ্ট্র সৃষ্টি হয় ভাষা-ধর্ম-গোত্র ও মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে।
যে সূত্র ধরে একটি রাষ্ট্রের অধিকাংশ মানুষ সঙ্ঘবদ্ধ হয়, তাকে ইবনে খালদুন বলেন আসাবিয়্যাহ বা জাতীয় সংহতি। যে কোনো রাষ্ট্রের জন্যে জাতীয় সংহতি থাকা অত্যাবশ্যক, এটি ছাড়া কোনো রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রের জাতীয় সংহতি যদি কেবল ভাষা, বা কেবল ধর্ম, বা কেবল গোত্র বা কেবল ভূখণ্ডের ভিত্তিতে নির্মিত হয়, তখন সেই জাতীয় সংহতি জাতীয়তাবাদে রূপ নেয়। এবং এই জাতীয়তাবাদ এক সময়ে রেসিজমে রূপ নেয়।
বিষয়টি আরো ভালো করে বুঝার জন্যে আমরা একটা পরিবারের উদাহরণ নিতে পারি, কারণ একটি পরিবার হলো একটি রাষ্ট্রের ক্ষুদ্র রূপ। জীবনে বেঁচে থাকার জন্যে একটি পরিবারের সদস্যদেরকে একই বাসায় থাকতে হয়, কিন্তু তাই বলে নিজের পরিবারকে অন্য পরিবার থেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার প্রয়োজন পড়ে না। যে কারণে একটি পরিবারের সকল সদস্য একসাথে বাস করে, সেটাকে বলা হয় পারিবারিক সংহতি, এটি খারাপ কিছু নয়। কিন্তু, যে কারণে একটি পরিবারকে অন্য পরিবারের চেয়ে শ্রেষ্ঠ দাবী করা হয়, সেটা অবশ্যই খারাপ। একইভাবে জাতীয়তাবাদও খারাপ।
অনেকে বলেন, কেবল ধর্মের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী হওয়া খারাপ, কিন্তু ভাষা, গোত্র, ভূখণ্ডের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী হওয়া খারাপ কিছু নয়। আসলে যে কোনো ধরণের জাতীয়তাবাদ-ই খারাপ। তাই জাতীয়তাবাদ নয়, আমাদের প্রয়োজন জাতীয় সংহতি ও রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সহ অবস্থান।