রাসূল (স) –এর পদ্ধতিতে অভিমানের বহিঃপ্রকাশ

সমাজের খারাপ কাজগুলো দেখলে আমাদের মনে এক ধরনের অভিমান জন্ম নেয়। আমাদের প্রচণ্ড রাগ হয়, ক্ষোভ হয়। এটা ঈমানের-ই একটি দাবি। কিন্তু এই অভিমানের বহিঃপ্রকাশ প্রায়ই আমরা রাসূল (স) –এর পদ্ধতিতে করতে পারি না।

আমাদের এই অভিমানের জন্যে আমরা অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রতিদান পাবো; কিন্তু এই অভিমানের বহিঃপ্রকাশ যদি রাসূল (স)-এর মত না হয়, তাহলে পূর্ণাঙ্গ প্রতিদানের আশা করতে পারব না।

ধরুন, যে মানুষটা আজ তার ভালোবাসার সাথে দেখা করার জন্যে গোলাপ হাতে নিয়ে বের হল, তাকে দেখে নিশ্চয় আপনার খুব রাগ হবে, সমাজের প্রতি অভিমান আসবে; কিন্তু কিভাবে তাকে এ কাজ থেকে বিরত রাখবেন?

যদি আপনি একজন ধৈর্যশীল মানুষ হন, তাহলে হয়ত ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’-এর প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরে তাকে বলবেন- ‘দেখ, ভ্যালেন্টাইন’স ডে মানে কিন্তু ভালোবাসা দিবস না, তুমি আসলে ভুল করছ’। নতুবা বলবেন- ‘ভালোবাসা দিবস নির্ভর না, তুমি কেনো গড্ডালিকা প্রবাহে নিজেকে ভাসিয়ে দিচ্ছ?’ ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আর যদি সামাজিকভাবে তাকে সচেতন করতে চান, তাহলে হয়তো বলবেন- ‘ভাইয়া, আপনি আজ সারাদিন যে কাজগুলো করলেন, সব তো পুঁজিবাদীদের স্বার্থে করেছেন; এটা আপনার উচিত হয়নি; অথবা বলবেন- ‘আপু, আপনার মানবিক মর্যাদাকে পশুত্বে পরিণত করার লক্ষ্যেই এসব দিবসের আয়োজন করা হয়। আপনি কেনো এ কাজ করতে গেলেন? আপনাকে আমি আগে মানুষ মনে করতাম’।

আপনার অভিমান খুব বেশি হলে বলবেন- ‘তুমি এসব হারাম কাজ কেনো করলে? তোমার কি ঈমান আছে? আজ থেকে তোমার সাথে আমার সম্পর্ক নেই’। কিংবা হয়তো এর চেয়ে আরও কোনো কড়া কথা তাকে শুনিয়ে দিবেন।

সরাসরি কাউকে এসব বলতে না পারলে হয়তো ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র খারাপ দিকগুলো তুলে ধরবেন।

আজ যদি রাসূল (স) আমাদের মাঝে থাকতেন, তিনিও হয়ত ‘ভ্যালেন্টাইন’সডে’ সহ সমাজের অন্যান্য খারাপ কাজের কুফল আমাদের সামনে তুলে ধরতেন। কিন্তু তখন রাসূল (স) ও আমাদের মাঝে একটি মৌলিক পার্থক্য দেখা যেত।

আমরা যখন কারো খারাপ কাজের সমালোচনা করি, তখন ঐ মানুষটিকেও ঘৃণা করি। অথচ রাসূল (স) যখন কারো সমালোচনা করতেন, তখন তাকে ভালোবেসেই সংশোধন করার চেষ্টা করতেন।

তিনি সব সময় মানুষের সাইকোলজি বুঝে তাকে দাওয়াহ দিতেন, ভালোবাসার মনোভাব নিয়ে তাদের কাছে যেতেন; অথচ আমরা মানুষকে দাওয়াত দেয়ার আগেই তাকে ঘৃণা করতে শুরু করি।

আজ সারাদিন কিছু ভাই-বোনকে দেখলাম, ফেইসবুকে ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’র বিরুদ্ধে অনেক লেখালেখি করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌; আল্লাহ তায়ালা তাঁদের নিয়্যাতের কারণে অবশ্যই উত্তম জাযা দান করবেন। কিন্তু যে ভাষায়, যে শব্দে, যে পদ্ধতিতে তারা এসব লিখেছেন, সেখানে একটা চরম ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।

যদি সত্যিকারভাবে রাসূল (স)-এর সাথে আমাদের দাওয়াতের পদ্ধতি মিলিয়ে দেখি, বুঝব, তাঁর সাথে আমাদের কত বড় ব্যবধান।

February 14, 2015 at 9:12 PM

আরো পোস্ট