সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক
সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন।
সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা।
গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে।
একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, “আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না”। একজন জাহেরি মানুষ এর আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করবে, এবং ভাববে যে, তার প্রিয়া আসলেই তার কথা শুনতে চান না। কিন্তু, একজন বাতেনি বা সূফী মানুষ এর অর্থ করবে ভিন্নভাবে, এবং ভাববে যে, “আমার প্রিয়া আমাকে আসলে আরো বেশি ভালোবাসার জন্যেই এমন বলছে।”
এখানেই মুফতি ও সুফিদের মধ্যে পার্থক্য। মুফতি ও সালাফীরা কোনো বিষয়ের বাহ্যিক দেখে ফতোয়া দেন, আর সূফীরা ঘটনার ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন।
সূফীদের এই তত্ত্বটি কোর’আনের একটি আয়াত থেকে এসেছে।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন –
هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ – 57:3
“তিনিই প্রথম এবং শেষ। তিনি জাহের এবং বাতেন (প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য)। তিনি সবকিছু জানেন। [সূরা হাদিদ – ৩]
সূফীদের জাহের-বাতেন তত্ত্ব অনুযায়ী তারা বলেন, কোনো কিছু দেখলেই বা শুনলেই কাউকে বিচার করতে যাওয়া ঠিক নয়। বরং প্রতিটি ঘটনার প্রেক্ষাপট গভীরভাবে জেনে এবং প্রতিটি মানুষের গভীরে প্রবেশ করে, তারপর কোনো মন্তব্য করা উচিত।