একটি দেশে রাষ্ট্র প্রধান বা সুলতানের প্রয়োজন কেন? – ইবনে খালদুন
একটি সমাজ বা রাষ্ট্র কেনো গঠিত হয়, এবং কিভাবে গঠিত হয়, তা নিয়ে পশ্চিমা সমাজবিজ্ঞানীদের অনেক তত্ত্ব রয়েছে। চিন্তা পাঠচক্রে সম্প্রতি হবসের ‘লেভিয়াথান’ নিয়ে আলোচনা চলছে। এই আলোচনার বিপরীতে মোজাম্মেল স্যার তাঁর বক্তব্য দিয়েছেন।
ফরহাদ মজহার ভাই অথবা মোজাম্মেল Hoque স্যারের আলোচনায় প্রবেশ করার আগে আমার কাছে মনে হয়েছে ইবনে খালদুনের মুকাদ্দিমা থেকে একটু ঘুরে আসা প্রয়োজন।
সমাজের জন্যে কেনো একজন অথোরিটির বা সুলতানের প্রয়োজন আছে, এ সম্পর্কে ইবনে খালদুন বলেন –
ثم أن هذا الاجتماع إذا حصل للبشر كما قررناه و تم عمران العالم بهم فلا بد من وازع يدفع بعضهم عن بعض لما في طباعهم الحيوانية من العدوان و الظلم و ليست السلاح التي جعلت دافعة لعدوان الحيوانات العجم عنهم كافية في دفع العدوان عنهم لأنها موجودة لجميعهم فلا بد من شيىء آخر يدفع عدوان بعضهم عن بعض. و لا يكون من غيرهم لقصور جميع الحيوانات عن مداركهم و إلهاماتهم فيكون ذلك الوازع واحداً منهم يكون له عليهم الغلبة و السلطان و اليد القاهرة حتى لا يصل أحد إلى غيره بعدوان و هذا هو معنى الملك و قد تبين لك بهذا أن للإنسان خاصة طبيعية و لا بد لهم منها و قد يوجد في بعض الحيوانات العجم على ما ذكره الحكماء كما في النحل و الجراد لما استقرىء فيها من الحكم و الانقياد و الاتباع لرئيس من أشخاصها متميز عنهم في خلقه و جثمانه إلا أن ذلك موجود لغير الإنسان بمقتضى الفطرة و الهداية لا بمقتضى الفكرة و السياسة أعطى كل شيء خلقه ثم هدى
When mankind has achieved social organization, as we have stated, and when civilization in the world has thus become a fact, people need someone to exercise a restraining influence and keep them apart, for aggressiveness and injustice are in the animal nature of man. The weapons made for the defense of human beings against the aggressiveness of dumb animals do not suffice against the aggressiveness of man to man, because all of them possess those weapons. Thus, something else is needed for defense against the aggressiveness of human beings toward each other. It could not come from outside, because all the other animals fall short of human perceptions and inspiration. The person who exercises a restraining influence, therefore, must be one of themselves. He must dominate them and have power and authority over them, so that no one of them will be able to attack another. This is the meaning of royal authority.
It has thus become clear that royal authority is a natural quality of man which is absolutely necessary to mankind. The philosophers mention that it also exists among certain dumb animals, such as the bees and the locusts. One discerns among them the existence of authority and obedience to a leader. They follow the one of them who is distinguished as their leader by his natural characteristics and body. However, outside of human beings, these things exist as the result of natural disposition and divine guidance, and not as the result of an ability to think or to administrate. “He gave everything its natural characteristics, and then guided it.”
[Ibn Khaldun (1332 – 1406), Muqaddimah, First prefatory discussion, translated by Rosenthal]
অতঃপর মানুষ যখন সমাজ জীবনের প্রতিষ্ঠা করল, যেমন আমরা বর্ণনা করেছি, সভ্যতার ভিত্তি স্থাপিত হল, তখন তাদের জন্য এমন একজন শৃঙ্খলা বিধায়কের প্রয়োজন, যিনি সামাজিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। কারণ মানুষ স্বভাবতই পাশবিক আচরণ ও উৎপীড়নে অভ্যস্ত। ভাষাহীন প্রাণীর আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য তারা যে সকল অন্ত্র নির্মাণ করেছে, তাদ্বারা তাদের স্বজাতির আক্রমণ ঠেকানো সম্ভব নয়। কারণ তা তাদের সকলেরই আছে। কাজেই অন্য এমন কিছু প্রয়োজনীয়, যা তাদের পরস্পরের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সমর্থ হয়। তা অবশ্যই অন্য প্রাণীদের মধ্য থেকে হওয়া সম্ভব নয়; কেননা তাদের মধ্যে মানবোচিত অনুভূতি ও অনুপ্রেরণার একান্তই অভাব। সুতরাং উক্ত শৃঙ্খলা বিধায়ক তাদের মধ্য থেকেই এমন একজনকে হতে হবে, যিনি তাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার, শক্তি ও দৌর্দণ্ড প্রতাপে পরস্পরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হবেন । এটাই রাষ্ট্র ব্যবস্থা।
এ আলোচনায় পাঠকের নিকট এটা অবশ্যই পরস্ফুট হয়েছে যে, এ ব্যবস্থা স্বভাবতই মানুষের জন্য বিশিষ্ট এবং প্রয়োজনীয়। কখনও এটা ভাষাহীন প্রাণীদের মধ্যেও পাওয়া যায়, যেমন জ্ঞানীরা মধুমক্ষিকা ও পঙ্গপাল সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যেও নির্দেশ আনুগত্য ও অনুসরণের স্বভাব লক্ষ্য করা গেছে। তারা নিজেদের মধ্য থেকেই বিশেষ চরিত্র ও দেহের অধিকারী কাউকে নেতা হিসাবে মেনে থাকে। কিন্তু মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণীদের মধ্যকার এ স্বভাব তাদের সহজাত প্রবৃত্তির তাড়না মাত্র। শুধু মানুষই একে শাসন ও চিন্তার ফসল হিসাবে গ্রহণ করেছে। তিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার সৃজনস্বভাব দিয়েছেন, অতঃপর পথ নির্দেশ করেছেন।
[ইবনে খালদুন (১৩৩২ – ১৪০৬), মুকাদ্দিমা, প্রথম প্রস্তাবনা, গোলাম সামদানী কোরায়শী অনূদিত]
২৬/১০/২০১৯