|

শবে বরাত

আমরা ইসলামকে এমন একটি ধর্মে পরিণত করেছি, যার ফলে, কোর’আনের আদেশগুলো যেমন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না, আবার কোর’আনের নিষেধগুলোও আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না।

যারা শবে বরাত পালন করেন, তাঁরা এমন একটি বিষয় নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, যা কোর’আনে আদেশ করা হয়নি। আবার, যারা শবে বরাত পালন করতে নিষেধ করেন, তাঁরাও এমন একটি নিষেধ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, যা কোর’আনে নিষেধ করা হয়নি।

শবে বরাত বাঙালিদের হাজার বছরের সার্বজনীন একটি সংস্কৃতি। ইসলামে এটাকে হালাল বা হারাম কিছুই বলা হয়নি। সুতরাং, কেউ যদি বলে, শবে বরাত সবাইকে পালন করতে হবে, তাহলে সেটাও যেমন বিদায়াত; আবার কেউ যদি বলে শবে বরাত হারাম, তাহলে সেটাও বিদায়াত। কারণ, রাসূল (স) শবে বরাতকে হারাম করে যাননি।

কোর’আনের কোনো নির্দেশনা ছাড়াই বিভিন্ন শায়েখের রেফারেন্সে “এটা হালাল, ঐটা হারাম” এসব বলা মানে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করা।

وَلَا تَقُولُوا۟ لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ ٱلْكَذِبَ هَـٰذَا حَلَـٰلٌۭ وَهَـٰذَا حَرَامٌۭ لِّتَفْتَرُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ ۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ

“তোমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে বল না যে, এটা হালাল এবং ওটা হারাম। নিশ্চয় যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করে, তারা সফল হবে না”। [সূরা ১৬/নাহল – ১১৬]

দুই।

শবে বরাত বাঙালির একটি সার্বজনীন সংস্কৃতি। মঙ্গল শোভাযাত্রা, ভালোবাসা দিবস বা থার্টি ফাস্ট নাইটের চেয়েও হাজার বছরের পুরানো এই সংস্কৃতি।

বছরজুড়ে বাঙালিরা নানারকম দুর্নীতি, গুম, খুন, ধর্ষণ বা জমি দখল করে থাকে। হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম নির্বিশেষে অনেক বাঙ্গালি-ই এসব পাপকাজে অংশ নেয়। ফলে পাপ ও পাপীতে ভারী হয়ে যায় সমগ্র বাংলাদেশ। তাই বাঙালিদের জন্যে এমন একটি রাত থাকা প্রয়োজন, যে রাতে তারা প্রতিজ্ঞা করবে, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্যে পরেরদিন সকাল থেকে তারা আর কোনো পাপ কাজ করবে না। শবে বরাত তেমনি একটি রাত।

আসুন, যে কোনো ধরণের বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, হাজার বছরের সর্বজনীন বাঙালি সংস্কৃতি শবে বরাতে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করি।

আরো পোস্ট

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশ করা হবে না। তারকা (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক