হাদিস ও সুন্নাহর পার্থক্য – সাহাবী বারিরাহ (রা) কেন রাসূল (স)-এর কথা শুনেননি?
আমাদের সময়ে আমরা রাসূল (স)-এর প্রতিটি কথাকেই সুন্নাহ ও সাওয়াবের কাজ মনে করি। কিন্তু, সাহাবীরা এমন মনে করতেন না। সাহাবীরা রাসূল (স)-এর কথাকে সাধারণত দুই ভাগে করতেন। ১) আদেশ ২) সুপারিশ।
রাসূল (স) যদি কোনো বিষয়ে আদেশ করতেন, তাহলে সাহাবীরা তা পালন করাটা অবশ্যিক মনে করতেন। কিন্তু, রাসূল (স) যদি কোনো বিষয়ে সুপারিশ করতেন, তখন তা পালন করাটা সাহাবীদের জন্যে ঐচ্ছিক ছিলো। রাসূল (স)-এর সুপারিশ কিছু সাহাবী পালন করতেন, আবার কেউ করতেন না।
যেমন, মহিলা সাহাবী বারিরাহ (রা) রাসূল (স)-এর একটি সুপারিশ বা অনুরোধ গ্রহণ করেননি। বারিরাহ (রা) যখন ক্রীতদাসী থেকে মুক্তি পেলেন, তখন তিনি তাঁর স্বামী মুগীসকে তালাক দিয়ে দেন। কিন্তু মুগীস তাঁর স্ত্রীকে খুবই ভালোবাসতেন, এমনকি ভালোবাসার মানুষ বারিরাহকে ফিরে পাওয়ার জন্যে মুগীস কাঁদতে কাঁদতে তাঁর দাঁড়ি ভিজিয়ে ফেলতেন। এসব দেখে রাসূল (স) মহিলা সাহাবী বারিরাহকে বলেন – “বারিরাহ, তুমি যদি আবার মুগীসের কাছে ফিরে যেতে!”
তখন বারিরাহ (রা) রাসূল (স)-কে বললেন, “ইয়া রাসূল আল্লাহ, আপনি আমাকে আদেশ করছে?”
রাসূল (স) বললেন – “আমি কেবল তোমাকে সুপারিশ করছি।”
তখন মহিলা সাহাবী বারিরাহ (রা) বললেন – “মুগীসকে আমার কোনো প্রয়োজন নেই।”
দেখুন, সাহাবীরা রাসূল (স)-এর প্রতিটি কথাকে আদেশ হিসাবে পালন করেননি। বরং রাসূল (স)-এর কিছু কিছু সুপারিশ পালন করাটা ঐচ্ছিক মনে করেছেন। এবং সাহাবীরা রাসূল (স)-এর সকল সুপারিশকে ধর্মের অংশও মনে করেননি।
সুতরাং, কোনো কিছু বুখারী-মুসলিম বা সহীহ হাদিসে থাকলেই সেটা পালন করা সবার জন্যে সবসময় আবশ্যিক হয় না।
সূত্র –
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ زَوْجَ بَرِيرَةَ كَانَ عَبْدًا يُقَالُ لَهُ مُغِيثٌ، كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِ يَطُوفُ خَلْفَهَا يَبْكِي وَدُمُوعُهُ تَسِيلُ عَلَى لِحْيَتِهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعبَّاسٍ: «يَا عَبَّاسُ، أَلاَ تَعْجَبُ مِنْ حُبِّ مُغِيثٍ بَرِيرَةَ، وَمِنْ بُغْضِ بَرِيرَةَ مُغِيثًا» فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ رَاجَعْتِهِ» قَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ تَأْمُرُنِي؟ قَالَ: «إِنَّمَا أَنَا أَشْفَعُ» قَالَتْ: لاَ حَاجَةَ لِي فِيهِ
[صحيح البخاري 7/ 48]