ওসমানী খেলাফতের সময়ে ভিন্ন ধর্মের স্বাধীনতা

কেউ কেউ মনে করেন, তুরস্কের ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ খ্রিস্টানদের গির্জা ‘আয়া সোফিয়া’ দখল করে মসজিদ বানিয়ে খ্রিস্টানদের উপর জুলুম করেছেন। এখানে আসলে কোনো জুলুম হয়নি, বরং প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা একটি রাজনৈতিক নিয়ম মানা হয়েছে।

রাসূল (স)-এর আগ থেকেই উপাসনালয়ে যাবতীয় রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। কেউ যখন কোনো ভূখণ্ড জয় লাভ করতো, তখন সে ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় যে উপাসনালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা হতো, তা নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিতো। বাকি উপাসনালয়ে যে যার মতো ইবাদত করতে পারতো।

যেমন, সিরিয়ায় ইহুদিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপাসনালয় ছিলো। খ্রিস্টানরা সিরিয়া জয় করার পর ইহুদিদের সেই উপাসনালয়কে খ্রিস্টানদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্যে সেটাকে গির্জায় রূপান্তরিত করেছে। এরপর মুসলিমরা সিরিয়া জয় করার পর একই কারণে ঐ গির্জাকে মসজিদে পরিণত করেছে। এখন তার নাম The Mosque of Job.

এ ছাড়া, সিরিয়ার সবচেয়ে বড় উমাইয়া মসজিদও একইভাবে সৃষ্টি হয়েছে। ইয়াহইয়া (আ) নির্মিত খ্রিস্টানদের একটি গির্জার সাথেই এই মসজিদটি নির্মাণ করেন ষষ্ঠ উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদ। ৭০৬ সালে। পরবর্তীতে সে গির্জাটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

একই ধারাবাহিকতায়, ১৪৫৩ সালে ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ ইস্তানবুল জয় করার পর খ্রিস্টানদের রাজনৈতিক ভবন আয়াসোফিয়াকে মুসলিমদের রাজনৈতিক ভবনে পরিণত করেন। এ ছাড়া ইস্তানবুলের সকল গির্জার চাবি খ্রিস্টানরা সুলতানের কাছে পাঠানোর পরেও তিনি সেসব চাবি আবার খ্রিস্টানদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

খ্রিস্টানদের সাথে তখন ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ একটি চুক্তি করেছিলেন, যা আজো বাস্তবায়িত হয়। চুক্তিটি হলো, “ইস্তাম্বুল বিজয়ের আগে খ্রিষ্টানদের ইবাদাত ও সংস্কৃতি পালন করার স্বাধীনতা যেমন ছিলো, ইস্তাম্বুল বিজয়ের পরেও ঠিক একইভাবে খ্রিষ্টানদেরকে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। কেউ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।”

অন্যদিকে, মুসলিমদের থেকে গ্রিস দখল করার পর, গ্রিসের সকল মসজিদ ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, এবং এখন পর্যন্ত গ্রিসে উল্লেখযোগ্য কোনো মসজিদ নেই।

আরো পোস্ট