আমি কেন কাদিয়ানীদের বিরোধীতা করি?

কাদিয়ানীদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কিন্তু, তারা যখন গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে নবী বা রাসূল বলে দাবী করে, এবং মানুষকে তা বিশ্বাস করতে বলে, তখনি সমস্যাটা শুরু হয়।

যখন কেউ নবী বা রাসূল দাবী করেন, তখন তিনি বেশ কিছু নতুন নিয়ম-কানুন চালু করেন। এবং বলেন, এগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে আমি প্রাপ্ত হয়েছি, সুতরাং যারা যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তারা আমার এই নতুন নিয়ম-কানুন সব মেনে চলতে হবে।

ব্যক্তিগতভাবে যে কারো কাছে আল্লাহর দিক-নির্দেশনা আসতে পারে। যেমন আমরা প্রতি নামাজে সূরা ফাতিহার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দিক-নির্দেশনা চাই। কিন্তু, যখন কেউ যখন নিজেকে নবী বা রাসূল দাবী করে নিজের পছন্দের দিক-নির্দেশনাকে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে চায়, তখন তা জুলুমে পরিণত হয়।

সকল নবী বা রাসূল মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছেন। এসব সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে মানুষের উপর বেশ কিছু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা যেহেতু তার বান্দাদেরকে কষ্ট দিতে চান না, এবং তাঁর বান্দাদের উপর জুলুম করেন না, তাই সত্যিকার নবী বা রাসূলদের দেয়া দায়িত্বগুলো মানুষের উপর জুলুমে পরিণত হয় না। কিন্তু, নবী বা রাসূল দাবী করা মিথ্যাবাদীরা যখন মানুষের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়, তখন সেটা মানুষের জন্যে জুলুমে পরিণত হয়।

অর্থাৎ, আল্লাহর নামে মিথ্যা বলে মানুষের উপর নতুন নিয়ম-কানুন চাপিয়ে দেয়াটা সুস্পষ্ট জুলুম বা অত্যাচার।

মোহাম্মদ (স) বা অন্য যে কেউ যখন নবী বা রাসূল দাবী করেছেন, তখন জনগণ তাঁকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। যাদেরকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করা যায়নি, তাদেরকে জনগণ নবী হিসাবে মেনে নিয়েছেন, আর, যাদেরকে মিথ্যাবাদী হিসাবে প্রমাণ করা গিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন। অন্য আরেকদল মানুষ ছিল, যারা নিজেরা মিথ্যাবাদী ছিলেন, তাই সত্য নবী বা রাসূলের বিরোধিতা করেছেন।

কাদিয়ানীদের কাফের বলার অর্থ হলো কাদিয়ানীদের মিথ্যাবাদী প্রমাণ করা এবং তাদের জুলুম থেকে মানুষকে মুক্ত করা।

মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার নসীহতনামায় (তাবলীগে রিসালাত। ২য় খণ্ড, ১২৩ পৃষ্ঠা) বলেন –

“তোমরা এ কথা বুঝিয়া লও যে, খোদা তায়ালা তোমাদের মঙ্গলের জন্যেই এ দেশে ইংরেজদের রাজত্ব কায়েম করিয়াছেন। যদি সরকারের উপর কোন প্রকার বিপদ-আপদ দেখা দেয়, তবে তাহা তোমাদিগকে ধ্বংস করিবে। …তোমরা একটু অন্য কোন রাজ্যে যাইয়া কিছুদিন সেখানে বসবাস করিয়া দেখ যে, তোমাদের সহিত কিরূপ ব্যবহার করা হয়?

শুন! ইংরেজদের রাজত্ব তোমাদের জন্য একটি বরকত, এবং খোদার তরফ হইতে তাহা তোমাদের জন্য ঢাল স্বরূপ। অতএব তোমরা নিজেদের জান-প্রাণ দিয়া ঢালের যত্ন কর, হেফাজত কর, এবং সম্মান কর। আমাদের বিরোধী মুসলমানদের তুলনায় ইংরেজরা হাজারগুণে শ্রেষ্ঠ। কারণ, ইংরেজরা আমাদেরকে হত্যার যোগ্য মনে করে না, এমনকি আমাদেরকে অপদস্থ করিতেও চাহে না।”

[সূত্র: কাদিয়ানী সমস্যা, মাওলানা মওদুদী, পৃ – ৩২]

আরো পোস্ট