বিতর্ক সৃষ্টি হয় কেন? – জালাল উদ্দিন রূমি
এ নিয়ে একটা গল্প বলেছেন আল্লামা জালালুদ্দিন রূমি। গল্পটা এমন –
চারজন লোক বিতর্ক শুরু করলো এই নিয়ে যে, সবচেয়ে উপকারী ফল কোনটি?
একজন বললো, “সবচেয়ে উপকারী ফল হলো আঙুর (انگور)”।
অন্যজন বললো, “উজুম (üzüm) হলো সবচেয়ে উপকারী ফল”।
আরেকজন বললো, ” আরেহ না, এনাব (عنب) সবচেয়ে উপকারী”।
শেষের জন বললো, “তোমাদের একজনেরও হয়নি, সবচেয়ে উপকারী ফল হলো গ্রেপ (Grape)”
চারজনের কেউই যখন একমত হতে পারছিলো না, তখন একজন জ্ঞানী দরবেশ এসে বললেন, “আরেহ তোমরা বিতর্ক করছো কেন? তোমরা তো সাবাই একই ফলের কথাই বলছো। কিন্তু একজন ফার্সি, একজন তার্কি, একজন আরবি ও একজন ইংরেজি ভাষায় বলায় তোমরা কেউ কাউকে বুঝতে পারছো না। তোমরা যদি একে অপরের ভাষা জানতে, তাহলে তোমাদের মাঝে এতক্ষণ বিরোধ হতো না।”
জালালুদ্দিন রূমির মতে, আমরা বিভিন্নজন বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠার কারণে আমাদের বুঝার ভাষা ভিন্ন ভিন্ন হয়। ফলে কেউ কাউকে বুঝতে পারি না। অথচ আমাদের সবার উদ্দেশ্য হয়তো একই।
ভিন্ন সংস্কৃতিকে আমরা যতবেশি বুঝতে পারবো, অথবা বুঝার চেষ্টা করবো, আমরা ততবেশি ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারবো।
এ জন্যেই আল্লাহ তায়ালা বলেন –
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّ اُنۡثٰی وَ جَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰہِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ ﴿۱۳﴾
“হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি, আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার।” (সূরা ৪৯/ হুজরাত -১৩)
অর্থাৎ, পৃথিবীর সব মানুষকে যদিও এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু আল্লাহ মানুষকে বিভিন্ন জাতি, গোত্র ও সংস্কৃতিতে বিভক্ত করে রেখেছেন। কেউ যদি ভিন্ন জাতি, ভিন্ন গোত্র ও ভিন্ন সংস্কৃতিকে বুঝার চেষ্টা করে, তাহলে ভিন্ন মতের মানুষেরাও একই বাবা-মায়ের সন্তানের মতো একে অপরকে ভালোবাসতে পারবে।
যেমন, ইসলামপন্থী লোকজনেরা যদি তাবলীগের সস্কৃতি বুঝার চেষ্টা করে, এবং তাবলীগের লোকেরা যদি ইসলামপন্থীদের সংস্কৃতি বুঝার চেষ্টা করে, তাহলে উভয়ের মতবিরোধ অনেক কমে গিয়ে উভয়ে সহোদর ভাই হয়ে যাবে।
অথবা, মার্ক্সবাদীরা যদি নিরপেক্ষভাবে ইসলামপন্থীদেরকে বুঝার চেষ্টা করে, এবং ইসলামপন্থীরা যদি নিরপেক্ষভাবে মার্ক্সবাদীদেরকে বুঝার চেষ্টা করে, তাহলে দেখা যাবে উভয় দল ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যেই সংগ্রাম করছে।
মোট কথা, যে কোনো বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছার পূর্বশর্ত হলো ভিন্ন সংস্কৃতির ও ভিন্নভাবে বেড়ে উঠা মানুষকে ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করা।