ইসলাম প্রচারে ভাষার ব্যবহার; যেমন হওয়া উচিত
ভাষা নিজে কোনো জ্ঞান নয়। ভাষা হলো জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম। আমরা মনে করি, ইংরেজি জানা মানে শিক্ষিত হওয়া, আর আরবি জানা মানে আলেম হওয়া। অথচ ইংরেজি জানার সাথে যেমন শিক্ষিত হবার সম্পর্ক নেই, তেমনি আলেম হবার সাথে আরবি জানার সম্পর্ক নেই।
লাইবেরিয়ার মানুষের ভাষা ইংরেজি, কিন্তু ১০০ জনের ৫০ জন-ই অশিক্ষিত। যদি ইংরেজি জানা মানেই শিক্ষিত হওয়া বুঝাতো, তাহলে লাইবেরিয়ার প্রতিটি মানুষকেই শিক্ষিত বলা হতো। একইভাবে, সিরিয়ার সব মানুষ আরবি জানে, কিন্তু ১০০ জনের মধ্যে ১০ জনও আলেম নয়। যদি আরবি জানা মানেই আলেম হওয়া বুঝাতো, তাহলে সিরিয়ার সব মানুষকেই আলেম বলা হতো।
আমাদের অনেক ভাষা জানা উচিত। কিন্তু সেটা অন্যের জন্যে নয়, নিজের জ্ঞান অর্জনের জন্যে।
আমরা যে জনগোষ্ঠীর কাছে ইসলামের বা জ্ঞানের বাণী পোছাতে চাই, সে জনগোষ্ঠীর ভাষাতেই আমাদের কথা বলা উচিত। এটাই কোর’আন ও হাদিসের নীতি। আল্লাহ তায়ালা বলেন –
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
“আমি সকল রাসূলকে একমাত্র তার জনগোষ্ঠীর ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে পরিষ্কার বোঝাতে পারে।” [সূরা ১৪/ইব্রাহীম, আয়াত ৪]
যারা নিজেদেরকে নবী-রাসূলের ওয়ারিশ মনে করেন, তারা কিন্তু কোর’আনের এ আয়াতটি অনুসরণ করেন না।
নবী-রাসূলগণ তাদের জনগোষ্ঠীর ভাষায় কথা বলতেন, যাতে সব মানুষ সহজেই বুঝে। আর আমাদের হুজুররা গ্রামে গিয়ে এমন ভাষায় কথা বলেন, যে ভাষা ১০০ জন্যের মধ্যে ৫ জনেও বুঝেন না।
ইংরেজিতে ওয়াজ করার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু সেটা লন্ডনে গিয়ে করুক হুজুররা; যেখানে ১০০ জনের মধ্যে ১০০ জনেই ইংরেজি জানেন। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে যেখানে আমাদের মায়ের ভাষা ইংরেজি নয়, সেখানে ইংরেজিতে ওয়াজ করা সুন্নতের বরখেলাফ।