কোন আশা ছাড়া মানুষ যা করে , সেটাই ইসলামী চরিত্র
‘তুমি আমাকে ভালোবাসলে, আমিও তোমাকে ভালোবাসবো’ – এই নীতিকে বলে স্বার্থ। কিন্তু, ‘তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও, আমি তোমাকে ভালোবাসবো’ – এই নীতিকে বলে আখলাক বা চরিত্র।
‘তুমি আমার প্রশংসা করলে আমি তোমাকে দান করবো’ – এই নীতিকে বলে স্বার্থ। কিন্তু, ‘তুমি আমার গীবত ও সমালোচনা করলেও, এমনকি তুমি আমার শত্রু হলেও আমি তোমাকে দান করবো’ – এই নীতিকে বলে আখলাক বা চরিত্র।
আবু বকর (রা) একজন লোককে দান করতেন। কিন্তু একবার লোকটি আয়েশা (রা) এর চরিত্র নিয়ে সমালোচনা করে। এটা শুনে আবু বকর (রা) বললেন, আমি আর তাকে কোনো দান-সদকা করবো না। সাথে সাথে কোর’আনের আয়াত নাযিল হলো। সে আয়াতের উদ্দেশ্য হলো, কেউ আয়েশার (রা) সমালোচনা করলেও তাকে দান করা থেকে বিরত থাকা যাবে না।
অন্য আয়াতে আরো শক্তভাবে বলা হয়েছে, কেউ মুশরিক বা কাফির হলেও তাকে দান করতে হবে। কারণ, দান করতে হবে কেবল আল্লাহর জন্যে, দানের ক্ষত্রে শত্রু-মিত্র দেখা যাবে না। এমনকি দান করার পর কারো থেকে প্রশংসা পাবার আকাঙ্ক্ষাও করা যাবে না।
রাসূল (স)-এর সময়ে কেউ কেউ ভাবতেন যে, কাফির-মুশরিকদের দান-সদকা করা জায়েজ নেই। তখন আল্লাহ তায়ালা এই ধারণার বিপরীতে আয়াত নাযিল করে বলেন –
لَیۡسَ عَلَیۡکَ ہُدٰىہُمۡ وَ لٰکِنَّ اللّٰہَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ فَلِاَنۡفُسِکُمۡ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡنَ اِلَّا ابۡتِغَآءَ وَجۡہِ اللّٰہِ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ یُّوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تُظۡلَمُوۡنَ ﴿۲۷۲﴾
“তাদেরকে হিদায়াত করার দায়িত্ব তোমার নয়, কিন্তু আল্লাহ যাকে চান হিদায়াত করেন এবং তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর, তা তোমাদের নিজদের জন্যই। আর তোমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যয় কর এবং তোমরা কোন উত্তম ব্যয় করলে তা তোমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। আর তোমাদের প্রতি যুলম করা হবে না।” (সূরা ২/বাকারা – ২৭২)
অর্থাৎ, হেদায়াত আল্লাহর হাতে। কেউ জোর করে কাউকে মুসলিম বানাতে পারবে না। তাই কেউ অমুসলিম হলেও তাকে দান করা উচিত।
ইসলামী চরিত্রের সাথে মানুষের স্বাভাবিক আচরণের পার্থক্য এটাই। মানুষের স্বাভাবিক আচরণ হলো, তুমি আমার প্রশংসা করলে, বা তুমি আমার দলের লোক হলে, আমি তোমাকে দান করবো। কিন্তু ইসলামী চরিত্র হলো, তুমি আমার সমালোচনা করলেও, বা, তুমি আমার শত্রু হলেও আমি তোমাকে দান করবো।
ইসলামী চরিত্রের মাফকাঠি অনুযায়ী, যিনি প্রশংসা বা অন্য কোনো কিছু পাবার আশায় দান করে, তাকে দানকারী বলা যায় না। একইভাবে, যিনি অন্যের ভালোবাসা পাবার আশায় কাউকে ভালোবাসে, তাকেও প্রেমিক বলা যায় না।
এক কথায়, যে কাজে দুনিয়ার স্বার্থ থাকে, যদিও কাজটা অনেক ভালো, তবু সে কাজ ইসলামী চরিত্রের অংশ না। ইসলামী চরিত্র সেটাই, যা মানুষ কোনো আশা ছাড়াই করে থাকে।
13 August 2019 at 12:43 pm