ইসলামে ন্যায়-অন্যায় ও অধিকার
শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ বলছে, “We want justice”; “আমরা ন্যায়নীতি ও ন্যায়বিচার চাই”। কিন্তু, সরকার বলছে, আমরা তো ন্যায়নীতির মাঝেই আছি, এবং ন্যায়বিচারও করছি।
এখানে স্পষ্ট যে, জনগণ যেটাকে ন্যায় মনে করে, সরকার সেটাকে ন্যায় মনে করে না। আবার, সরকার যেটাকে ন্যায় মনে করে, জনগণ সেটাকে ন্যায় মনে করে না। অর্থাৎ, জনগণ ও সরকার দুই পক্ষের কাছে ন্যায়ের ধারণা দুই রকম।
পৃথিবীতে যারা অন্যায় ও জুলুম করে, তারা কখনোই বলে না যে, “আমরা জুলুম করছি”। তারা জুলুমকে ন্যায় মনে করে।
ফিরাউন কখনোই ভাবতো না যে, সে মানুষের উপর জুলুম করছে। ফিরাউন ভাবতো, সে ন্যায়ের চর্চা করছে। বনী ইসরাইলের উপর ফিরাউন যে অত্যাচার ও নির্যাতন করতো, সেটাকে সে ন্যায় মনে করতো। ফিরাউনের যুক্তি হলো, বনী ইসরাইলের লোকজনকে যেহেতু আমি খাওয়াচ্ছি, সুতরাং তারা আমার দাসত্ব করবে – এটাই স্বাভাবিক এবং এটাই ন্যায়। অর্থাৎ, ফিরাউন যা বলবে, তা করাই হলো ন্যায়; আর ফিরাউনের কথার বিপরীত হলো অন্যায়।
ফিরাউন সহ পৃথিবীর ইতিহাসে সকল স্বৈরাচার চারটি ভিত্তির উপর ভর করে ন্যায়ের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে।
১) যার শক্তি বেশি, তার অধিকার বেশি।
২) যার সম্পদ বেশি, তার অধিকার বেশি।
৩) যার সম্মান বেশি, তার অধিকার বেশি।
৪) যারা সংখ্যায় বেশি, তাদের অধিকার বেশি।
অর্থাৎ, ফিরাউনদের নিকট শক্তি, সম্পদ, সম্মান ও সংখ্যার বিবেচনায় অধিকার ও ন্যায়-অন্যায় নির্ধারিত হয়।
কিন্তু ইসলামে উপরোক্ত চারটি ভিত্তির উপর মানুষের অধিকার কিংবা নায়-অন্যায় নির্ধারিত হয় না। ইসলামে ন্যায়-অন্যায় ও অধিকার নির্ধারিত হয় ভিন্ন চারটি ভিত্তির উপর।
১) মানবিকতা – প্রত্যেক মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও বংশ রক্ষার অধিকার রয়েছে। একইসাথে, প্রত্যেক মানুষের বিশ্বাসের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।
২) যে যতটুকু পরিশ্রম করবে, সে ততটুকু পাবার অধিকার রয়েছে।
৩) চুক্তি বা ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে একে অপরের নিকট অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
৪) যে যতটুকু অপরাধ করেছে, সে ততটুকু শাস্তি পেতে হবে। কেউ তার শক্তি, সম্পদ ও সম্মানের কারণে শাস্তি থেকে মুক্তি পাবে না।
উপরোক্ত চারটি ভিত্তির উপর ভর করেই কেবল ইসলামে অধিকার ও ন্যায়-অন্যায় নির্ধারিত হয়। তাই, জালিমের ন্যায়ের ভিত্তি এবং ইসলামের ন্যায়ের ভিত্তি এক নয়।
এ কারণেই, পৃথিবীর কোনো স্বৈরাচারী শাসক-ই তাদের জুলুমকে অন্যায় মনে করে না, বরং তারা তাদের জুলুমকে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে ন্যায় সাব্যস্ত করে।
8 August 2018 at 18:25