ধর্ম সম্পর্কে স্যার আইজ্যাক নিউটনের ১২টি সূত্র
ধর্ম সম্পর্কে স্যার আইজ্যাক নিউটনের ১২টি সূত্র
________________________
সর্বজনীন মহাকর্ষ ও গতির তিনটি সূত্র আবিষ্কার করার কারণে স্যার আইজ্যাক নিউটন পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর দেয়া বিভিন্ন সূত্র মুখস্থ করার মাধ্যমেই আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠ শুরু হয়।
স্যার আইজ্যাক নিউটনকে আমরা চিনে কেবল একজন বিজ্ঞানী হিসাবে। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো, তিনি অনেক বড় একজন ধর্মীয় স্কলার ও সাধক ছিলেন। আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব ও ধর্ম নিয়ে তিনি প্রচুর গবেষণা করেছিলেন। এমনকি, বিজ্ঞানের চেয়েও তিনি তাঁর জীবনে বেশি সময় দিয়েছেন আল্লাহর ইবাদতে ও ধর্ম গবেষণায়। উদাহরণস্বরূপ, গণিত ও বিজ্ঞানকে ব্যাখ্যা করার জন্যে নিউটন তাঁর সারাজীবনে মাত্র ১ মিলিয়ন শব্দ লিখেছিলেন, কিন্তু আল্লাহর অস্তিত্ব ও ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা হাজির করার জন্যে নিউটনকে লিখতে হয়েছে প্রায় ৩ মিলিয়ন শব্দ। একইভাবে, পদার্থের গতির অবস্থা বুঝানোর জন্যে নিউটন ৩ টি সূত্র দিয়েছিলেন, কিন্তু ঈসা (আ)-কে সঠিকভাবে বুঝানোর জন্যে তাঁকে দিতে হয়েছিল ১২ টি সূত্র।
আল্লাহর অস্তিত্ব ও ঈসা (আ) সম্পর্কে নিউটনের ১২টি সূত্রের হুবহু অনুবাদ এখানে তুলে ধরা হলো।
সূত্র – ১। আল্লাহ এক। তিনি চিরঞ্জীব প্রতিপালক, সর্বত্র বিরাজমান, সর্বজ্ঞানী, সর্বশক্তিমান, এবং আসমান ও জমিনের স্রষ্টা। আল্লাহ ও মানবের মাঝে সম্পর্ক সৃষ্টিকারী মানুষ হলেন- নবী ঈসা (আ)।
সূত্র – ২। আল্লাহ তায়ালা হলেন অদৃশ্য, কোনো দৃষ্টি তাকে দেখে না, অথবা দেখতে পারে না। তিনি ব্যতীত অন্য যা কিছু আছে তা দৃশ্যমান হয়।
সূত্র – ৩। আল্লাহ নিজেই নিজের মধ্যে জীবন্ত এবং তাঁর নিজ হতে বান্দাদের জীবন দান করেন।
সূত্র – ৪। আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। তাঁর অন্তরে মূলত সকল জ্ঞান রয়েছে। তিনি ঈসা নবীর কাছে ভবিষ্যৎ বিষয়ের জ্ঞান প্রেরণ করেন। নবী-রাসূলগণ ব্যতীত আসমানে বা জমিনে অথবা জমিনের নিচে এমন কেউ নেই যে সরাসরি আল্লাহ থেকে ভবিষ্যৎ বিষয়ের জ্ঞান লাভ করতে পারে। আর, এ কারণেই ঈসা (আ)- এর সাক্ষ্য হলো নবুয়তের স্পৃহা এবং তিনি হলেন আল্লাহর বাণী বা রূহুল্লাহ বা আল্লাহর নবী।
সূত্র – ৫। আল্লাহ অবিচল। কোনো স্থান-ই তাঁর অনুপস্থিতিতে শূন্য বা উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে উঠতে সক্ষম নয়। তাঁর উপস্থিতি-ই হলো প্রকৃতির অনন্ত অপরিহার্যতা। তিনি ব্যতীত অন্য সকল সত্ত্বা এক স্থান থেকে অন্যত্র চলাচল করে।
সূত্র – ৬। সকল ইবাদাত, যেমন সালাত, জিকির, বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা, সব কিছু ঈসা (আ) আগমনের পূর্বেও কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদিত ছিল, এখনো এগুলো কেবল আল্লাহর জন্যেই। ঈসা (আ) তাঁর প্রভুর উদ্দেশ্যে নিবেদিত ইবাদাত হ্রাস করার জন্যে আগমন করেননি।
সূত্র – ৭। আল্লাহর উদ্দেশ্যে নবীর নাম দিয়ে দোয়া করলে তা খুবই ফলপ্রসূ হয়।
সূত্র – ৮। আমাদের সৃষ্টি, আমাদের প্রদত্ত খাদ্য, পরিধেয় বস্ত্র এবং এই জীবনের অন্যান্য কল্যাণ প্রদানের জন্য আমরা কেবল আল্লাহ তায়ালার প্রতিই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। কারণ, নবীর নামের সাহায্যে আমরা যা কিছুই সরাসরি আল্লাহর কাছে চাই, আল্লাহ তা আমাদের দান করেন।
সূত্র – ৯। আমাদের জন্য সুপারিশ করার উদ্দেশ্যে ঈসা (আ)-এর নিকট আমাদের প্রার্থনা করার প্রয়োজন নেই। আমরা যদি আল্লাহর কাছে সঠিকভাবে প্রার্থনা করি, তাহলে তিনিই আমাদের জন্যে সুপারিশ করবেন।
সূত্র – ১০। পরিত্রাণের জন্য নবীর নাম নিয়ে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কারো নিকট প্রার্থনা করার প্রয়োজন নেই।
সূত্র – ১১। কোনো ফেরেশতা বা রাজা-বাদশাহকে আল্লাহর গুণবাচক উপাধিতে ভূষিত করলে তা প্রথম আদেশের বিরুদ্ধে যায় না। কিন্তু, কোনো ফেরেশতা বা রাজা-বাদশাহকে আল্লাহর মত ইবাদাত করলে, তা প্রথম আদেশের বিরুদ্ধে চলে যায়। প্রথম আদেশের অর্থ হলো- “তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না”।
সূত্র – ১২। আমাদের নিকট আল্লাহ হলেন এক ও অদ্বিতীয়। তিনি আমাদের ও সকল বস্তুর প্রভু। তিনি নবী ঈসা (আ)-এরও প্রভু। এ কারণে, সর্বশক্তিমান প্রভু হিসাবে আমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই ইবাদাত করি।
[উৎস: Isaac Newton, Keynes Ms. 8, King’s College, Cambridge, UK]
নিউটনের এই ১২টি সূত্র একসাথে কোর’আনের একটিমাত্র আয়াতেই পাওয়া যায়। কোর’আনে সূরা নিসার ১৭১ নং আয়াতে সবগুলো সূত্র একসাথে রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
“হে কিতাবিগণ! তোমরা ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর সম্পর্কে সত্য ব্যতীত কোনো কথা বলো না। [সূত্র – ২, ৩] নিশ্চয় মরিয়ম-তনয় ঈসা মসীহ হলেন আল্লাহর রসূল ও তাঁর বাণী। আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে মরিয়মের নিকট রূহ ও তাঁর বানী প্রেরণ করেন। [সূত্র – ৪] অতএব, তোমরা আল্লাহ এবং তার রসূলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন কর। [সূত্র -১, ৯] আর, তোমরা একথা বলো না যে, আল্লাহ হলেন তিনজন। [সূত্র -১১] যদি একথা পরিহার কর, তবে তোমাদের মঙ্গল হবে। [সূত্র -৭, ৮] নিঃসন্দেহে আল্লাহ একক উপাস্য। সন্তান-সন্ততি হওয়া থেকে তিনি পবিত্র। [সূত্র – ৬, ১২] আসমানে ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তার। [সূত্র – ৫, ৪] আর, অভিভাবক হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।” [সূত্র – ৯, ১০]
[সূরা ৪/নিসা – ১৭১]
ইসলাম ও খ্রিষ্টান ধর্মের সাদৃশ্য বোঝার জন্যে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের এই ১২টি সূত্র আমাদের ভালোভাবে অধ্যয়ন করা উচিত।