সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের অভ্যুদয়

আমি অত্যন্ত গরীব ছাত্র ছিলাম। যথাসাধ্য স্বদেশী দ্রব্য আমিও ব্যবহার করতাম। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের (বিখ্যাত উকিল কুমুদিনীকান্ত মুখোপাধ্যায়ের ছেলে) নোয়াখালী বাজারস্থ “স্বদেশী স্টোর্স” (?) হতে মিলের তৈয়ারী ধুতি কিনে আমিও পরতাম।বাঙলায় সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের অভ্যুদয় একটি স্মরণীয় ঘটনা। এটা ছিল একটি গোপন আন্দোলন। বঙ্গভঙ্গের আগেই তাদের দল গড়ে উঠেছিল। অবশ্য, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন তাদের বিশেষ প্রেরণা জুগিয়েছিল। এটা বিশেষ লক্ষণীয় যে বাঙলা দেশেই সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বিশেষ দানা বেঁধে উঠেছিল। বাঙলার শিক্ষিত ‘ভদ্রলোক’ সম্প্রদায়ের ভিতরেই ছিল তাঁর উর্বর ক্ষেত্র। বাঙলার বাহিরেও সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের কর্মপ্রচেষ্টা চলেছে। কিন্তু বাঙলার মতো দীর্ঘস্থায়ী তা কোথাও হয়নি। এই শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে আমার মনের যে অবস্থা ছিল, আর যে-রোমাঞ্চ সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে ছিল তাতে আমার পক্ষে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী দলে যোগ দেওয়া অসম্ভব ছিল না। কিন্তু তাঁর পথে দুস্তর বাধা ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “আনন্দ মঠ” হতে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীরা প্রেরণা লাভ করতেন। এই পুস্তকখানি শুরু হতে শেষ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। এর মূল মন্ত্র ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম’ গান। তাতে আছে-বাহুতে তুমি মা শক্তি
হৃদয়ে তুমি মা ভক্তি
তোমার প্রতিমা গড়ি মন্দিরে মন্দিরে।
ত্বংহি দুর্গা দশপ্রহরণ ধারিণী ইত্যাদি।একেশ্বরবাদী কোনও মুসলিম ছেলে কি করে এই মন্ত্রোচ্চারণ করতে পারত? এই কথাটা কোনো হিন্দু কংগ্রেস নেতাও কোনও দিন বুঝতে পারেননি। বাঙলা দেশের সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন নিঃসন্দেহে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ছিল। কিন্তু তা হিন্দু উত্থানের আন্দোলনও ছিল। উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু রাজত্বের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। রবীন্দ্রকুমার ঘোষও আন্দামান হতে ফেরার পথে এই কথাই লিখেছিলেন। তাঁর সেই পুস্তকখানি এখন দুষ্প্রাপ্য। উনিশ শ’ বিশের দশকে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীদের মধ্যে ধারণার পরিবর্তন শুরু হয়েছিল। তবুও আমি ১৯২৩-২৪ সালে তাদের একজন বড় নেতাকে দেখেছি, যে-বিকালে তিনি জেলে এলেন তার পরের সকালেই জেল অফিসে একটি সম্ভ্রামাকর্ষক কালীর ছবির জন্য (an imposing picture of Goddess Kali) অর্ডার পাঠালেন। ঊনিশ শ’ ত্রিশের দশকে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীরা জেলখানায় মার্কসবাদ-লেনিনবাদ পড়েছিলেন এবং তাদের ভিতর হতে বহু সংখ্যক লোক ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।”- কমরেড মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ; ‘আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ বইয়ের ১০ ও ১১ পৃষ্ঠা। [পরিবেশনায়: খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি; প্রথম প্রকাশ: ১৯৭৭]


May 28, 2015 at 11:16 PM ·

আরো পোস্ট