বই রিভিউ ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’

এ কে খন্দকারের ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ বইটি পড়ে বেশ কিছু ভালো-মন্দ অনুভূতি জন্ম নিলো।

যা ভালো লেগেছে-
# বইটিতে বাংলাদেশের মানুষকে একে অপরের শত্রু হিসাবে বিবেচনা করা হয়নি, যা এ জাতীয় অন্য বইগুলো থেকে ব্যতিক্রম। দেশের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় এ ধরণের বই খুবই প্রয়োজন।
# লেখক উগ্র শব্দগুলো পরিহার করেছেন; যেমন, হানাদার বাহিনী, পাক সেনা, রাজাকার, আল বদর, ইত্যাদি।
# বেশ কয়টি প্রশ্নের চমৎকার জবাব দিয়েছেন; যেমন-
•কারা কারা প্রথম যুদ্ধ শুরু করতে চেয়েছিল, আর কারা চায় নি?
•যুদ্ধে এত মানুষ মারা যাবার পিছনে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কিভাবে দায়ী ছিল?
•বঙ্গবন্ধু, না তাজউদ্দীন আহমদ, যুদ্ধে কার অবদান বেশি ছিল?
•স্বাধীনতার ঘোষণা আসলে কে দিয়েছিল?
•গেরিলা যোদ্ধারা কতটা সৎ ছিল?
•যুদ্ধ করতে যারা ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়েছিল, তাদের সবাইকে কেন যুদ্ধ করার সুযোগ দেয়া হয়নি?
•গেরিলা বাহিনী কেন বার বার ব্যর্থ হল?
•মুক্তি বাহিনীর সাথে মুজিব বাহিনীর কেন এমন চরম দ্বন্দ্ব হল?
•ভারতীয় বাহিনী কেন মুক্তি বাহিনীর ওপর সীমাহীন আধিপত্য কায়েম করল?
•যুদ্ধ শেষে কতটা অদক্ষতার সাথে বীরত্বসূচক খেতাবগুলো প্রদান করা হল?
ইত্যাদি… ইত্যাদি…

যা ভালো লাগেনি-
# বইটি বোধয় খুব অল্প শ্রম দিয়ে লেখা হয়েছে, তাই লেখার মান ততটা ভালো হয়নি। একটু সময় নিয়ে, তথ্য দিয়ে লিখলে, আরও ভাল লাগত।
# তাজউদ্দীন আহমদকে খুব উচ্চ প্রশংসা করা হয়েছে, সার্বিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।
# তিনি অনেকগুলো স্ববিরোধী কথা লিখেছেন। কিছু কিছু মনে হয়েছে একান্ত তাঁর মনের কথা; কোনও সূত্র বা ঘটনা দিয়ে এসব প্রমাণ করেন নি।
# বইটির ১০টি অধ্যায়ের মধ্যে ‘নৌ-কমান্ডো ও বিমানবাহিনী’ নামক দু’টি অধ্যায় মোটেও ভালো লাগেনি।

মন্তব্য-
মুক্তিযুদ্ধের কবিতা-গানে, নাটকে-উপন্যাসে, সভা-সেমিনারে কিম্বা সিনেমার কাহিনীতে শুধু মুক্তিবাহিনীর গৌরব আর প্রশংসা-ই করা হয়; সামরিক যোদ্ধাদের নাম গন্ধও নেওয়া হয় না। এ কারণে সামরিক যোদ্ধাদের বেশ ক্ষ্যাপা মনে হয়েছে। সামরিক বাহিনীর যে কয়জন বই-পুস্তক লিখেছেন, সবাই মোটা দাগে রাজনৈতিক নেতাদের বিরোধিতাই করেছেন।

September 10, 2014 at 11:00 PM

আরো পোস্ট