ইসলামি রাষ্ট্র ও দ্বীনি (ধর্মীয়) রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য
উস্তায ইউসুফ আল কারযাভির মতে, ইসলাম ও দ্বীন শব্দের মাঝে যেমন অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে, তেমনি ইসলামি রাষ্ট্র ও ধর্মীয় (দ্বীনি) রাষ্ট্রের মধ্যেও অনেক পার্থক্য রয়েছে।
দ্বীন হলো নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতের মত ইবাদাত সমূহ, যা আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক নির্মাণ করে। আর ইসলাম হলো একটি সামগ্রিক বিষয়। ইসলামে রাজনৈতিক মূলনীতি রয়েছে, তবে দ্বীন ও রাজনীতি এক নয়।
ইউসুফ আল কারযাভির মতে, “দ্বীনি রাষ্ট্র হলো ধর্মীয় গুরু বা পৌরহিত্যের দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্র। এ ধরণের রাষ্ট্র পরিচালকদেরকে মাসুম মনে করা হয়। তারা সাধারণ জনগণের কথা শুনে না। সাধারণ জনগণ তাদেরকে সংশোধন করে দিলে তারা তা গ্রহণ করে না। তারা নিজেদেরকে খুব পবিত্র মনে করে, এবং নিজেদের আইনকে তারা আল্লাহ্ প্রদত্ত আইন মনে করে। তারা নিজেদের আইন জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়।”
অন্যদিকে, ইসলামি রাষ্ট্র হলো একটি জনরাষ্ট্র। ইসলামি রাষ্ট্রের শাসকরা আল্লাহর আইন বলে জনগণের উপর কোনো আইন চাপিয়ে দেয় না। বরং তারা আবু বকর রা এর মত জনগণকে বলেন,
فإن أحسنت فأعينوني، وإن أسأت فقوموني
“যদি আমি ভালো কিছু করি, তাহলে তোমরা আমাকে সাহায্য করবে। আর যদি আমি ভুল কিছু করি, তোমরা আমাকে ঠিক করে দিবে।”
ইসলামি রাষ্ট্রে শাসকদের আইনকে ভুল বলার অধিকার রাখে জনগণ। ইসলামি রাষ্ট্রে জনগণই শাসক নির্বাচন করে, জনগণই আইন প্রণয়ন করতে সহযোগিতা করে। ইসলামি রাষ্ট্রে কোনো আইনবিদ বা ফকিহ শরিয়া অনুযায়ী কোনো আইন প্রণয়ন করলেও সেটার বিপরীতে কথা বলার অধিকার রাখে জনগণ। কারণ, কোনো ফকিহ বা ইসলামি আইনবিদ নিষ্পাপ নয়। একজন ফকিহ কুরআন-হাদিস থেকে গবেষণা করে আইন প্রণয়ন করলেও সে আইনটি ভুল হতে পারে, সে আইনটির বিরোধিতা করতে পারে জনগণ। যেমন উমর রা এর একটি আইনের বিরোধিতা করেছেন এক সাধারণ নারী।
ইসলামি রাষ্ট্রে জনগণের দ্বারাই আইন রচিত হয়। যেমন দেখুন, কাতারের সংবিধানে ৬০ টি আইনের মধ্যে দুই বা তিনটা আইন কেবল শরিয়া থেকে নেওয়া। বাকিগুলো জনগণের তৈরিকৃত আইন।
অর্থাৎ, ইসলামি রাষ্ট্র আসলে একটি জনরাষ্ট্র, এটি কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়।
বিস্তারিত শুনুন উস্তাযের নিজের মুখে। মূল ভিডিও এর ২৫ মিনিট থেকে
https://youtu.be/jGHYZv09q4o