একজন জাফর ইকবাল! ও তাহার স্বরূপ

জাফর ইকবালের সুবুদ্ধি উদয় হলো বলে অনেকে মনে করছেন। কিন্তু আমি এতে একমত নই।

কারণ,

জাফর ইকবাল কোনো বিষয়ে কথা বলার আগে অপেক্ষা করতে থাকেন, এ বিষয়ে ‘মানবতার আম্মোর’ অবস্থান কী? ‘মানবতার আম্মো’ যদি কোনো বিষয়ের পক্ষে কথা বলেন, তখন জাফর ইকবাল ‘সহমত বোন’ টাইপের একটা সাদাসিধে কথা বলেন। আবার, ‘মানবতার আম্মো’ যখন তার স্বভাবগত চরিত্রের কারণে তার অবস্থান পরিবর্তন করেন, তখন জাফর ইকবালও সাথেসাথে তার মতামত পরিবর্তন করেন, এবং ‘মানবতার আম্মোকে’ সহমত বোন বলে একটি সাদাসিধে কলাম লিখেন।

যেমন,

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ‘মানবতার আম্মো’ যখন দেখলেন অবস্থা বেগতিক, ছাত্রদেরকে না থামালে নিজের গদি ছেড়ে পালাতে হবে। তখন তিনি সংসদে বললেন, “কোনো কোটাই থাকবে না”।

এরপর জাফর ইকবাল বললেন – “আমি কোটার বিরোধী নই। কিন্তু আমি যা শুনেছি তা হলো বর্তমানে মেধাবীদের থেকে বিভিন্ন জায়গায় কোটাপ্রাপ্তদের সংখ্যা বেশি। চাকরির ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ থেকে শুরু করে এর অধিক কোটা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। এই অনুপাতটাকে কমিয়ে আনা প্রয়োজন। তা না হলে মেধাবীদের মূল্যায়ন হবে না। … আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও আগে কোটা ছিল না। এখন বিভিন্ন রকম কোটা চলে আসছে। কোটা যত কম থাকা যায় ততই ভালো। আর একটি কোটা শুধু জীবনে একবারই ব্যবহার করার সুযোগ থাকা উচিত।”

এ লিখা লিখার পরে জাফর ইকবাল যখন দেখলেন, ‘মানবতার আম্মো’ আবার তার অবস্থান পরিবর্তন করে বলেছেন, “যদি কারও কোটা চাই, তাহলে এখন কোটা চাই বলে আন্দোলন করতে হবে। সেই আন্দোলন যদি ভালোভাবে করতে পারে, তখন ভেবেচিন্তে দেখব কী করা যায়?”

এবার জাফর ইকবালও তার অবস্থান পরিবর্তন করে লিখেছেন, “কোটাবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের লেখা সব মেইল আমি না পড়েই ফেলে দিয়েছি, তারা কী লিখেছে আমি জানি না।… কোটাবিরোধী এই আন্দোলন ছিল আসলে চাকরি পাওয়ার আন্দোলন। এই সফল আন্দোলনের পর আন্দোলনের নেতা-নেত্রীদের কেউ কেউ নিশ্চয়ই চাকরি পাবে এবং তাদের কেউ কেউ নিশ্চয়ই সাভারে ট্রেনিং নিতে যাবে। এটি এমন কিছু অস্বাভাবিক নয় যে হয়তো আমি তাদের উদ্দেশে কিছু কথা বলব। কথা শেষ হলে কোনো একজন নেতা হয়তো এসে আমাকে পরিচয় দিয়ে বলবে, আমি ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম, খবরের কাগজে আমার ছবি ছাপা হয়েছিল, আমার বুকে লেখা ছিল ‘আমি রাজাকার’। তখন আমি অবধারিতভাবে গলায় আঙুল দিয়ে তার ওপর হড়হড় করে বমি করে দেব।”

জাফর ইকবাল চরিত্রগতভাবে এরশাদের ফলোয়ার হলেও রাজনীতির দিক থেকে মানবতার আম্মোর ফলোয়ার।

আবরার হত্যাকাণ্ডে জাফর ইকবাল যখন দেখলেন, মানবতার আম্মো আবরার হত্যার আসামীদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং ছাত্রলীগ আবরারের জন্যে শোকর‍্যালী করেছে, তখন জাফর ইকবালও একটি সাদাসিধে কলাম লিখে বসলেন – “দানবের জন্ম”। এ জন্যে অনেকেই বলছেন, জাফরের সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে। আসলে কিন্তু না। আবরার হত্যাকাণ্ডের আন্দোলন একটু থামলে ‘মানবতার আম্মো’ আবার যখন পল্টি নিবেন, তখন জাফর ইকবালও আবার এরশাদ হয়ে যাবেন।

11 October 2019 at 12:57 pm

আরো পোস্ট