বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট রুম!

বিশ্ববিদ্যালয়ের টর্চার সেলগুলোকে বলা হয় ‘গেস্ট রুম’ বা ‘অতিথি কক্ষ’। ‘গেস্ট রুম’ নাম শুনলে সাধারণ মানুষ মনে করে যেখানে অতিথিদের মতো আপ্যায়ন করা হয়, তাকে ‘গেস্ট রুম’ বলেন। কিন্তু একজন বিশ্ববিদ্যালয়েরশিক্ষার্থী গেস্ট রুমের নাম শুনলেই ভয়ে একাকার হয়ে যায়, হৃদয় স্পন্দন বেড়ে যায়, বুক ধড়পড় শুরু করে। কারণ, গেস্ট রুম মানেই জীবনে বাঁচা-মরার প্রশ্ন।

সাধারণত প্রতিটি আবাসিক হলে একটি করে গেস্ট রুম থাকে। কিন্তু হলের গেস্ট রুম, আর ছাত্রলীগের ‘গেস্ট রুম’ এক নয়। আবাসিক হলগুলোতে একটি গেস্টরুম করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক কেউ হলে আসলে শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে সে রুমে কথা-বার্তা বলতে পারেন। কিন্তু ছাত্রলীগের ‘গেস্ট রুম’ হলো ‘গণ রুম’, যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ জন নতুন ছাত্র ছোট্ট একটি রুমের ফ্লোরে ঘুমায়। এই গণ রুমেই ছাত্রলীগের নেতারা নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রদেরকে ‘গেস্ট রুম’ করায়। অর্থাৎ, যে রুমে নতুন কোমল শিক্ষার্থীদেরকেগালাগালি শেখানো হয়, কঠোরতা শেখানো হয়, সিগারেট খাওয়ানো হয়, পর্ণ দেখানো সহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন আচার-আচরণ শেখানো হয়, তাকে গেস্ট রুম বলে। সহজ কথায়, যে রুমে একজন নতুন ছাত্রকে একজন ছাত্রলীগ বানানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, সে রুমকে বলা হয় গেস্ট রুম।

প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন/চারবার গেস্ট রুমে সকল নতুন শিক্ষার্থীকে একত্রিত করে ছাত্রলীগ হবার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। নতুন ছাত্রদের কেউ যদি ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ নিতে দেরী করে, বা অমনোযোগী হয়, তাহলে তাঁর উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন।

ইরাকের আবু গারিব কারাগারের কথা শুনলে ভয় পায় অনেকে। মার্কিনরা এ কারাগারে নিষ্পাপ মুসলিমদেরকে অমানুষিক নির্যাতন করতো। কিন্তু অনেকেই জানেন না, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট রুম নামক টর্চার সেলগুলোতে আবু গারিব কারাগারের চেয়েও বেশি নির্যাতন করা হয়।

#_টর্চার_সেল_থেকে_বলছি

10 October 2019 at 2:21pm

আরো পোস্ট