আল্লাহ তায়ালা কোথায়?

এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকে বলেন, আল্লাহ আমাদের মাথার উপর, আকাশে বা আরশে। একটি হাদিসের ওপর ভিত্তি করেই অনেকে এ কথা বলেন।

এখানে একটা প্রশ্ন তৈরি হয়, তা হলো, আকাশ তো আমাদের পৃথিবীর চতুর্দিকেই আছে। তাহলে আল্লাহ আসলে কোন দিকে?

এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ইমাম গাজালী। তিনি বলেন –

আল্লাহ তায়ালার কোনো শরীর নেই, তাই তাঁর কোনো আকারও নেই। যেহেতু আল্লাহর কোনো সুনির্দিষ্ট আকার নেই, তাই তাঁর সুনির্দিষ্ট কোনো দিকও নেই (১)। অর্থাৎ, আল্লাহর জন্যে কোনো পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ নেই।

আল্লাহ তায়ালা বলেন –

وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
“পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহর জন্যে। তাই তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও না কেন, সেদিকেই আল্লাহর অস্তিত্ব রয়েছে। আল্লাহ সর্বব্যাপী, সবকিছু জানেন।” [সূরা ২/বাকারা – ১১৫]

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন –
وهو معكم أينما كنتم 
“তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তিনি তোমাদের সাথেই আছেন।”[সূরা ৫৭/হাদীদ – ৪]

আল্লাহর জন্যে কোনো দিক নেই, ডান-বাম-উপর-নিচ-সামনে-পিছনে এসবও নেই। কারণ, এসব দিক সৃষ্টি হয়েছে মানুষকে কেন্দ্র করেই। মানুষ তার শক্তিশালী হাতের দিককে বলে ডানদিক, এবং অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী হাতের দিককে বলে বামদিক। যা দেখতে পায়, তাকে বলে সামনের দিক; এবং যা দেখতে পায় না, তাকে বলে পিছনের দিক। মাথার দিককে বলে উপরের দিক, এবং পায়ের দিককে বলে নিচের দিক। এভাবেই ছয়টা দিকের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ যদি বর্তমান আকৃতিতে সৃষ্টি না হয়ে ফুটবলের মতো সৃষ্টি হতো, তাহলে তখন দিকের ধারণাটা অন্য রকম হতো। এ থেকে বুঝা যায়, ডান-বাম-উপর-নিচ-পূর্ব-পশ্চিম সবই মানুষকে কেন্দ্র করে, মানুষের জন্যে সৃষ্টি হয়েছে, আল্লাহর জন্যে নয়।

ইমাম গাজালির উপরোক্ত যুক্তির বিপরীতে অনেকে একটি আয়াত উপস্থাপন করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন –

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ
“নিশ্চয় তোমাদের প্রভু আল্লাহ, যিনি ছয় দিনে আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন।” [সূরা ৭/আরাফ – ৫৪]

এ আয়াতকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে অনেকে বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদের মাথার উপরে আকাশে, আরশের উপর সমাসীন রয়েছেন।

কিন্তু ইমাম গাজালী এ যুক্তি খণ্ডন করেন। ইমাম গাজালী বলেন, আল্লাহ তায়ালা যে আরশে সমাসীন, তা আক্ষরিক কোনো আরশ বা চেয়ার নয়। কারণ, যদি আল্লাহ আরশের উপর সমাসীন হন, তাহলে তিনি হয় আরশের চেয়ে ছোট হবেন, কিংবা আরশের সমান হবেন, অথবা আরশের চেয়ে বড় হবেন। অথচ, আল্লাহর ক্ষেত্রে এসব তুলনা করা সম্ভব নয়। সুতরাং, আল্লাহ যে আরশের কথা বলেছেন, তা আক্ষরিক অর্থে কোনো আরশ নয়।

ইমাম গাজালী তাঁর পক্ষে একটি আয়াত দলীল হিসাবে উপস্থাপন করেন। আল্লাহ বলেন –

ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاءِ وَهِيَ دُخَانٌ
“অতঃপর আল্লাহ আকাশে সমাসীন হলেন, এবং আকাশ তখন ধোঁয়া ছিলো।” [সূরা ৪১/ফুসসিলাত – ১১]

অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালার আরশে সমাসীন হওয়া মানে আক্ষরিক অর্থে চেয়ারে বসা নয়। কারণ, আকাশ যখন ধোঁয়ার মতো ছিলো, তখন তিনি আকাশে সমাসীন হয়েছেন। এ থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ তায়ালার যে আরশের কথা আমরা কল্পনা করি, তা কোনো কঠিন পদার্থ হবার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং তিনি একইসাথে সকল স্থানে আরশ স্থাপন করতে পারেন।

অর্থাৎ, ইমাম গাজালীর মতে, আল্লাহর যেমন কোনো আকার নেই, তেমনি তাঁর কোনো দিকও নেই। তিনি সবদিকেই রয়েছেন।

তথ্যসূত্র – 

بأنه تعالى ليس بجسم مؤلف من جواهر
[إحياء علوم الدين 1/ 107]

11 July 2019 at 5:07pm

আরো পোস্ট