|

‘আকিদা’র হাকিকত

‘আকীদা’ শব্দটি এমন একটি শব্দ, যা দিয়ে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি ঘটানো হয়। ফলে এ শব্দটি এখন খুবই বিপদজনক হয়ে গেছে।

কথিত এক ‘এমাম‘ তাঁর জনসভায় বলেছেন, “ধর্মের প্রথম হলো আকীদা, তারপর হলো ঈমান, তারপর ইসলাম। যার আকীদা ঠিক নেই, তার ঈমান ও ইসলাম কিছুই ঠিক নেই।”

আমার জানার খুব ইচ্ছা, তিনি ‘আকীদা’ শব্দটি কোথায় পেলেন?

কোর’আন ও হাদিসের কোথাও যে শব্দটি নেই, তা না থাকলে নাকি ঈমান ও ইসলাম কিছুই থাকে না!!! আকীদাপন্থীদের এ এক সমস্যা। ধর্মে যা নেই, তাই তারা ধর্মের মৌলিক ভিত্তি হিসাবে চালিয়ে দেয়।

সাহাবীগণ ও সালফে সালেহীন কেউ যে শব্দটি ব্যবহার করেননি, সে শব্দটি দিয়েই এখন সাধারণ মুসলিমদেরকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে।

অথচ, ‘আকীদা’ ধর্মের মৌলিক কোনো বিষয় নয়।

আল্লাহ তায়ালা ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো সাহাবীদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্যে স্বয়ং জিবরাঈল (আ)-কে মানুষের আকৃতিতে সাহাবীদের সামনে উপস্থিত করলেন। এ ঘটনাটিকে আমরা হাদিসে জিবরাঈল হিসাবে জানি।

حَدَّثَنِي أَبِي عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ، شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعَرِ، لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ، حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ، وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِسْلَامِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلًا» ، قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ، وَيُصَدِّقُهُ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيمَانِ، قَالَ: «أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ» ، قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِحْسَانِ، قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ» ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ، قَالَ: «مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ» قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا، قَالَ: «أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ» ، قَالَ: ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا، ثُمَّ قَالَ لِي: «يَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ؟» قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ»
[সহীহ মুসলিম, ঈমান, ইসলাম ও কদরের পরিচিতি অধ্যায়, মাকতাবায়ে শামেলা, পৃষ্ঠা – ৩৬]

এ হাদিসটি অনুযায়ী, ধর্মের প্রথম বিষয় হলো ইসলাম, তারপর ঈমান, এবং এরপর ইহসান। এখানে ‘আকিদা’ শব্দের কোনো স্থান নেই।

জিবরাঈল (আ) রাসূল (স)-কে বললেন, আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন।

রাসূল (স) বললেন – “ইসলাম হল, (১) তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মোহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, (২) সালাত কায়েম করবে, (৩) যাকাত আদায় করবে, (৪) রামাযানের রোযা পালন করবে এবং (৫) বায়তুল্লাহ পৌছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ পালন করবে”।

তারপর, জিবরাঈল (আ) রাসূল (স)-কে বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।

রাসূল (স) বললেন – “ঈমান হল (১) আল্লাহর প্রতি, (২) তার ফেরেশতাদের প্রতি, (৩) তার কিতাবসমূহের প্রতি, (৪) তার রাসূলগণের প্রতি এবং (৫) আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, (৬) আর তকদীরের ভালমন্দের প্রতি ঈমান রাখবে”।

তারপর, জিবরাঈল (আ) রাসূল (স)-কে বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন।

রাসূল (স) বললেন – “ইহসান হলো, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে ভাববে তিনি তোমাকে দেখছেন।”
________

আকীদাপন্থীরা ধর্মের মৌলিক বিষয় থেকে ইহসানকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এবং ইহসানের স্থানে ‘আকীদা’ শব্দটিকে প্রবেশ করিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আকীদাকে তারা ধর্মের প্রথমে স্থান দিয়েছেন। এবং ইসলাম ও ঈমানের শর্ত হিসাবে আকীদাকে নির্ধারণ করেছেন।

এতে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা হলো, ধর্মের আধ্যাত্মিকতা ও ইহসান বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আকীদাপন্থীরা মনে করেন, সকল মুসলিমকে রোবটের মত একই স্টাইলে ধর্ম পালন করতে হবে। তাদের নিজেদের স্টাইলে যারা ধর্ম পালন করতে পারবে না, তারা সবাই ইসলামের বাইরে।

এ কারণেই দেখবেন, তথাকথিত ‘আকীদা’র অজুহাতে আকীদাপন্থীরা সাধারণ মুসলিমদের প্রতি ভালোবাসা ও ইহসান প্রদর্শন না করে সবাইকে কাফির ঘোষণা দিচ্ছে। আর এ সুযোগে পীরপন্থীরা “দয়াল বাবা, প্রেমের বাবা, আয়নার কারিগর” গান গেয়ে গেয়ে নিজেদের ব্যবসা জমজমাট করছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইহসান করুন।

আরো পোস্ট

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশ করা হবে না। তারকা (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক