|

পরিচয় গোপনের রাজনীতি

ফিরাউনের দলে একজন লোক ছিল, যে তার ইমানকে গোপন রাখত। হয়তো আপনারা তাকে ‘মুনাফিক’ বলতেন।

আপনারা বলতেন, যে ব্যক্তি একই সঙ্গে ফিরাউনের সুবিধা নিচ্ছে, আবার ইমানও আছে; এটা কিভাবে সম্ভব?

কিন্তু আপনারা কি জানেন? সেই লোকটিকে ‘মুমিন’ বা ‘বিশ্বাসী’ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাহ একটি সূরা নাযিল করেছেন, যার নাম সূরা ‘মুমিন’।

কুরআন থেকে পড়ুন:

“ফেরাউনের গোষ্ঠীর এক মুমিন ব্যক্তি, যে তার ঈমান গোপন রাখত, সে বলল, তোমরা কি একজনকে এজন্য হত্যা করবে যে বলে, আমার পালনকর্তা আল্লাহ, অথচ সে তোমাদের পালনকর্তার কাছ থেকে স্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের নিকট এসেছে? যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার মিথ্যাবাদিতা তার উপরই চাপবে, আর যদি সে সত্যবাদী হয়, তবে যে শাস্তির কথা সে বলছে, তার কিছু না কিছু তোমাদের উপর পড়বেই। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারী, মিথ্যাবাদীকে পথ দেখান না।” – সূরা ৪০ মুমিন, আয়াত ২৮

এখন আসুন, আরেকটি গল্প বলি।

মক্কা বিজয়ের পরে অনেকেই চেয়েছিলেন কাফিরদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু আল্লাহ আয়াত নাযিল করে নিষেধ করলেন।

কেন?

কারণ কাফিরদের মধ্যে এমন অনেক মুমিন ব্যক্তি ছিলেন, যাদের পরিচয় মুসলিমরাও জানত না। কাফিরদের শাস্তি দিলে গোপনে থাকা মুমিনরাও শাস্তি পেতো। তাই আল্লাহ নিষেধ করে আয়াত নাযিল করেন।

আল্লাহ বলেন:

“তারা কুফরি করেছে এবং তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে বাধা দিয়েছে, এবং অবস্থানরত কোরবানির জন্তুদেরকে যথাস্থানে পৌঁছাতে দেয়নি। যদি মক্কায় কিছুসংখ্যক ঈমানদার পুরুষ ও নারী না থাকত, যাদের তোমরা জান না, অর্থাৎ তাদের পিষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকত, তাহলে সব কিছু চুকিয়ে দেওয়া হতো; কিন্তু তাদের কারণেই তা হয়নি, যাতে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমতে দাখিল করেন। যদি তারা সরে যেত, তবে আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিতাম।” – সূরা ফাতহ, আয়াত ২৫

হুযাইফা ইবনে ইয়ামান, নু’য়াইম ইবনে মাসউদ এবং যুবাইর (রা.) সহ অনেক সাহাবী নিজেদের পরিচয় গোপন করে শত্রুপক্ষ থেকে তথ্য রাসূল (সা.) এর কাছে পাঠাতেন।

একটি হাদিস দেখুন:

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, ‘কে আমার জন্য শত্রুপক্ষের খবর এনে দেবে?’ যুবাইর (রা.) বললেন, ‘আমি আনব।’ তিনি আবার বললেন, ‘আমার জন্য শত্রুপক্ষের খবর কে এনে দেবে?’ যুবাইর (রা.) আবারও বললেন, ‘আমি আনব।’ অতঃপর নবী (সা.) বললেন, ‘প্রত্যেক নবীর একজন সহকারী থাকে, আর আমার সহকারী যুবাইর।’

(২৮৪৭, ২৯৯৭, ৩৭১৯, ৪১১৩, ৭২৬১) (মুসলিম ৪৪/৬ হাঃ ২৪১৫, আহমাদ ১৪৬৩৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪৬)

রাসূল (সা.) এর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত কুরাইশদের সঙ্গে মক্কায় অবস্থান করেন এবং রাসূল (সা.) এর কাছে কুরাইশদের তথ্য পাঠান। মক্কা বিজয়ের পরে তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেন।

এমন আরও বহু উদাহরণ দেওয়া যায়।

শত্রুপক্ষের মধ্যে নিজেদের লোক রেখে তথ্য সংগ্রহ করে না, এমন কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্র বা দল আপনি আমাকে দেখাতে পারবেন?

আরো পোস্ট

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশ করা হবে না। তারকা (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক