শিশুকে মানুষ করার পদ্ধতি – আবুল হাসান আলী নদভী
“ছোট বেলায় আব্বা মারা যাওয়ায় আমার মনস্তুষ্টি সাধনে অপরাপর মায়েদের তুলনায় আমার আম্মা স্বাভাবিকভাবেই অধিকতর যত্নশীল ছিলেন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও দু’টো ব্যাপারে তিনি আদৌ বরদাশত করতেন না।
কখনো যদি আমি এশার নামায না পড়েই শুয়ে পড়তাম কিংবা ঘুমিয়ে যেতাম, তখন আমার ঘুম যত গভীর ও গাঢ়ই হোক না কেন, ঘুম থেকে তুলে আমাকে নামায পড়াতেন। নামায না পড়ে আমাকে কখনো ঘুমুতে যেতে দিতেন না। ঠিক তেমনি ফজরের আগেই আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন, তারপর মসজিদে পাঠিয়ে দিতেন। এরপর কুরআন মজীদ তেলাওয়াতের জন্য বসিয়ে দিতেন।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি তিনি বরদাশত করতেন না এবং সেক্ষেত্রে স্নেহ-মমতাকে আদৌ প্রশ্রয় দিতেন না, তাহলো ঘরে কাজের মহিলার কোনো ছেলেমেয়ে কিংবা বাড়িতে কাজকর্ম করে খায় অথবা গরীব শ্রেণির লোকদের ছেলেমেয়ের সাথে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি কিংবা অন্যায় করলে অথবা তাদের কারো প্রতি অহংকার ও অবজ্ঞা প্রদর্শন করলে তিনি আমাকে দিয়ে তার কাছে কেবল মাফ চাইয়ে নিতেন না, বরং হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করতেন। এতে আমাকে যত অপমানের সম্মুখীনই হতে হোক না কেন, তা তিনি শুনতেন না।
এ থেকে জীবনে আমি খুবই উপকৃত হয়েছি। জুলুম করা, অন্যায় করা, অহংকার ও বড়াই করাকে আমি ভয় করতে শিখেছি। অপরের মনে কষ্ট দেওয়া, অন্যকে অপদস্থ করা ও হেনস্থা করাকে কবিরা গুনাহ ভাবতে শিখেছি। এর ফলে নিজের ভুলত্রুটি স্বীকার করাকে আমার কাছে চিরদিন সহজ মনে হয়েছে।”
– আবুল হাসান আলী নদভী, আমার আম্মা, পৃ – ৩৮