জ্ঞানের সিঁড়ি

ছোট বেলায় মতিউর রহমান মাদানী ও আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের অনেক লেকচার শুনেছি। শুনতে শুনতে যখন দেখলাম তাদের থেকে নতুন কোনো কথা আর বের হচ্ছে না, তখন ইংরেজি জাকির নায়েকের লেকচার শুনতাম। এক সময়ে এসে মনে হলো, জাকির নায়েকের লেকচারও কমন হয়ে গেছে। নতুন কোনো জ্ঞান আর উস্তাদ জাকির নায়েকের থেকে পেলাম না। তারপর, নোমান আলী খান সহ আরো অনেকের ইংরেজি ও আরবি লেকচার শুনেছি। কিন্তু, একজন স্কলারের কথা কিছুদিন শুনার পরেই মনে হয় উনার কাছ থেকে নতুন কিছু আমি আর শিখতে পারছি না।

তারপর নিজে নিজেই আবিষ্কার করলাম জ্ঞানের সিঁড়ি তত্ত্বটি।

কোর’আনের একটি আয়াতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় তোমরা এক সিঁড়ি থেকে অন্য সিঁড়িতে আরোহণ করবে”।[৮৪/১৯]

এ আয়াতটি জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

জন্মের পরে আমরা কিছুই জানতাম না। এরপর, আস্তে আস্তে জ্ঞান অর্জন করা শুরু করেছি। আমরা যত জ্ঞান অর্জন করি, তত একটা সিঁড়ি থেকে অন্য সিঁড়িতে উঠতে থাকি।

প্রথম সিঁড়িতে এমন কিছু শিক্ষক ও স্কলার থাকেন, যারা আমাদেরকে দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠার কৌশল শেখান। কিন্তু, আমরা যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠে যাই, তখন প্রথম সিঁড়ির স্কলারগণ আমাদের খুব একটা কাজে লাগে না, যদিও প্রথম সিঁড়ি না থাকলে আমরা দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠতেই পারতাম না।

দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠার পর সেখানে এমন কিছু উস্তাদ ও স্কলার থাকেন, যারা আমাদেরকে তৃতীয় সিঁড়িতে উঠার কৌশল শেখান। কিন্তু, আমরা যখন তৃতীয় সিঁড়িতে উঠে যাই, তখন দ্বিতীয় সিঁড়ির স্কলারগণ আমাদেরকে চতুর্থ সিঁড়িতে উঠার কৌশল শেখাতে পারেন না, বরং তৃতীয় সিঁড়ির স্কলারদের সাহায্য নিতে হয়।

এভাবে জীবনের প্রতিটি সিঁড়িতে অনেক স্কলার থাকেন, যারা আমাদেরকে উপরে উঠতে সাহায্য করেন। কিন্তু, উপরের সিঁড়িতে উঠে গেলে আর নিচের সিঁড়ির স্কলারদের থেকে শেখার কিছু থাকে না।

নিচের সিঁড়ির স্কলারগণ না থাকলে যেমন উপরের সিঁড়িতে যাওয়া যেতো না, তেমনি উপরের সিঁড়ির স্কলারগণ না থাকলে সারাজীবন নিচের সিঁড়িতেই পড়ে থাকতে হতো। যেহেতু নিচের সিঁড়ি থেকে উপরের সিঁড়িতে যাবার জন্যে কোর’আন আমাকে উৎসাহ দিচ্ছে, তাই আমি নিচের স্কলারদের কাছেই সারাজীবন বসে থাকতে পারি না।

জ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষকেই নিচের থেকে উপরের সিঁড়িতে উঠতে হয়।

29 মার্চ, 2019, 12:13 PM

আরো পোস্ট