নারী দিবসের লেখা – ৭

মসজিদে নারীদের নামাজ পড়া নিয়ে ১০ টি হাদিস ও হাদিসগুলোর ব্যাখ্যা
________

[উস্তাদ (Jasser Auda) জাসের আওদার ‘রিক্লেইমিং দ্যা মস্ক’ বা ‘মসজিদে নারীদের অধিকার’ বইয়ের ৪র্থ পর্ব আজ প্রকাশ করেছে ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ (https://cscsbd.com/2500)। এ পর্বে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা করতে গিয়ে উস্তাদ জাসের আওদা যে সমস্ত হাদিস উল্লেখ করেছেন, সেখান থেকে দশটি হাদিস আমি এখানে তুলে দিচ্ছি। বিস্তারিত আলোচনাটির জন্যে প্রবন্ধটি পড়ুন]

[এক]

আয়েশা (রা) বলেন, “সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) খন্দকের যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন। … তারপর রাসূল (স) তাঁর জন্যে মসজিদের ভেতর একটা তাঁবু তৈরি করলেন, যাতে তিনি সাদকে (রা) নিয়মিত দেখতে পারেন।

[দুই]

আশ-শাবী বর্ণনা করেন –

“আমরা ফাতিমা বিনতে কায়েসের কাছে গেলাম। ফাতিমা বললেন, যখন লোকদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেয়া হলো– নামাজের জন্য একত্রিত হয়ে যাও, তখন অন্যদের সাথে আমিও মসজিদে নববীতে উপস্থিত হলাম। এরপর নারীদের জন্য নির্ধারিত সামনের কাতারে দাঁড়ালাম, যা ছিলো পুরুষদের সর্বশেষ কাতারের ঠিক পেছনেই। নামাজ শেষে মহানবীকে (সা) মিম্বারে বসে বলতে শুনলাম– ‘তামীম দারীর জ্ঞাতি ভাই সমুদ্রে নৌযাত্রা…”।

[তিন]

আসমা বিনতে আবু বকর (রা) একই ধরনের আরেকটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,

“রাসূলুল্লাহর (সা) জীবদ্দশায় একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। … তারপর আমি এসে মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, রাসূলুল্লাহ (সা) নামাজে দাঁড়িয়ে আছেন। আমিও তাঁর সাথে নামাজে শামিল হলাম। কিন্তু তিনি এতো দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যে আমার বসে পড়তে ইচ্ছা করছিল। ঠিক তখন আমি খেয়াল করলাম, আমার পাশেই একজন দুর্বল মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। তখন আমি মনে মনে বললাম, এই মহিলা তো আমার চেয়েও দুর্বল। কাজেই আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা) রুকু করলেন। রুকুতে তিনি দীর্ঘ সময় থাকলেন। তারপর রুকু থেকে ওঠে তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তখন যদি বাইরে থেকে কেউ আসতো, তাহলে তাঁর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা দেখে ভাবতো, মহানবী (সা) বোধহয় এখনো রুকুই করেননি।

[চার]

আয়েশা (রা) বলেছেন, “ঈমানদার নারীগণ চাদরে শরীর ঢেকে ফজরের নামাজে রাসূলের (সা) সাথে জামায়াতে শরীক হতেন। নামাজ আদায় শেষে তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতেন”।

[পাঁচ]

আসমা বিনতে আবু বকর (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন,

“আমি রাসূলুল্লাহকে (সা) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যেসব নারী আল্লাহ তায়ালা ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তারা যেন (সেজদা থেকে) আমাদের মাথা তোলার আগে মাথা না তোলে। তা না হলে নারীরা পুরুষদের লজ্জাস্থান দেখে ফেলবে”।

[ছয়]

আসমা বিনতে আবু বকর (রা) বলেছেন,

“আমাদের মধ্য থেকে রাসূল (সা) উঠে দাঁড়ালেন এবং আমাদের উদ্দেশ্যে কথা বলা শুরু করলেন। মৃত ব্যক্তিকে কবরে কী জিজ্ঞেস করা হবে, তিনি যখন সে প্রসঙ্গে বলছিলেন, তখন লোকেরা হট্টগোল করতে লাগলো। ফলে রাসূলের (সা) শেষ কথাটি আমি বুঝতে পারিনি। তারপর লোকেরা চুপ হলে আমার সামনে বসা পুরুষটিকে বললাম, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন! রাসূল (সা) তাঁর বক্তব্যের শেষে কী বলছিলেন? পুরুষটি জবাব দিলেন, ‘আমাকে ওহীর মাধ্যমে জানানো হয়েছে– তোমরা কবরে যে ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, সেটা প্রায় দাজ্জালের ফিতনার মতোই।

[সাত]

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত,

“একজন কালো মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিতেন। একদিন তিনি মারা গেলেন। তারপর একদিন রাসূল (সা) মহিলাটি সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সাহাবীরা বললেন, তিনি তো মারা গেছেন। তখন রাসূল (স) বললেন, ‘মহিলাটি মারা যাওয়ার পর তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? এখন আমাকে তার কবরে নিয়ে চলো।’ তারপর রাসূল (সা) ওই মহিলার কবরের কাছে এসে তার জন্য জানাজার নামাজ আদায় করলেন”।

[আট]

আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন,

“যখন সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা) ইন্তেকাল করলেন, তখন রাসূলের (সা) স্ত্রীগণ সংবাদ পাঠালেন– তাঁর লাশের খাটিয়া যেন মসজিদে নিয়ে আসা হয়, যাতে তাঁরা তাঁর জানাজায় শরীক হতে পারেন।”

[নয়]

ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত,

“ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রা) স্ত্রী আতিকা বিনতে যায়েদ (রা) ফজর ও এশার নামাজ মসজিদে জামায়াতের সাথে আদায় করতে অভ্যস্ত ছিলেন। মসজিদের কোনো কোনো মুসল্লি তাঁর কাছে একদিন জানতে চাইলো, ‘আপনি নামাজ পড়তে আসেন কেন? আপনি তো জানেন, ওমর (রা) এটি পছন্দ করেন না। এতে তিনি ঈর্ষান্বিত বোধ করেন।’ তিনি জবাব দিলেন, ‘তাহলে ওমর (রা) নিজে কেন আমাকে নিষেধ করছেন না?’ তারা বললো, ওমরকে (রা) বাধা দেয় রাসূলের (সা) এই কথাটি– ‘তোমরা নারীদেকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বারণ করো না।’”

[দশ]

মহানবীর (সা) স্ত্রী আয়েশা থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন,

“কোনো এক ঈদের দিন রাসূল (সা) আমাকে হাবশীদের খেলা দেখার জন্যে ডাকলেন। মসজিদের ভেতর তারা বর্শা চালনায় নিজেদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করছিলো। রাসূল (সা) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম: হ্যাঁ। তারপর আমি তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। তিনি এমনভাবে নিচু হয়ে দাঁড়ালেন যেন তাঁর কাঁধে আমার থুতনি রাখতে পারি। আমি তাঁর গালের সাথে গাল লাগিয়ে খেলা দেখতে লাগলাম। এমনকি রাসূল (সা) কয়েকবার দেখা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করলেও আমি বললাম, ‘আরেকটু অপেক্ষা করেন…!’ সত্যি বলতে কি, খেলা দেখার প্রতি আমার খুব একটা আগ্রহ ছিলো না। সেদিন বরং আমি চেয়েছিলাম, বিশেষ করে, নারীরা জানুক– তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক কেমন। তাই, তোমরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসের প্রতি তরুণীদের আগ্রহকে সুদৃষ্টিতে দেখো।”

মসজিদ ও নারী প্রসঙ্গে সুন্নাহর বক্তব্যcscsbd.com

2 মে, 2018, 8:19 PM

আরো পোস্ট