| |

ইহুদিরা কি বানর হয়ে গিয়েছিলো?

বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়েছে, এ কথার পক্ষে বিবর্তনবাদীরা কোর’আনের একটি আয়াত উপস্থাপন করেন –

وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِينَ اعْتَدَوْا مِنْكُمْ فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ

“তোমরা তাদেরকে ভালো করেই জানো, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছিলো। আমি তাদেরকে বলেছিলাম, তোমরা ঘৃণিত বানর হয়ে যাও।” [সূরা ২/বাকারা – ৬৫]

বিবর্তনবাদীদের যুক্তি হলো, কোর’আনের বর্ণনা অনুযায়ী মানুষ থেকে যদি বানর হতে পারে, তাহলে বানর থেকেও মানুষ হতে পারবে না কেন?

এ প্রশ্নের উত্তর অনেক আগেই বলে গিয়েছিলেন প্রসিদ্ধ মুফাসসির মুজাহিদ বিন জাবর। তিনি ছিলেন প্রথম মুফাসসির ইবনে আব্বাস (রা) ও আয়েশা (রা) এর ছাত্র। তাঁর মতে – যেসব ইহুদিরা শনিবারে মাছ ধরতো, তারা শারীরিকভাবে বানরের মতো হয়নি, বরং চারিত্রিকভাবে বানরের মতো হয়ে গিয়েছিলো।

فِي قَوْلِهِ: {كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ} [البقرة: 65] قَالَ: ” لَمْ يُمْسَخُوا قِرَدَةً وَلَكِنَّهُ كَقَوْلِهِ {كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا} [الجمعة: 5]
[সূত্র: তাফসীরে মুজাহিদ, মাকতাবায়ে শামেলা]

মুজাহিদ বিন জাবর সূরা বাকারর ৬৫ নং আয়াতে ব্যাখ্যায় কোর’আনের অন্য একটি আয়াত উপস্থাপন করেন। আল্লাহ বলছেন –

مَثَلُ الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا

“যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার দেয়া হয়েছিলো, অতঃপর তারা সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেনি, তাদের উদাহরণ হলো পুস্তক বহনকারী গাধার মতো।” [সূরা ৬২/ জুমু’আ – ৫]

এই আয়াতে ইহুদীদেরকে যেমন গাধার মতো বলা হয়েছে, তেমনি সূরা বাকার ৬৫ নং আয়াতেও ইহুদিদেরকে বানরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ, ইহুদিরা শারীরিকভাবে বানর হয়নি, বরং চারিত্রিকভাবে বানরের মতো অধৈর্য হয়ে গিয়েছিলো।

কোর’আনে এমন বেশ কিছু আয়াত আমরা দেখতে পারি। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

مَن لَّعَنَهُ اللَّهُ وَغَضِبَ عَلَيْهِ وَجَعَلَ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ وَعَبَدَ الطَّاغُوتَ ۚ أُولَٰئِكَ شَرٌّ مَّكَانًا وَأَضَلُّ عَن سَوَاءِ السَّبِيلِ

“যাদেরকে আল্লাহ লানত করেছেন, এবং যাদের উপর আল্লাহ ক্রোধান্বিত, তাদের কাউকে তিনি বানর বানিয়েছেন, কাউকে শূকর বানিয়েছেন, এবং তারা তাগুতের ইবাদাত করে। তারাই নিকৃষ্ট মর্যাদার অধিকারী এবং সরল পথ থেকে সর্বাধিক বিচ্যুত”। [সূরা ৫/মায়িদা – ৬০]

এ আয়াতে স্পষ্ট যে, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বানর অথবা শূকর বানিয়ে ফেলেছেন, মানে মর্যাদাগত দিক থেকে তাদেরকে নিচে নামিয়ে দিয়েছেন। এখানে শারীরিকভাবে বানর বা শূকর বানিয়ে দেওয়া হয়নি।

এভাবে অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন –

وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَٰكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ ۚ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ۚ ذَّٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

“আমি ইচ্ছে করিলে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে, এবং নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার উদাহরণ কুকুরের ন্যায়; কুকুরের উপর কোনো বোঝা চাপালেও সে হাঁপায়, বোঝা না চাপালেও সে হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমার নির্দেশনকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের অবস্থাও এরূপ। আপনি তাদেরকে এসব কাহিনী বর্ণনা করুন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করতে পারে।” [সূরা ৭/আ’রাফ – ১৭৬]

এ আয়াত থেকেও প্রমাণ হয় যে, মর্যাদাগতভাবে আল্লাহ তায়ালা কাউকে কুকুরের চরিত্র দান করেছেন, কাউকে বানরের, কাউকে শূকরের কিংবা কাউকে গাধার চরিত্র দান করেছেন। এখানে এটা বুঝায় না যে, মানুষ শারীরিকভাবে কুকুর, বানর, শূকর অথবা গাধা হয়েছে।

আরো পোস্ট

One Comment

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশ করা হবে না। তারকা (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক