বহুবিবাহ সম্পর্কে আল কোর’আন
কোর’আনে যেমন তালাকের বিধান আলোচনা করা হয়েছে, তেমনি বহুবিবাহের কথাও আলোচনা করা হয়েছে। তালাক দেয়ার আগে যেমন অনেক শর্ত রয়েছে, তেমনি বহু বিবাহ করার জন্যেও অনেক শর্ত রয়েছে।
কোর’আনের যে আয়াতে বহুবিবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তা হলো সূরা নিসার ৩ নং আয়াত। এ আয়াতের শুরুতেই একটি শর্ত দেয়া হয়েছে, এবং শেষে একটি শর্ত দেয়া হয়েছে; আয়াতের মাঝখানে একটি বাক্যে বহুবিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, কমপক্ষে দুটি শর্ত সাপেক্ষে বহুবিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّا تَعُولُوا
“(১)যদি তোমরা অসহায় নারীদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না বলে আশংকা করো, তাহলে তোমরা নারীদের মধ্য থেকে দুই, তিন, চারজনকে বিয়ে করো। (২) যদি তোমরা (স্ত্রীদের মাঝে) সুবিচার করতে পারবে না বলে আশংকা করো, তাহলে একজনকেই বিয়ে করবে, অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে। আর এতেই পক্ষপাতিত্ব করার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম।” [সূরা নিসা – ৩]
উপরোক্ত আয়াত থেকে সহজেই অনেকগুলো অনুসিদ্ধান্তে আসা সম্ভব।
১) আয়াতের প্রথম শর্তানুযায়ী বহুবিবাহ নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করার জন্যে নয়, বরং সামাজিক প্রয়োজনে করতে হয়। অর্থাৎ, বিধবা, অসহায়, ইয়াতিম ও দরিদ্র নারীদের সামাজিক মর্যাদা দেয়ার জন্যেই বহুবিবাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
২) যারা দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়, তাঁরা সাধারণত প্রথম জনের চেয়েও ধনী ও সুন্দরি মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। অথচ, আয়াতের প্রথম শর্তানুযায়ী অসহায় নারীদের বিয়ে করতে বলা হয়েছে।
৩) আয়াতের দ্বিতীয় শর্তানুযায়ী, যদি স্ত্রীদের মাঝে ন্যায় বিচার করা সম্ভব না হয়, এবং দ্বিতীয় বিয়ে করার ফলে যদি সংসারে কলহ সৃষ্টি হয়, তাহলে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়নি। বরং এখানে এক বিয়েকেই শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে।
৪) সৌদি আরবে বহুবিবাহ একটি কমন কালচার, তাই তাঁরা বহুবিবাহ করলেও স্ত্রীদের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে বহুবিবাহটা কমন কোনো কালচার নয়। তাই যারা বহুবিবাহ করেন, তাঁরা প্রথম স্ত্রীর সাথে ন্যায়বিচার করতে পারেন না, এবং এ কারণে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রথম স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। সুতরাং, এসব বিবেচনায় এবং আয়াতের দ্বিতীয় শর্তানুযায়ী এক বিয়েকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
৫) বাংলাদেশে যারা বহুবিবাহ কথা বলেন, তাঁদের অধিকাংশ-ই অবিবাহিত। ক্ষুধার্ত মানুষ যেমন বেশি খেতে চায়, অবিবাহিত ছেলেরাও তেমনি বহুবিবাহ নিয়ে কথা বলতে চায়। আদতে, প্রথম বিয়ে করার পর খুব কম সংখ্যক মানুষ-ই দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়।
৬) তালাকের মতো বহুবিবাহকে সামাজিক প্রয়োজনে অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বহুবিবাহকে ফরজ বা সুন্নাত বলা হয়নি। কেউ যদি সত্যিই রাসূল (স)-কে অনুসরণ করতে চায়, তাহলে রাসূল (স)-এর মতো, প্রথম স্ত্রী যতদিন জীবিত থাকে, ততদিন দ্বিতীয় বিয়ে করার চেষ্টা করবে না।