ইমাম আবু হানিফা ও শাফেয়ীর মাঝে পার্থক্য
ইসলামে এতো মতপার্থক্য কেন?
______
রাসূল (স) পৃথিবী থেকে চলে যাবার পরে, কোর’আন ও হাদিস বুঝার জন্যে অনেকগুলো গবেষণা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। তন্মধ্যে একটির নাম ‘আহলে রায়’, আরেকটির নাম ‘আহলে হাদিস’। ‘আহলে রায়’-এর প্রতিষ্ঠাতা ইমাম আবু হানিফা, এবং ‘আহলে হাদিস’-এর প্রতিষ্ঠাতা ইমাম শাফেয়ী।
আহলে রায়ের মেথডলজি হলো – কোর’আনের এক আয়াত দিয়ে যেমন অন্য আয়াতের আমলকে বাতিল করা যায়, তেমনি কোর’আন দিয়ে হাদিসের আমলও বাতিল করা যায়।
কিন্তু, আহলে হাদিসের মেথডলজি হলো – কোর’আনের এক আয়াত দিয়ে অন্য আয়াতের আমলকে বাতিল করা গেলেও, কোর’আন দিয়ে হাদিসের আমলকে বাতিল করা যায় না। কারণ, হাদিস হলো কোর’আনের ব্যাখ্যা।
আহলে রায়ের কথা হলো – কোর’আনের গুরুত্ব হলো সবার উপরে, এরপর দ্বিতীয় স্তরের গুরুত্ব পাবে হাদিস। সুতরাং, কোর’আন দিয়ে হাদিসকে বাতিল করা যায়।
আহলে হাদিসের কথা হলো – কোর’আন ও হাদিস দুটাই মুহাম্মদ (স) আমাদেরকে জানিয়েছেন। সুতরাং একটা অন্যটির বিপরীত হতে পারে না। এবং দুইটা-ই সমান গুরুত্ব পাবে।
এখানে দুটি স্কুলের উদ্দেশ্য এক, চিন্তার পার্থক্য অনেক।
প্রশ্ন হতে পারে, কেন ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফেয়ীর চিন্তা এমন ভিন্ন ভিন্ন হলো?
উত্তর হলো, উনাদের দুই জনের বেড়ে উঠার সময়, পরিবেশ, দেশ এবং সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন ভিন্ন ছিলো। ফলে, চিন্তারও অনেক পার্থক্য হলো।
ইমাম আবু হানিফা প্রায় ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছেন। ফলে, তাঁর ছাত্রদের অনেক সমস্যা তাঁকে সমাধান করতে হয়েছিলো। এছাড়া তিনি জনগণের খুব কাছাকাছি ছিলেন। ফলে মানুষ কোন তত্ত্ব বা কোন থিওরি সহজে গ্রহণ করে, এবং কোন তত্ত্ব গ্রহণ করে না, এটা ইমাম আবু হানিফা খুব ভালো বুঝতেন। এবং তিনি সেভাবেই সিদ্ধান্ত দিতেন।
অন্যদিকে, আহলে হাদিস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম শাফেয়ী দু’এক বছরের বেশি কোথাও শিক্ষকতা করতে পারেননি; এবং রাজনৈতিক কারণে জনগণের সাথেও খুব মিশতে পারেননি। ফলে, তিনি ইসলামের তাত্ত্বিক বা থিওরেটিকাল আলোচনা বেশি করেছেন, কিন্তু তার প্রয়োগ বা প্রাকটিস নিয়ে খুব বেশি ভাবতে পারেননি।
তাই ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম শাফেয়ীর মাঝে বেশ কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে।
এভাবে ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন দেশে এবং ভিন্ন পরিস্থিতির কারণে ইমামদের মাঝে মতপার্থক্য হয়েছে; যেমনটা একই বাবামায়ের দুই সন্তানের মাঝেও হয়। সুতরাং, কোর’আন-হাদিস এক হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ে চিন্তার পার্থক্য থাকাটা খুবই স্বাভাবিক।