ভালোবাসার সাথে রাগের সম্পর্ক – প্রচলিত ধারণা ও কোর’আনের বর্ণনা

ফেইসবুকে প্রায় দেখি, রাগী ছেলে-মেয়ে এবং রাগী স্বামী-স্ত্রীর প্রশংসা করা হয়, তারা নাকি খুব ভালোবাসতে জানে।

যেমন,

– “রাগী মেয়েরা সংসারী হয়। এরা হৃদয় থেকে ভালোবাসতে জানে।”

– “রাগী ছেলেরাই বর হিসাবে পারফেক্ট। তারা বেশি রাগ দেখালেও অনেক বেশি ভালোবাসে।”

– “রাগী মেয়েরা তার প্রিয় মানুষটির উপর অল্পতেই যেমন রাগ করতে পারে, ঠিক তেমনি মন প্রাণ উজাড় করে সেই মানুষটিকে ভালোবাসতেও পারে।”

– “একটি রাগী মেয়ের সাথে প্রেম করা মানেই অগোছালো জীবনটাকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নেয়া।”

– “রাগী মেয়েরা ভালোবাসতে জানে। তারা রাগ হলে বকতেও জানে, আবার অনেক আবেগে কাঁদতেও জানে।”

– “রাগী ছেলেরা বেশি ভালবাসতে জানে। রাগী ছেলেরা যেমন ধমকাইতে জানে, তেমনি রাগ থেমে গেলে ভালবাসতেও জানে।”

– “রাগী ছেলে-মেয়েরা কখনো মানুষের সাথে প্রতারণা করতে পারে না! কারণ, তাদের মনের ক্ষোভ তারা রাগের মাধ্যমে প্রকাশ করে ফেলে!”

– “এমন একটা মেয়েকে ভালোবাসতে চাই, যে মেয়েটার রাগ বেশি। হয়তো প্রথমে আমাকে মেনে নিবে না, কিন্তু রাগী মেয়েরা যদি একবার কাউকে ভালোবেসে ফেলে, তাহলে সহজেই তাকে হারাতে দেয় না!”
______

উপরের কথাগুলো কোর’আন ও হাদিসের বিপরীত সম্পূর্ণ কথা।

কোর’আনের দৃষ্টিতে ভালোবাসা মানে –

১) নিজের সময়, সম্পদ ও শ্রম অন্যের জন্যে ব্যয় করা।
২) এর বিনিময়ে কিছু না পেলেও নিজের রাগ সংবরণ করা।
৩) এবং ভালোবাসার মানুষের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে চলা ও ক্ষমা করে দেয়া।

[সূত্র – আল কোর’আন, ৩: ১৩৪ এবং ২৪: ২২]

বুখারীর হাদিসে এসেছে –

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رجلا قال للنبي صلى الله عليه و سلم أوصني. قال: لا تغضب، فردد مرارا، قال: لا تغضب” .
[رواه البخاري].

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (স)-কে বলল, “আমাকে কিছু উপদেশ দিন।”
রাসূল (স) বললেন – “রাগ করো না”।
লোকটি বার বার রাসূলের নিকট উপদেশ চায়, আর রাসূল (স) বারবার তাকে বলেন, “রাগ করো না”।

[বুখারী – ৬১১৬]
_______

রাগের বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য কোর’আন ও হাদিস আছে। রাগ কখনো ভালোবাসার নিদর্শন হতে পারে না, রাগ হলো ঘৃণা ও বিচ্ছেদের প্রথম স্তর।

৩১/১/২০১৯

আরো পোস্ট