তুরস্ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পার্থক্য
প্রথম যেদিন তুরস্কে মাস্টার্স কোর্সের পরীক্ষা দিতে গেলাম, স্যার আমাদেরকে এক পৃষ্ঠার একটা প্রশ্ন দিয়ে উত্তর লেখার জন্যে কোনো খাতা দিচ্ছিলেন না। ১০০ নম্বরের পরীক্ষা ছিলো, তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে অন্তত ৮০ থেকে ১০০ পৃষ্ঠা লিখার একটা প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু যেহেতু আমি তার্কি ভাষা খুব পারতাম না, তাই ভেবেছিলাম, অন্তত ২০/৩০ পৃষ্ঠা তো লিখতে হবেই।
উত্তর লিখার জন্যে আলাদা খাতা দিবে ভেবে আমি বসে আছি, কিন্তু আশেপাশের পোলাপান দেখি প্রশ্নের উল্টা পিঠেই লিখা শুরু করে দিয়েছে। আমি ভাবলাম, তারা সম্ভবত পয়েন্ট নোট করতেছে, আলাদা খাতা দিলে পরে উত্তর লিখবে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও যখন দেখলাম, স্যার কোনো খাতা-টাতা দিচ্ছে না, তখন আমি স্যারকে বললাম, স্যার প্রশ্নের উত্তর লিখবো কোথায়?
স্যার বললেন, “কেন? প্রশ্নের উল্টা পিঠে লিখো। খুব বেশি লিখতে চাইলে আরেক পৃষ্ঠা দিবো।
স্যারের কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। এক পৃষ্ঠা প্রশ্নের উত্তর মাত্র এক পৃষ্ঠায় কিভাবে লিখা সম্ভব? অথচ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা যত বেশি পৃষ্ঠা লিখতে পারতাম, ততবেশি নম্বর পেতাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সাথে যে ছেলেটি প্রথম হয়েছিলো, তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি এতো নম্বর কিভাবে পান?” তিনি বললেন, “আমি প্রত্যেক পরীক্ষায় ১০০ থেকে ১২০ পৃষ্ঠা লিখি। এবং বেশি পৃষ্ঠা লিখার জন্যে অনেক কৌশল অবলম্বন করি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সেমিস্টারে আমরা ছাত্রছাত্রী ছিলাম ১০০ এর চেয়ে বেশি। প্রত্যেকে যদি ১০০ পৃষ্ঠা করে লিখে, তাহলে ১০০ জন শিক্ষার্থীর মোট লিখা হবে ১০০০০ পৃষ্ঠা। একজন শিক্ষক কমপক্ষে ২/৩ সেমিস্টারে ক্লাস নেন। সে হিসাবে প্রতি সেমিস্টারে একজন শিক্ষককে প্রায় ৩০০০০ পৃষ্ঠা উত্তর পত্র দেখতে হয়। সময় মাত্র ১৫ থেকে ৩০ দিন। একজন শিক্ষক নিজের ক্লাস, পরিবার, বাজার করা এবং বাচ্চাদেরকে স্কুলে আনা-নেওয়া করে প্রতিদিন ২ থেকে তিন ঘণ্টা সময় পান পরীক্ষার খাতা দেখার জন্যে। সে হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে প্রতি ঘণ্টায় এক থেকে দুই হাজার পৃষ্ঠা দেখতে হয়। তাহলে বুঝুন, তিনি কি পরীক্ষার খাতা ওজন করে নম্বর দেয়া ছাড়া তাঁর আর কোনো উপায় আছে?
আসলে সমস্যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার। শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদেরকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।
৪/১২/২০১৯