জনকল্যাণের স্বার্থে মসজিদে নামাজ পড়া সাময়িক বিরতি দেয়া যায়

কোর’আনে বলা হয়েছে, যখন জুমার নামাজের আজান দেয়া হবে, তখন দুনিয়াবি সব কাজ ছেড়ে আল্লাহর স্মরণে যেতে। (৬২/২) অর্থাৎ, সব কাজ ছেড়ে মসজিদে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের কারণে জন-কল্যাণের প্রতি খেয়াল রেখে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরাবলছেন, কোথাও জামায়েত না হতে, এমনকি মসজিদ-মন্দিরেও না।

বুখারী শরীফে একটা অধ্যায় আছে। অধ্যায়ের নাম – “বৃষ্টির কারণে জুমু’আর সালাতে হাযির না হওয়ার অবকাশ”

এ অধ্যায়ে একটি হাদিসে জুম্মার নামাজ ঘরে পড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। একই হাদিস মুসলিম শরীফেও রয়েছে।

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ أَخْبَرَنِي عَبْدُ الْحَمِيدِ، صَاحِبُ الزِّيَادِيِّ قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْحَارِثِ ابْنُ عَمِّ، مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لِمُؤَذِّنِهِ فِي يَوْمٍ مَطِيرٍ إِذَا قُلْتَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ‏.‏ فَلاَ تَقُلْ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ‏.‏ قُلْ صَلُّوا فِي بُيُوتِكُمْ‏.‏ فَكَأَنَّ النَّاسَ اسْتَنْكَرُوا، قَالَ فَعَلَهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي، إِنَّ الْجُمُعَةَ عَزْمَةٌ، وَإِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أُخْرِجَكُمْ، فَتَمْشُونَ فِي الطِّينِ وَالدَّحْضِ‏.

অর্থ

“ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি একদিন বৃষ্টির দিনে তাঁর মুয়াজ্জিনকে বললেন, তুমি (আজান দেয়ার সময়ে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ যখন বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস সালাহ’ বলবে না, বরং বলবে, ‘সাল্লু ফী বুয়ুতিকুম – তোমরা নিজ নিজদের ঘরে নামাজ আদায় কর’। লোকেরা এটি অপছন্দ করল। তখন তিনি লোকদের বললেন – ‘আমার চাইতে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা করেছেন। জুমু’আহ নিঃসন্দেহে জরুরী। কিন্তু আমি অপছন্দ করি যে, তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলি।”

(সহীহ বুখারী, হাদিস – ৯০১ (ইফা ৮৫৫); সহীহ মুসলিম, হাদিস – ৬৯৯; মাকতাবায়ে শামেলা)

দেখুন, ইবনু আব্বাস বৃষ্টির কারণে যেখানে জুমার নামাজ ঘরে পড়তে বললেন, সেখানে আমরা করোনাভাইরাসের মতো একটা মারাত্মক সমস্যার কারণেও জুমার নামাজ ঘরে পড়তে বলতে পারি না। আমরা রাসূল (স) ও তাঁর সাহাবীদের চেয়েও বেশী তাকওয়া দেখাচ্ছি।

প্রশ্ন হলো, এ ক্ষেত্রে কার কথা শুনা হবে? এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্যে উসুলে ফিকাহ প্রয়োজন। সালাফী ইমাম নাজিমুদ্দিন আত-তুফি (১২৫৯-১৩১৬ খ্রি) বলেন –

ادلة الشرع وتقديم المصلحة في المعاملات علي النص
(رسالة في المصلحة للطوفي)

অর্থাৎ, “মুয়ামালাতের ক্ষেত্রে নস বা কোরআন-হাদিস থেকে জন-কল্যাণ বেশী প্রাধান্য পাবে।”

উসুলে ফিকাহের এ নিয়মটি ইমাম রশিদ রিদা থেকে শুরু করে অনেক আলেম তাদের ফতোয়ায় ব্যবহার করেছেন। যদিও মহামারি বা দুর্যোগের সময়ে মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়ার অনেক সহীহ হাদিস আছে; কিন্তু যদি কোনো হাদিস নাও থাকতো, তাহলেও এ সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে জনকল্যাণের স্বার্থে মসজিদে নামাজ পড়াটা সাময়িক বিরতি দেয়া যেতো।

20 March 8:22pm 2020

আরো পোস্ট