খলিফা শব্দের আসল অর্থ কী?

অনেক ইসলামপন্থী কোর’আনে ব্যবহৃত খলিফা শব্দের অর্থ করেন রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রনায়ক বা প্রধানমন্ত্রী ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো খলিফা শব্দের আসল অর্থ নয়। কেননা কোর’আনে সকল মানুষকে খলিফা বলা হয়েছে।

কোর’আনে বলা হয়েছে –

وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلٰٓئِكَةِ اِنّ۪ي جَاعِلٌ فِي الْاَرْضِ خَل۪يفَةًۜ قَالُٓوا اَتَجْعَلُ ف۪يهَا مَنْ يُفْسِدُ ف۪يهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَٓاءَۚ

“স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, ‘আমি পৃথিবীতে খলিফা সৃষ্টি করছি। তখন তারা বললো, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে অশান্তি ঘটাবে এবং রক্তপাত করবে?” [সূরা বাকারা – ৩০]

এ আয়াত থেকে দুটি অনুসিদ্ধান্তে আসা যায়।

১) আল্লাহ আদমকে খলিফা বানিয়েছিলেন, কিন্তু আদম (আ) কোনো রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন না। তার মানে খলিফা মানে কেবল রাষ্ট্র প্রধান নয়।

২) কেবল আদম (আ)-কেই খলিফা বানানোর কথা এখানে বলা হয়নি, বরং সকল মানব জাতিকেই খলিফা বানানোর কথা বলা হয়েছে। যদি কেবল আদমের কথা এখানে বলা হতো, তাহলে ফেরেশতারা এটা বলতেন না যে তারা তো রক্তপাত ও অশান্তি সৃষ্টি করবে। যেহেতু মানব জাতির সকল মানুষকে খলিফা বানানোর কথা এখানে বলা হয়েছে, তাই ফেরেশতারা রক্তপাতের আশঙ্কা করেছিলেন। অর্থাৎ, উপরোক্ত আয়াতে কেবল একজনকে খলিফা বানানোর কথা বলা হয়নি, বরং প্রত্যেক মানুকেই খলিফার মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যদি খলিফার অর্থ রাষ্ট্র প্রধান হয়, তাহলে সব মানুষ-ই রাষ্ট্র প্রধান হতে হবে, যা অসম্ভব।

খলিফার অর্থ যে কেবল ‘রাষ্ট্র প্রধান’ নয়, সেটা আরো অসংখ্য আয়াত দ্বারাও প্রমাণিত। আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

وَهُوَ الَّذ۪ي جَعَلَكُمْ خَلَٓائِفَ الْاَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ ف۪ي مَٓا اٰتٰيكُمْۜ

“তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা বানিয়েছেন। এবং তিনি তোমাদের কিছু লোকের উপর অন্য কিছু লোককে মর্যাদা দিয়েছেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন।” [সূরা আন’আম – ১৬৫]

দেখুন, এ আয়াতে বলা হয়েছে সকল মানুকেই আল্লাহ তায়ালা খলিফা বানিয়েছেন। যদি খলিফার অর্থ ‘রাষ্ট্র প্রধান’ হয়, তাহলে সকল মানুষ কিভাবে রাষ্ট্র প্রধান হবে?

অনেকে বলবেন, আল্লাহ তায়ালা কেবল মুমিন-মুসলিমদেরকেই খলিফা বানিয়েছেন, কাফেরদেরকে খলিফা বানাননি। আসলে এ কথাটাও ঠিক নয়। আল্লাহ তায়ালা মুমিন-মুসলিম-কাফের-মুশরিক সবাইকে সাধারণভাবে খলিফা বানিয়েছেন। আল্লাহ বলেন –

هُوَ الَّذ۪ي جَعَلَكُمْ خَلَٓائِفَ فِي الْاَرْضِۜ فَمَنْ كَفَرَ فَعَلَيْهِ كُفْرُهُۜ وَلَا يَز۪يدُ الْكَافِر۪ينَ كُفْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ اِلَّا مَقْتاًۚ وَلَا يَز۪يدُ الْكَافِر۪ينَ كُفْرُهُمْ اِلَّا خَسَاراً

“তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা বানিয়েছেন। সুতরাং কেউ কুফরী করলে, তার কুফরীর জন্যে সে নিজেই দায়ী। কাফেরদের কুফরী কেবল তাদের প্রতিপালকের ক্রোধই বৃদ্ধি করে। এবং কাফেরদের কুফরী তাদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।” [সূরা ৩৫/ফাতির – ৩৯]

দেখুন, এ আয়াতে কাফের-মুসলিম সবাইকে একত্রে সাধারণভাবে খলিফা বানানোর কথা বলা হয়েছে। খলিফা অর্থ যদি ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধানকে বুঝানো হতো, তাহলে এ আয়াতে কাফেরদেরকে কীভাবে খলিফার অন্তর্ভুক্ত করা হলো?

অনেকে বলবেন, আল্লাহ তায়ালা সূরা সাদ এর ২৬ নং আয়াতে দাউদ (আ)-কে খলিফা বলেছেন, কারণ দাউদ (আ) রাষ্ট্রের প্রধান ছিলেন। দেখুন, আল্লাহ তায়ালা সূরা ইউনুসের ৭৩ নং আয়াতে নূহ (আ) ও তাঁর কয়জন সঙ্গীকেও খলিফা বানানোর কথা বলেছেন, অথচ আমরা জানি নূহ (আ) কোনো রাজ্যের ক্ষমতাধর ছিলেন না।

তাহলে খলিফা শব্দের আসল অর্থ কী?

খলিফা শব্দের অনেকগুলো অর্থের মাঝে একটি অর্থ রাষ্ট্র প্রধান হতে পারে, তবে, খলিফা শব্দের আসল অর্থ হলো আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হবার মতো যোগ্যতা, এটা সকল মানুষের রয়েছে। অর্থাৎ, খলিফা অর্থ ‘একজন রাষ্ট্রপ্রধান’ নয়, বরং সকল মানুষ-ই আল্লাহর খলিফা।

8 September 2019 at 1:28 pm

আরো পোস্ট