ইমাম গাজালির মতে কবরের আযাব

অনেকেই কবরের আযাব বিশ্বাস করেন না। তাদের যুক্তি হলো, তারা অনেক অমুসলিম-কাফেরকে কবরে রেখে এসেছে, এবং অনেকদিন পরে গিয়ে দেখেছে, কবরে কোনো আযাব নেই। সাপ-বিচ্ছু এগুলোও নেই। সুতরাং কবরের আযাব বলেও কিছু নেই।

এর জবাবে ইমাম গাজালি তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন।

১) কবরে আযাব হয়, এবং কবরে সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদিও রয়েছে। কিন্তু দুনিয়ার মানুষ তাদের চর্মচক্ষু দ্বারা তা দেখতে পায় না। যেমন, জিবরাঈল (আ) যখন রাসূল (স)-এর কাছে আসতেন, তখন কেবল রাসূল (স)-ই জিবরাঈলকে দেখতে পেতেন। কিন্তু, রাসূলের পাশে যে সাহাবিগণ থাকতেন, তাঁরা জিবরাঈলকে দেখতে পারতেন না; অথচ তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, রাসূল (স)-এর কাছে জিবরাঈল (আ) এসেছেন। একইভাবে কবরে মৃত ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা ও সাপ-বিচ্ছু আসলেও তা দুনিয়ার মানুষ বুঝতে পারবে না, কিন্তু মৃত ব্যক্তি ঠিকই তা উপলব্ধি করতে পারবেন। অর্থাৎ, আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা কবরের আযাব বুঝা সম্ভব নয়, কিন্তু আমাদেরকে তা বিশ্বাস করতে হবে।

২) একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি স্বপ্নের মাঝে সাপ দেখে চীৎকার করতে থাকে, ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে, এবং তার সারা শরীর ঘেমে যায়; অথচ তার পাশে জাগ্রত ব্যক্তিরা কোনো সাপ-ই দেখতে পারে না। এর কারণ, ঘুমন্ত ও জাগ্রত দুই ব্যক্তির অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন ছিলো। একইভাবে, মৃত ও জীবিত ব্যক্তির অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন। তাই মৃত ব্যক্তি কবরের আযাব ভোগ করলেও জীবিত ব্যক্তি তা বুঝতে পারে না।

৩) দুনিয়ার কোনো বস্তু হারিয়ে ফেললে আমরা খুবই কষ্ট পাই, কিন্তু তা অন্য মানুষ বুঝতে পারে না। কবরের আযাবটা হলো দুনিয়াকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট। যারা যতবেশি দুনিয়া প্রেমী, তাঁরা ততবেশি দুনিয়া হারানোর কষ্ট পেতে থাকবেন। আর এটাই হলো কবরের আযাব। কোনো একজন মানুষ কোনো কারণে কষ্ট বা ব্যথা পেলে অন্য মানুষ তা বুঝতে পারে না; তাহলে কিভাবে একজন জীবিত মানুষ একজন মৃত মানুষের কষ্ট বা আযাবকে বুঝতে পারবে?

ইমাম গাজালির মতে, উপরোক্ত তিনটি উপায়ে মৃত ব্যক্তি কষ্ট বা আযাব পেতে থাকেন, কিন্তু জীবিত ব্যক্তিরা তা বুঝতে পারে না।

[সূত্র – এহইয়াউ উলুমুদ্দিন, ইমাম গাজালী, ৫ম খণ্ড, পৃ – ৩১৮]

27 June 2019 at 3:06pm

আরো পোস্ট