কেয়ামত কবে হবে?

একবার বিয়ে নিয়ে ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। নিচে একজন কমেন্টে লিখলেন, “ভাই, কেয়ামত চলে আসছে, আর আপনি এখনো বিয়ে নিয়ে পড়ে আছেন?”

কয়েক দিন আগে একটি ভিডিও দেখলাম, বাংলাদেশী এক হুজুরের। তিনি অনেক হিসাব-নিকাশ করে বের করলেন যে, কেয়ামতের আর মাত্র ৪৯ বছর বাকি আছে। ৪০ বছর থাকবে ঈসা (আ)-এর শাসন আমল। তার আগে ৭ বছর হবে মেহদি (আ)-এর শাসন। সুতরাং, আর মাত্র দুই বছর পরে নাকি মেহদি আসবেন।

এভাবে অনেকেই বহু হিসাব-নিকাশ করে বলে বলে দেন যে, কত ঘণ্টা এবং কত সেকেন্ড পর কেয়ামত হবে। কিন্তু, আল্লাহ তায়ালা বলছেন এর বিপরীত কথা।

يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي ۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً ۗ يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

“(হে নবী) তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? আপনি বলে দিন, কেয়ামতের খবর তো একমাত্র আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। কেবল তিনিই তা নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করবেন। আসমান ও জমিনের জন্য সেটি অতি কঠিন একটি বিষয়। যখন কেয়ামত তোমাদের উপর আসবে, তখন তা অজান্তেই এসে যাবে। তারা আপনাকে এ কারণে জিজ্ঞাস করে যে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। আপনি বলে দিন, কেয়ামতের সংবাদ একমাত্র করে আল্লাহর কাছেই রয়েছে। অধিকাংশ মানুষ-ই তা উপলব্ধি করে না।” [সূরা ৭/আ’রাফ – ১৮৭]

এ আয়াতটি থেকে অনেকগুলো বিষয় স্পষ্ট।

১। সাধারণ মানুষ কেয়ামত সম্পর্কে জানতে খুবই আগ্রহী।
২। কিন্তু, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ কেয়ামত সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
৩। রাসূল (স) নিজেও কেয়ামত সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, কিন্তু মানুষ মনে করতো, রাসূল (স) কিয়ামত সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন।
৪। কিয়ামত কখনো সবাইকে জানান দিয়ে আসবে না। কেয়ামত আসবে হঠাৎ করে, আগ থেকে কেউই তা বলতে পারবে না।

কেয়ামত কখন হবে তার দিন-তারিখ, ঘণ্টা-সেকেন্ড সব ঠিক করে বসে আছেন আমাদের অনেকেই। আবার কেউ কেউ নিজেকে মেহদি বা ঈসা (আ)-ও দাবী করে বসে আছেন।

পৃথিবীর কোথাও না কোথাও প্রতিদিন দু’এক জন মানুষ নিজেকে মেহদি অথবা ঈসা (আ) দাবী করে বের হয়ে আসেন। কয়েকদিন পরে আবার মারাও যান। কিন্তু, তাঁদের দাবী অনুযায়ী কেয়ামত আর হয় না। এর কারণ হচ্ছে, কিয়ামতের জ্ঞান আসলে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে নেই।

বর্তমানে বেঁচে আছেন, এমন অনেকেই নিজেকে মেহদী বা ঈসা দাবী করেছেন। তন্মধ্যে একজন হলেন তুরস্কের হারুন ইয়াহইয়া। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, আপনি যে মেহদী এর প্রমাণ কি? তিনি বললেন, “হাদিসে মেহদী (আ)-এর যত গুণাবলী আছে, সবকিছুই আমার মধ্যে আছে। আমি ছাড়া পৃথিবীর অন্য কারো এসব গুণাবলী নেই। সুতরাং, আমিই মেহদী।”

এখানে আমার প্রশ্ন হলো, মেহদী বা ঈসা (আ) হবার দাবী তো অনেকেই করেন। কিন্তু, আমরা কিভাবে বুঝব, কে আসল? আর, কে নকল?

মেহদী বা ঈসা (আ) কেউই নবী হয়ে আসবেন না, অথবা, কেউই নতুন করে কিতাব নিয়ে আসবেন না, কিংবা, মোজেজা নিয়েও আসবেন না। তাহলে কে আসল, আর কে নকল, তা বুঝার উপায় কি?

একবার একজনকে জিজ্ঞাস করলাম, মেহদী আসার কি দরকার?

তিনি আমাকে বললেন – “সারা পৃথিবীর সবাইকে ইসলামের মধ্যে নিয়ে আসার জন্যে মেহদী আসবেন”।

তাঁর জবাব শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। মুহাম্মদ (স) আল্লাহর একজন নবী ও রাসূল হিসাবে এ পৃথিবীতে এসেছেন, সাথে আল্লাহর কোর’আন নিয়ে এসেছেন। তারপরেও তিনি পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসতে পারেননি। কিন্তু মেহদী নামের একজন মানুষ নবী না হয়েও এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো কিতাব বা মোজেজা প্রাপ্ত না হয়েও, তিনি নাকি সারা পৃথিবীর সব মানুষকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসবেন।

অথচ, আল্লাহ তায়ালা কোর’আনে এর বিপরীত কথা বলছেন –

وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ

“আপনি যতই চান না কেনো, অধিকাংশ মানুষ মুমিন হবার নয়”। [সূরা ১২/ ইউসুফ – ১০৩]

এখানে আল্লাহ বলছেন, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ মুমিন হবে না। কিন্তু, আমরা মেহদী (আ)-এর মাধ্যমে পৃথিবীর সব মানুষকে মুসলিম বানিয়ে ফেলার স্বপ্ন দেখি। আমরা এমন এক মেহদীর স্বপ্ন দেখি, যিনি কোনো নবীর মর্যাদা না পেয়েও তিনি নাকি মোহাম্মদ (স)-এর চেয়েও বেশি সফল হয়ে যাবেন।

আমাদের অনেকের ধারণা, মোহাম্মদ (স) এর মাধ্যমে ইসলাম পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। মেহদী বা ঈসা (আ) আসার পরেই কেবল ইসলাম পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। অথচ আল্লাহ তায়ালা বলছেন, তিনি তাঁর দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। নতুন কেউ আসার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا

“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” [সূরা ৫/মায়িদা – ৩]

মোহাম্মদ (স)-এর মাধ্যমেই আমাদের দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। নতুন করে কারো জন্যেই ইসলাম অপেক্ষা করছে না। হোক মেহদী বা ঈসা (আ), তাঁদের আগমনের বিষয়টি বিশ্বাস করা বা বিশ্বাস না করা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত না। ঈমানে জন্যে যে সাতটি বিষয়কে বিশ্বাস করতে হয়, তা আমাদের সবার-ই জানা। সেখানে মেহদী বা ঈসা (আ)-এর আগমনে উপর বিশ্বাস করার কোনো কথা নেই।

আর, কেয়ামত কখনো কাউকে জানান দিয়ে আসবে না। মেহদী আসার ৪৭ বছর পর, বা, ঈসা (আ) আসার ৪০ বছর পর কেয়ামত হবে, এসব ধারণা কোর’আনের বিরোধী।

6 December 2017 at 19:24 · 

আরো পোস্ট