শহীদ মিনারে ফুল দেয়া প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা
১) বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা শহীদ মিনারে ফুল দেয়া বা না-দেয়া নয়, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হলো দুর্নীতি, হত্যা-খুন, ধর্ষণ, দরিদ্রতা, বেকারত্ব ও মানুষের অনৈক্য, ইত্যাদি। রাজনৈতিক দল হিসাবে এসব সমস্যার সমাধান করা আমাদের মূল লক্ষ্য। শহীদ মিনারে ফুল দেয়া বা না-দেয়া দুর্নীতি মুক্ত হবার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা নয়।
২) পৃথিবীর সকল মুসলিম দেশে শহীদদের সম্মান জানানো হয়। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, আরাকান, তুরস্ক ও ইরান সহ সকল মুসলিম দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের জন্যে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, অথবা অন্যভাবে তাদেরকে সম্মান জানানো হয়। এটা যেহেতু প্রতিটি মুসলিম দেশেই হয়, সুতরাং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া ব্যতিক্রম কিছু নয়।
৩) বাংলাদেশের মুসলিমদের একটি বড় অংশ সুন্নী ও সূফীদের অনুসারী। সূফী আলেমদের মতে, কবরে ফুল দেয়া যায়, সালাফী আলেমদের মতে, কবরে ফুল দেয়া যায় না। শহীদ মিনারে ফুল দেয়া যাবে কি যাবে না, এটা আলেমদের বিতর্কের বিষয়, রাজনীতিবিদদের বিতর্কের বিষয় নয়। তাই রাজনীতিবিদরা পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিমদের দেশের মতো শহীদদের প্রতীকী সম্মান জানানোতে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
৪) ইবাদত করার উদ্দেশ্যে মানুষ মসজিদ বা মন্দিরে যায়, শহীদ মিনারে নয়। ফলে শহীদ মিনারে ফুল দেয়াকে সরাসরি শিরক বলেননি আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর মতো আলেমরা।
৫) শহীদ মিনার শব্দ দুটি ইসলামী সভ্যতার শব্দ। কোরআনে বলা হয়েছে, শহীদরা মরেন না, বরং জীবিত। শহীদদেরকে ইসলামে যথেষ্ট সম্মান দেয়া হয়েছে।
৬) রাসূল (স) মৃত ব্যক্তির কবরে গাছের ডাল ফুঁতে দিয়েছেন, যাতে মৃত ব্যক্তির কষ্ট কম হয়। মৃত ব্যক্তির কবরে গাছের ডাল বা গাছের ফুল দেয়ার বিষয়টি হাদীসেও পাওয়া যায়।
৭) শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার মাধ্যমে যতটা না অতীতের শহীদদের কথা স্মরণ করা প্রয়োজন, তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন জীবিত মানুষদের এ জানান দেয়া যে, তারা যদি মুসলিম দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্যে জীবন দেয়, তাহলে তাদেরকেও একইভাবে সম্মান করা হবে।
৮) অধিকাংশ আলেমের মতে, জিহাদ ব্যক্তিগতভাবে হয় না। জিহাদ হয় মুসলিম দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্যে। যারা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যে শহীদ হয়, তাদেরকে শহীদ নামকরণ করা, সম্মান জানানো, তাদের প্রতিবারের ভরণ পোষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয়া – এগুলো মুসলিম দেশের সরকারের দায়িত্ব। কেবল শহীদ মিনারে ফুল দিলেই শহীদ পরিবারের পেটে ভাত চলে যায় না। আমরা দেখি, ডিসেম্বর মাসে অনেক টাকা খরচ করে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়, অথচ অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহিদের পরিবার না খেয়ে থাকে। সুতরাং, শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার চেয়ে শহীদ পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেয়া বেশি প্রয়োজন।