সমাজের পরিবর্তনকারীদের বৈশিষ্ট্য – কাজী নজরুল ইসলাম
“স্নেহের হাত বুলিয়ে এ পচা সমাজের কিছু ভালো করা যাবে না। যদি সে রকম ‘সাইকিক-কিওর’ এর শক্তি কারুর থাকে, তিনি হাত বুলিয়ে দেখতে পারেন। ফোঁড়া যখন পেকে পচে উঠে তখন রুগী সবচেয়ে ভয় করে অস্ত্র-চিকিৎসককে। হাতুড়ে ডাক্তার হয়তো তখন আশ্বাস দিতে পারে যে, সে হাত বুলিয়ে ঐ গলিত ঘা সারিয়ে দেবে এবং তা শুনে রুগীরও খুশি হয়ে উঠবার কথা। কিন্তু বেচারি ‘অবিশ্বাসী’ অস্ত্রচিকিৎসক তা বিশ্বাস করে না। সে বেশ করে তাঁর ধারালো ছুরি চালায় সে-ঘায়ে; রোগী চেঁচায়, হাত পা ছোঁড়ে, গালি দেয়। সার্জন তার কর্তব্য করে যায়। কারণ সে জানে, আজ রুগী গালি দিচ্ছে, দু-দিন পরে ঘা সেরে গেলে সে নিজে গিয়ে তার বন্দনা করে আসবে।
আপনি কি বলেন? আমি কিন্তু অস্ত্রচিকিৎসার পক্ষপাতী। সমাজ তো হাত-পা ছুঁড়বেই, গালিও দেবে; তা সইবার মতো শক্ত চামড়া যাঁদের নেই, তাঁদের সমাজ-সেবা হয়তো চলবে না। এই জন্যই আমি বারে বারে ডাক দিয়ে ফিরছি নির্ভীক তরুণ ব্রতীদলকে। এ-সংস্কার সম্ভব হবে শুধু তাদের দিয়েই। এরা যশের কাঙাল নয়, মানের ভিখারী নয়। দারিদ্র সইবার মতো পেট, আর মার সইবার মতো পিঠ যদি কারুর থাকে, তো এই তরুণদেরই আছে। এরাই সৃষ্টি করবে নূতন সাহিত্য, এরাই আনবে নূতন ভাবধারা, এরাই গাইবে ‘তাজা-ব-তাজা’র গান।”
- কাজী নজরুল ইসলাম,
প্রিন্সিপ্যাল ইব্রাহীম খাঁ কে লিখিত, নজরুলের পত্রাবলি, নজরুল ইন্সটিটিউট, পৃ-৬২