সহীহ বুখারী কি ১০০% সঠিক? – উস্তাদ জোনাথন ব্রাউন
“সহীহ বুখারী লিখেছেন মুহাম্মাদ বিন ইসমাইল আল বুখারী। তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন ২৫৬ হিজরিতে, বা ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে। বুখারী অন্য মানুষদের মতোই একজন মানুষ। আর মানুষ মাত্রই ভুল করে। যেমনটা ইমাম শাফেয়ী বলেছেন:
ان أبى أن يتم كلام إلا كلام الله
“আল্লাহর কোরআন ছাড়া শতভাগ শুদ্ধ কোনো গ্রন্থ নেই।”
এ সংজ্ঞা অনুযায়ী কোরআন ছাড়া মানুষের হাতে করা সকল কিছুই, সকল গ্রন্থই, বা সকল কাজ-ই ত্রুটিপূর্ণ হবে। সুতরাং সহীহ বুখারীর মধ্যেও ত্রুটি আছে। এ জন্যে এ জন্যে ইমাম বুখারীর শত শত বছর পরে তার বুখারী গ্রন্থে কিছু সনদ সম্পর্কিত ভুল চিহ্নিত করেছেন মুসলিম স্কলারগণ। তবে এতে হাদীসটি সত্য কি মিথ্যা তাতে কোনো প্রভাব রাখেনি। এমন ছোটখাটো সনদের সমস্যা আছে প্রায় ২০০ টি হাদীসে, যা স্কলারগণ চিহ্নিত করেছেন। বুখারীর কিছু কিছু হাদীসে একাধিক বর্ণনার সনদ রয়েছে, যার একটি সনদে কিছু সমস্যা আছে হয়তো, কিন্তু অন্য সনদে সমস্যা নেই।
আমার জানা মতে, বুখারীতে ৩ বা ৪ টি হাদীস রয়েছে, যে হাদীসগুলোতে মুসলিম স্কলারগণ সমস্যা পেয়েছিলেন। এবং তারা বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এ হাদীসের বিষয়বস্তু ভুল। ‘ বুখারীতে প্রায় ৫ হাজার বা ৬ হাজার হাদীস আছে, এর মধ্যে ৩ বা ৪ টি হাদীসের সমস্যা খুবই নগণ্য। এমনকি আপনি বলতে পারেন ২০ বা ৩০ টি হাদীসে সমস্যা আছে, কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ গ্রন্থের হাদীসগুলোর তুলনায় খুবই সামান্য।
এখন কথা হলো, কেন স্কলারগণ বলেন যে, ‘আমি যে কোনোভাবেই হোক (বুখারীর বিরুদ্ধে করা সমালোচনাগুলো) রুখবো?’
কারণ, ‘সহীহ বুখারী’ বা ‘সহীহ মুসলিম’ রাসূল স. এর সুন্নাহকে প্রতীকায়ন করে। এ গ্রন্থগুলো এমন একটি পথকে বাতলে দেয়, যা দ্বারা মুসলিমরা তাদের ধর্মকে বুঝতে পারে। এ গ্রন্থগুলো মুসলিম উম্মাহ এর সর্বসম্মত মতামত বা ইজমাকে বুঝতে সাহায্য করে।
সহীহ বুখারীকে সমালোচনা করাটা তখনি সমস্যা হলো, যখন মুসলিমরা কাকতালীয়ভাবে পশ্চিমা স্কলার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সহীহ বুখারীর সমালোচনা শুরু করলো। নির্দিষ্ট করে বললে এ সময়টা হলো ১৮০০ শতাব্দীর শেষের দিকে, যখন খ্রিস্টান, আধুনিক, পশ্চিমা, নাস্তিক লোকেরা মুসলিমদের এবং তাদের সব ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করলো।
মুসলিম ঐতিহ্যগুলো তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো এমন খুঁটি, যার উপর ধর্ম সুসংগঠিত হয়। ফলে পশ্চিমা স্কলারগণ মুসলিমদের এসব ঐতিহ্যের চিহ্নগুলো ভাঙ্গতে এর পিছনে লাগলো। যদি কোনো মুসলিমকে দিয়ে ভিতর থেকে ঐতিহ্যের খুঁটিগুলো ভাঙ্গানো যায়, তাহলে বিশ্বাসঘাতকতার সাথে খুব ভালোভাবে ভাঙ্গা যাবে।
এ কারণে সহীহ বুখারীর সমালোচনা করাটা আসলে আধুনিক সময়ের একটি বিষয়। এর আগের মুসলিম স্কলারগণ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমকে কাজে লাগিয়েছেন, তারা এ গ্রন্থগুলোকে গভীর সম্মান করেছেন। মুসলিম স্কলারগণের মধ্যে যখন কোনো মতবিরোধ দেখা দিতো, যেমন একজন হানাফী স্কলার ও একজন মালেকী স্কলার এর মাঝে যদি মতবিরোধ দেখা দিতো, তখন একজন হয়তো বলতেন, আমার হাদীসটা সহীহ বুখারীতে রয়েছে। এর মানে হাদীসটি বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে নেয়া হয়েছে।
একটি হাদীস দিয়ে কী বুঝানো হতো, তা নিয়ে হয়তো ইমামরা মতবিরোধ করতেন, কিন্তু হাদীসের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে মতবিরোধ হতো না। যদি কোনো শিয়া স্কলার কোনো সুন্নী স্কলারকে কিছু গ্রহণ করাতে চাইতেন, তাহলে তিনিও সহী বুখারীর হাদীস নিয়ে আসতেন। যদিও শীয়ারা সুন্নীদের মত সহীহ বুখারীকে গ্রহণ করেন না। এ গ্রন্থগুলোর প্রতি মুসলিম স্কলারগণের সম্মান ছিলো। তথাপি এ গ্রন্থগুলো মানুষের তৈরি, এবং এগুলোতে সমালোচনার কিছু বিষয়ও ছিলো সবসময়, কিন্তু এর কারণে গ্রন্থটি বাতিল হয়নি।”