কঠোরতার ক্ষেত্রে অনেকেই আল্লাহ-রাসূল এর কথা মানেন না
কোরআনে বা হাদীসে কোথাও বলা হয়নি, একটি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারীর অপরাধে মালিককে আল্লাহ ধরবেন, অথবা এক বন্ধুর অপরাধে অন্য বন্ধু দোষী হবেন।
কোরআনে বরং ঠিক এর বিপরীত কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, একজনের অপরাধের বোঝা অন্য কাউকে বহন করতে হবে না। আল্লাহ বলেন –
وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ
“যে ব্যক্তি কোন গোনাহ করে, তা তারই দায়িত্বে থাকে। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। অতঃপর তোমাদেরকে সবাইকে প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।” (সুরা ৬/আনআম, আয়াত : ১৬৪)
এ আয়াতে স্পষ্টভাবে বলে দেয়ার পরেও অনেকে নানা ব্যাখ্যা হাজির করে কোরআনের আয়াতটিকে অস্বীকার করেন, এবং বলেন, কর্মচারীর অপরাধকে মালিক কেন প্রশ্রয় দিলো?
যেখানে আল্লাহ বলেছেন, ধর্মের বিষয়ে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই (২:২৫৬), সেখানে আমরা ধর্মের বিষয়েই বেশি জবরদস্তি করি।
রাসূল স. বলেন –
“যে কোন বান্দা ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে এবং এ অবস্থার উপরে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম: সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে? তিনি বললেন: যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও। আমি জিজ্ঞেস করলাম: সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে তবুও? তিনি বললেন: হ্যাঁ, সে যদি যিনা করে, সে যদি চুরি করে তবুও। আমি বললাম: যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও? তিনি বললেন: যদি সে যিনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও। ” (বুখারী, তাহহীদ, ৫৮২৭)
এ হাদীসকেও অনেকে অস্বীকার করে নিজেদের ব্যাখ্যা দিয়ে। তারা বলে, এটার এ ব্যাখ্যা আছে, এটার সে ব্যাখ্যা আছে, রাসূল আসলে অন্য কিছু বুঝিয়েছেন, ইত্যাদি। নিজেদের নানা ব্যাখ্যা হাজির করে অনেকে এ হাদীসটিকে অস্বীকার করে।
ইমাম আবু হানিফা বলেন-
وأعلم أني أقولُ: أهلُ القبلةِ مؤمنونَ، لستُ أُخْرِجُهُم من الإيمانِ بتضييعِ شىءٍ من الفرائضِ
“জেনে রাখো, নিশ্চয় আমার কথা হলো, যারাই আহলে মক্কা (তথা মক্কাকে কিবলা স্বীকার করে) তাঁরাই মুমিন। কোনো ফরজ কাজকে কেউ যদি বাদ দেয়, আমি তাঁকে ইসলাম থেকে বের করে দিতে পারি না”। [সূত্র: রিসালাতু আবি হানিফা ইলাল বাতি]
ইমাম আবু হানিফার এ কথাটাকেও আমরা নিজেদের ব্যাখ্যা হাজির করে অস্বীকার করি।
আল্লাহ বলেন, এক জনের অপরাধে অন্য কাউকে দায়ী করা হবে না। আমরা বলি, অবশ্যই দায় নিতে হবে।
আল্লাহ বলেন, ধর্মের বিষয়ে কোনো জবরদস্তি নেই। আমরা বলি, অবশ্যই জবরদস্তি করতে হবে।
রাসূল স. বলেন, কেউ যিনা করলেও কেবল লা ইলাহা ইল্লাহ বললে জান্নাতে যেতে পারবে । আমরা বলি, কখনোই না, সে অবশ্যই জাহান্নামে যাবে।
ইমাম আবূ হানিফা বলেন, কেউ ফরজ কাজ বাদ দিলেও আমরা তাঁকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দিতে পারি না। আমরা বলি, জি না, অবশ্যই তাঁকে ইসলাম থেকে বের করে দিতে হবে।
আসলে আমরা আল্লাহ, রাসূল বা আমাদের ইমামদের কথাকে ধর্ম হিসাবে মানি না। বরং নিজেদের কথাকেই ধর্ম হিসাবে চালিয়ে দেই।