অন্যের পাপ অনুসন্ধান করা কি জায়েজ?
একজন আমাকে বললেন, ‘সমকামিতা নিয়ে এতদিন এতকিছু হলো, তখন তো কিছু বলেননি’
আসলে আমাকে কথা বলতে বারণ করেছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল স।
আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহ্ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। তবে কারো প্রতি জুলুম হয়ে থাকলে সে কথা আলাদা। আল্লাহ্ শ্রবণকারী,বিজ্ঞ”। [সূরা আন নিসা, ৪:১৪৮]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রা বলেন,
” “আল্লাহ্ পছন্দ করেন না যে, আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে বদদোয়া করি বা মন্দ বিষয় প্রকাশ করি, যদি না আমাদের উপর অন্যায় করা হয়। তবে যদি কারো উপর জূলূম করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এই ব্যাপারে আল্লাহ্র অনুমতি রয়েছে। তারপরও এই ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করাই উত্তম।” [তফসীর ইবনে কাসীর]
উপরের আয়াতে ও ইবনে আব্বাস রা এর কথায় এটা স্পষ্ট যে, মন্দ কাজ ও জুলুম এক নয়। অন্যের মন্দ কাজ প্রকাশ করা আল্লাহ পছন্দ করেন না, কিন্তু জুলুম হলে প্রকাশ করা যাবে।
এখন প্রশ্ন হলো, সমকামিতা কি জুলুম না মন্দ কাজ? অনেক হাদীসে সমকামিতাকে মন্দ কাজ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোথাও জুলুম বলা হয়নি। জুলুম হলো সেটাই, যেখানে অন্যের অধিকার হরণ করা হয়।
সুতরাং সমকামিতার মত একটা মন্দ কাজ নিয়ে চুপ থাকাটাকেই আমি আল্লাহর হুকুম বলে মনে করি।
এ ছাড়াও রাসূল স. বলেছেন,
“মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে যালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে,আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন।যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দুর করবে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।” (বুখারী, তাওহীদ প্রকাশনী, ২৪৪২)
রাসূল স. আরো বলেছেন,
مَنْ سَتَرَ مُسْلِما سَتَرَهُ اللهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।” (ইমাম নববী, চল্লিশ হাদীস, ৩৬)
এমন অনেক হাদীস রয়েছে, যেখানে মুসলিমদের দোষ বা মন্দ কাজ গোপন রাখতে বলা হয়েছে। অথচ আমরা এখন অন্যের পাপকে প্রচার করাটাই ইসলাম মনে করছি।
যে কোনো পাপের বিরোধিতা করা যায়, এবং বিরোধিতা করা উচিতও বটে। কিন্তু সেখানে পাপের আলোচনায় পাপী ব্যক্তিকে টেনে আনা ইসলাম সম্মত নয়।
আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত: “রাসূল (সা:) একবার মীম্বরে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে বললেন, “হে লোকেরা, যারা কিনা ইসলামকে শুধুমাত্র মুখে গ্রহণ করেছ কিন্তু অন্তরে ঈমান আননি এখনো, তোমরা মুসলমানদের অনিষ্ট করা থেকে বিরত থাক, বিরত থাক তাদের ঠাট্টা করা থেকে, আর বিরত থাক তাদের ভুলত্রুটি বলে বেড়ানো থেকে, কারণ যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের দোষ অন্বেষণ করে বেড়ায় আল্লাহ্ও তার দোষ অন্বেষণ করবেন এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ করে দিবেন, এমনকি যদি নিভৃতে কোন এক গৃহকোণেও সংঘটিত হয়ে থাকে পাপটি।” [সহীহ্ আল জামী]
কেউ কারো উপর জুলুম করলে তাঁর শাস্তির জন্যে বিচারকের কাছে জুলুমের বর্ণনা দিয়ে তাঁর শাস্তি দাবী করা যায়। কিন্তু কাউকে পাপী সাব্যস্ত করার দায়িত্ব মানুষের নয়, এটা আল্লাহর কাজ।
কাউকে পাপী হিসাবে ফতোয়া দিলেই সে পাপী হয়ে যায় না। এ বিষয়ে হাদীসে এসেছে,
وَعَنْ وَابِصَةَ بْنِ مَعْبَدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: أَتَيْت رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم فَقَالَ: “جِئْتَ تَسْأَلُ عَنْ الْبِرِّ؟ قُلْت: نَعَمْ. فقَالَ: استفت قلبك، الْبِرُّ مَا اطْمَأَنَّتْ إلَيْهِ النَّفْسُ، وَاطْمَأَنَّ إلَيْهِ الْقَلْبُ، وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي النَّفْسِ وَتَرَدَّدَ فِي الصَّدْرِ، وَإِنْ أَفْتَاك النَّاسُ وَأَفْتَوْك
“ওয়াবেসা ইবনে মা’বাদ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি একবার রাসূল (স)-এর নিকট আসলে তিনি আমাকে বললেন: “তুমি কি পুণ্য বা সৎকাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ? আমি বললাম: জি, হাঁ। তিনি বললেন: “তোমার নিজের হৃদয়কে জিজ্ঞাসা কর। যা তোমার আত্মাকে সন্তুষ্ট রাখে এবং হৃদয়কে আশ্বস্ত রাখে, তা হচ্ছে পুণ্য। আর, যা তোমার আত্মাকে অস্বস্তিতে রাখে এবং মনে সংশয় সৃষ্টি করে, তা হচ্ছে পাপ; যদিও মানুষ তোমাকে ভিন্ন ফতোয়া দিক।” [হাদীস নং – ২৭, ইমাম নববীর ৪০ হাদিস থেকে]
এ হাদীস অনুযায়ী, পাপী ব্যক্তি নিজেই তার পাপ বুঝতে পারে। কাউকে পাপী বলার জন্যে কোনো ফতোয়ার প্রয়োজন নেই। তাই সমকামীদের নিয়ে আমার অনুসন্ধান করারও দরকার নেই, এসব বিষয়ে অনুসন্ধান ও প্রচার-প্রচারণাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল পছন্দ করেন না।