আমাদের জাতীয় সঙ্গীত এমন কেন?

বাংলাদেশেরর জাতীয় সংগীতটা আর গাওয়া হলো না – যতবার গাইতে যাই, ততবার বাঁধে বিপত্তি। সমস্যা আমার না জাতীয় সংগীতের তা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না।

চার দিনের অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানের দু-দিন ছিল শিক্ষাসফর। বাসে দীর্ঘ পাহাড়ি পথে চলছি বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা একসাথে। স্যার বললেন – সবাই নিজেদের ভাষায় গান গাইতে হবে।

আমরা বাঙালি শিক্ষার্থী পাঁচজন। সিদ্ধান্ত নিলাম – বাংলাদেশকে বড় করতে হবে – গাইব – বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত।

যেই সিদ্ধান্ত, সেই কাজ। সুন্দর গলাবিশিষ্ট এক ভাই গাইলেন – “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি………।”

কিন্তু একি হায়! গান শুনে দর্শকদের নেই কোনো উচ্ছ্বাস, নেই হাততালি; এমন হলো কেনো?

অথচ, আমাদের আগেও ফিলিস্তিনের ছেলেরা যখন তাদের জাতীয় সংগীত গাচ্ছিল, সব শিক্ষার্থীর সে কি উচ্ছ্বাস; ছিল মুহুর্মুহু হাততালি – সবাই একসাথে গেয়েছিল সে গান – যে যতটুকু পেরেছে।

আমাদের চোখেমুখে বিরক্তের ছাপ। কত বড় কবির, কত মহৎ চেতনাময় একটা গান গাইলাম – অথচ এদের নেই কোনো সাড়া-শব্দ। নিজেদের সান্ত্বনা দিলাম এই ভেবে – সংস্কৃতিহীন বিদেশী শিক্ষার্থীর দল – গানের বুঝে কি! না বুঝে সুর! না বুঝে তাল!

সেদিন আর আমাদের অন্য কোনো বাংলা গান গাওয়া হল না।

পরের দিন। সিদ্ধান্ত নিলাম – কি গাওয়া যায়?

সব বাঙালি শিক্ষার্থী মিলে কয়েকটা গান গাইব বলে ঠিক করলাম। গাইলাম – কাজী নজরুল ইসলামের
“চল চল চল!
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণি তল,
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চল রে চল রে চল
চল চল চল”

এবং

“কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট
শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ!
ধ্বংস নিশান
উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদী”

আর, মুহিব খানের “ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি” এবং কবি মল্লিকের “পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে…”

সবগুলো গান সেই-রকম হিট করেছে। সবাই একসাথে গেয়েছে তো বটেই, স্যার আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে, গানগুলোর অর্থ কি!

তারপর বুঝলাম – সমস্যা আমাদের ছিল না; ছিল রসকষহীন জাতীয় সংগীতের।

চার দিনের অরিয়েন্টেশন শেষে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আমরা ঘুরছি পাহাড়ের চতুর্দিক। আমাদের স্যার – তুর্কি মানুষ – ডাক দিলেন বাংলা ভাষায় – “চল, চল, চল…”

October 4, 2015 at 10:42 PM ·

আরো পোস্ট