আল্লাহর ইবাদাতের পরে জগতের যত বড় বড় কাজ আছে, সবচেয়ে মহৎ কাজ রান্না-বান্না ও খাবার প্রস্তুত করা
বাসায় আমার কাজ কেবল বাসন-কোসন ধোয়া এবং আলু-পেয়াজ-মরিচ জাতীয় জিনিস কাটা। বড় বা জটিল কোনো রান্না আমি পারি না; আপু বা আম্মুর কাজ সেসব। আমি শুধু ভাত-ডাল রান্না এবং ডিম ভাজতে পারি।
রান্না করা এবং রান্নার আয়োজন করা আমাদের আম্মু-আপুদের কাছে যে কতটা ধ্যান-ধৈর্য ও ভালোবাসার কাজ, তা খুব কম পুরুষ-ই জানে। পুরুষদের কাছে ‘রান্না’ একটি বিরক্তিকর-ঝামেলার নাম – যখন নিজেকেই রান্না করতে হয়। কিন্তু যখন আম্মু-আপুরা রান্না করেন, তখন আমরা বলি – “এ আর এমন কি কাজ!!!”
আমাদের চাকরি বা ব্যবসাকে আমরা যতটা গুরুত্বের সাথে মূল্য প্রদান করি, আম্মু-আপু-স্ত্রীদের দৈনন্দিনের রান্নাকে ততটা গুরুত্ব-মূল্য দিতে পারি না। অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মে রান্নাকে উপাসনার সাথে তুলনা করা হয়; যদিও ইসলামে রান্না-বান্নাকে অন্যভাবে গুরুত্ব প্রদান করে।
ইসলামে কিছু ইবাদাত আছে, যার ত্রুটি হলে কাফফারা হিসাবে দরিদ্রকে রান্না করে খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে [সূরা মায়েদা – ৯৫] জান্নাতে যত নেয়ামতের কথা বলা হয়েছে, বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার তার অন্যতম।
রাসূল (স) বলতেন – “তোমাদের কোনো চাকর যদি তোমাদের সামনে এমন রান্না নিয়ে হাজির হয়, যা রান্না করতে গিয়ে তাকে (আগুনের) তাপ সহ্য করতে হয়েছে, তখন তোমাদের উচিত হবে সে রান্নাকারীকে তোমাদের কাছে বসিয়ে কিছু খাবার প্রদান করা। যদি খাবার খুব অল্প হয়, তবে অন্তত এক বা দুই লুকমা হলেও তাকে প্রদান করা। [সহীহ মুসলিম – ৪১৭১]” দেখুন, একজন চাকরকেও কেবল রান্নার কারণে রাসূল (স) কতটা মর্যাদা ও গুরুত্ব দিয়েছেন।
সেক্যুলার মানুষেরা পৃথিবীতে যত লড়াই-সংগ্রাম কিংবা চাকরি-ব্যবসা করুক না কেনো, সব কিছুই তারা করে খাবারের জন্য। অথচ, তাদের কাছেও খাবার রান্নার গুরুত্ব নেই – না সেক্যুলার নারীর কাছে, না সেক্যুলার পুরুষের কাছে।
দীর্ঘ দিন বাহিরে খেয়েছি; বাসায় আম্মু-আপুদের রান্নায় যে তৃপ্তি পাই তার একভাগ তৃপ্তিও হোটেলে বা মেসে পাই না। খলিল জিব্রান ঠিকই বলেছেন – “যে রুটি প্রস্তুত করার সময় আন্তরিকতা-ভালোবাসা থাকে না, সে রুটির স্বাদ অর্ধেক কমে যায়।”
আম্মু এবং আপুকে দেখেছি, রান্না করার সময় প্রচুর চিন্তা করে, কিভাবে রান্না করলে পরিবারের সব সদস্যরা পছন্দ করবে। পরিবারের সব সদস্য একরকম হয় না; একেকজন একেক রকম খেতে পছন্দ করে। সুতরাং আম্মু-আপুদেরকে অনেক যোগ-বিয়োগ করে রান্না করতে হয়। আমরা যখন তাঁদের রান্না, সময়, ধৈর্য ও ভালোবাসার মূল্য দেই না; তখন তাঁদের ওপর আসলেই জুলুম করা হয়।
যে কারণে এতগুলো কথা বললাম…
পুঁজিবাদের দুনিয়ায় আমরা সবকিছুকেই কেবল অর্থ দিয়ে মূল্যায়ন করি। এতে অনেক কিছুই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়, যথার্থ মূল্য পায় না এবং সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পুরুষেরা নারীদের রান্না-বান্নাকে যথার্থ মূল্য দিতে পারে না বলেই আজকাল নারীরাও রান্না-বান্নাকে নিচু কাজ মনে করেন এবং ভিন্ন কাজের সন্ধানে বের হয়ে পড়েন। অথচ, আল্লাহর ইবাদাতের পরে জগতের যত বড় বড় কাজ আছে, সবচেয়ে মহৎ কাজ রান্না-বান্না ও খাবার প্রস্তুত করা।
September 9, 2015 at 7:20 PM ·