এ দেশের ইতিহাস মানেই ‘৭১!

যখন কেউ বলেন যে, ‘আমাদেরকে ইতিহাস জানতে হবে’; তখন তিনি আসলে ১৯৭১ সালের কিছু ঘটনার কথাই বলেন। এ দেশে ইতিহাসের অর্থ হল ১৯৭১ সাল। আগে বা পরের কোনো ঘটনা ইতিহাস হিসাবে বিবেচিত নয়।

এরকম বিচ্ছিন্নভাবে ইতিহাস চর্চার ফলে দুই ধরণের উগ্রবাদীর জন্ম হয়। এক ধরণের মানুষ মনে করেন, ৭১-ই আমাদের সব; ৭১-ই সকল ভালো-মন্দ বিচারের মাপকাঠি। অন্য কিছু মানুষ মনে করেন, ৭১ কিছুই না; ৭১ আমাদের ইতিহাস না। ৭১ নিয়ে এ দুটি চরমপন্থার সৃষ্টি হয়েছে আমাদের ঐতিহাসিকদের কারণেই। তারা ৭১ কে একটি দানব আকারে আমাদের নিকট হাজির করেছেন।

আমরা ৭১-কে ছোট করে দেখছি না; তবে কথিত ‘ঐতিহাসিকদের’ মত খুব বড় করে দেখারও কিছু নেই। এ দেশে এমনি-এমনিই ৭১ আসে নি। এর আগে-পরে অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। আমাদের তরুণদের যদি ঐ সমস্ত ঘটনাগুলো জানতে না দেয়া হয়, তাহলে ইতিহাস নিয়ে দুটি চরমপন্থা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।

যেমন ১৯৬৯-এর কথা ভাবা যাক। ১৯৬৯ না হলে কখনো এ দেশে ১৯৭১-এর কথা চিন্তা করা যেত না। অথচ আমাদের ঐতিহাসিকদের ১৯৬৯-এর নিয়ে কথা বলতে বললে তারা দুই মিনিটও কথা বলতে পারবেন না। আসলেই পারবেন না। আপনি তাদের ইতিহাসের বইগুলো দেখেন। ১৯৭১ নিয়ে হাজার হাজার পৃষ্ঠা লেখা হলেও ১৯৬৯ নিয়ে দুই পৃষ্ঠা লেখাও নেই।

একবার এক তরুণ ঐতিহাসিক আমাকে বললেন, কেনো, আমরা তো ১৯৬৯ নিয়ে অনেক কিছু জানি। আমি বললাম, একটু শুনি…। তিনি দুটি শব্দ উচ্চারণ করেই থেমে গেলেন। এক. আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, দুই. আসাদের লাল জামা। আমি বললাম, তারপর? তিনি বাক্যহীন।

৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কোথা থেকে এই অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল? কারা এই অভ্যুত্থান শুরু করেছিলেন? কারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? –এসব কিছুই আমরা জানি না। আমরা শুধু জানি ১৯৭১-এ কিছু একটা হয়েছিল।

বাংলাদেশের চলমান সংকট সৃষ্টির পিছনে একটা একটা বড় অংশে দায়ী এ দেশের ঐতিহাসিক নামধারী কিছু মানুষ।

March 20, 2015 at 12:14 AM ·

আরো পোস্ট