একজন দায়ী ব্যাক্তির আচরণ যেমন হওয়া উচিত

সকালে এনটিভি’তে ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠান চলছে…

-হ্যালো, স্যার, আমি মাসুদ বলছি, বয়স ৪২, আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকের বাম পাশে মাঝে মাঝে ব্যথা করে, ……… ; আমি কি ঔষধ খেতে পারি?
ডাক্তার- আপনার অসুস্থতার যে বিবরণ শুনলাম, তা একটু জটিল মনে হচ্ছে। স্টুডিও থেকে এর পরামর্শ দেয়া কঠিন; আপনি ভালো কোনো হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন।

এরপর মোঃ ইয়াসিন কল করলেন; ডাক্তারের একই উত্তর- ‘…… আসলে স্টুডিও থেকে হার্টের চিকিৎসা করা যায় না, আপনি ভালো একজন হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞ থেকে সরাসরি চিকিৎসা নিন।’

তারপর রাজু, ওমায়ের, নাজিম সাহেব সহ অনেকেই কল করলেন; সবাইকে ডাক্তার প্রায় একই উত্তর দিলেন।

এবার রানা সাহেব কল করলেন। উপস্থাপিকাকে বললেন- আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই।
-বলুন।
-ডাক্তার সাহেব তো সব রোগীকেই সরাসরি যোগাযোগ করতে বলছেন, তাহলে আপনাদের এই অনুষ্ঠানের কি দরকার ছিলো?

উপরের এই কৌতুকটি আমাদের সবার জানা। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি কৌতুক মনে হলেও এখানে ডাক্তাবের চমৎকার প্রজ্ঞার পরিচয় মিলে। তিনি রোগীকে ভালোভাবে জানা ব্যতীত কোনো ঔষধ খেতে দিচ্ছেন না। কারণ, সবাই হার্টের রোগী হলেও, সার্বিক অবস্থার বিবেচনা করে ঔষধ ভিন্ন ভিন্ন হবে। ফলে, ডাক্তার এখানে সবাইকে সরাসরি যোগাযোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

ইয়াসিন, রাজু, ওমায়ের ও নাজিম সাহেবের মত রোগীরা ডাক্তারের এ পরামর্শকে ভালোভাবেই গ্রহণ করলেন। কারণ, তারা জানেন, টিভিতে একটা কল দিয়েই হৃদরোগের সমাধান পাওয়া যায় না। এর জন্যে শরীরের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তারকে দেখাতে হবে; তারপরেই মিলবে সমাধান।

কিন্তু ইসলামের ক্ষেত্রে আমরা কেউ এই নিয়ম মানতে চাই না, আমরা সবাই তখন রানা সাহেব হয়ে যাই।

ঈমান-আমলে অসুস্থতা দেখা দিলে আমরা আলেম-উলামাদের শরণাপন্ন হই। আমরা চাই, তাঁরা আমাদের তাৎক্ষণিক কমন একটা সমাধান দিয়ে দিক, যাতে সে সমাধান দিয়ে যাতে সব মানুষকে বিচার করা যায়। অথচ রাসূল (সঃ) কখনো এমন করতেন না। তিনি একই প্রশ্নের উত্তরে সাহাবীদের ভিন্ন ভিন্ন সমাধান প্রদান করতেন।

একবার এক সাহাবী বললেন- ইয়া রাসূল (সঃ), উত্তম কাজ কোনটি? রাসূল (সঃ) বললেন- আল্লাহকে স্মরণ করা। আরেক সাহাবী বললেন- উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন- আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা। এখানে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একই প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সঃ) দু’জন সাহাবীকে পরস্পর ভিন্ন দু’টি জবাব দিয়েছেন। রাসূল (সঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব এখানেই। তিনি পরিবেশের আলোকে সমাধান প্রদান করতেন।

আমরা মানুষ। আমাদের মন খুবই জটিল প্রক্রিয়ায় কাজ করে। যখনি আমরা কোনো মানুষের ভালোমন্দ আচরণকে খুব সরলভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে তার ব্যপারে একটি সিদ্ধান্তে চলে আসি, তখনি আমরা এর বিরাট ভুল করে ফেলি।

যেমন ধরুন, দু’জন মুসলিমের মুখে দাঁড়ি নেই। তাই বলে দু’জনের-ই দাঁড়ি না রাখার কারণ কিন্তু এক নয়; সুতরাং সমাধানের পথও এক নয়। তাদের দু’জনকে ভিন্ন ভিন্নভাবে বুঝতে হবে এবং ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে দাওয়াহ দিতে হবে। আমরা সবাইকে সবসময় নিজের মত করেই বিচার করি, আর হাতুড়ে ডাক্তারের মত একই ঔষধ প্রদান করি।

এরপর আমরা আরেকটা ভুল করি। আমাদের রোগ হলে সাধ্যমতো চেষ্টা করি কোনো বড় ডাক্তারকে দেখাতে। অথচ আমাদের ঈমান-আমলে অসুস্থতা দেখা দিলে আমরা যে কোনো লোকের কাছেই এর সমাধান চেয়ে বসি। কখনো একটু কষ্ট করে খুঁজতে চেষ্টা করি না যে, আশেপাশে বড় আলেম কে আছেন? কার অনেক জানাশোনা আছে? কে ভালোভাবে আমার সার্বিক অবস্থা ও পরিবেশ মূল্যায়ন করে সমাধান প্রদান করতে পারবেন?

একজন দায়ী ব্যক্তি যেভাবে একজন ভালো ডাক্তারের মত আচরণ করবেন; ঠিক সেভাবে একজন ইসলামের ছাত্রও একজন সচেতন রোগীর মতই আচরণ করবেন। -যদি এমন হত, মুসলিম সমাজের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।

January 18, 2015 at 11:10 AM

আরো পোস্ট