বাংলাদেশে ‘বুদ্ধিজীবী’ স্বীকৃতি পাবার ১০টি সহজ উপায়
বাংলাদেশে ‘বুদ্ধিজীবী’ স্বীকৃতি পাবার ১০টি সহজ উপায়।
১) বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তিত্বের তালিকা প্রণয়ন করুন, যারা এখনো সমাজে সমালোচিত নন। আপনিই প্রথম এক এক করে এঁদের সমালোচনা শুরু করুন। যত বড়মাপের মানুষের সমালোচনা করবেন, আপনি তত বড় বুদ্ধিজীবী হতে পারবেন।
২) বিখ্যাত কয়েকটি বইয়ের ভূমিকা পড়ে ফেলুন; পারলে কিছু বিদেশী বুদ্ধিজীবীর নামও মুখস্থ করে নিন। খুব বেশি কষ্ট হলে, থাকুক। নীলক্ষেতে স্বল্পমূল্যে অনেক দুর্লভ বই পাওয়া যায়; কিনে নিন। রাস্তাঘাটে চলতে-ফিরতে, নিয়মিত এসব বই হাতে রাখুন।
৩) দেশে বুদ্ধিজীবী তৈরির বেশ কিছু কারখানা আছে, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে। আপনি যে কোনো একটিতে ঢুকে পড়ুন, এবং সাপ্তাহে অন্তত একদিন সেখান থেকে থেরাপি নিয়ে আসুন। অল্প সময়ে বুদ্ধিজীবী হতে চাইলে এর বিকল্প নেই।
৪) রাজনীতি কোষ, দর্শন কোষ বা বাংলাপিডিয়া জাতীয় কিছু বই হাতের নাগালে রাখুন। অবশ্য নাগালে না রাখলেও সমস্যা নেই; আপনার সেলফনে ইন্টারনেট তো আছেই, উইকিপিডিয়া দেখে নিন। বক্তৃতা বা লিখার মাঝে দু’একটি করে নতুন পরিভাষা ও তথ্য যুক্ত করুন; যাতে লোকে বুঝে- আপনি অনেক বড়মাপের জান্তা।
৫) সুযোগ থাকলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ গ্রহণ করুন অথবা টিভিতে টক-শো দেখুন। তারা যেভাবে কথা বলে, ঠিক সেভাবেই কথা বলতে শিখুন কিংবা মুখস্থ করে নিন। এবার এসব কথা দিয়ে আপনার আশেপাশে তুমুল ঝড় তুলুন।
৬) আমাদের দেশে একই ঘটনা বারবার ঘটে। তাই দু’এক বছর পত্রিকার কলামগুলো কেটে কেটে জমিয়ে রাখুন। পরে যখন যে ঘটনা ঘটবে বা যে দিবস সামনে আসবে, তখন সে অনুযায়ী কলাম লিখে অন-লাইন পত্রিকায় পাঠিয়ে দিন। তারা আপনার লেখায় হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আর হুমড়ি না খেলেও চিন্তা কি? ব্লগ তো আছেই, পাবলিশ করে দিন।
৭) ফেইসবুকে অলস বুদ্ধিজীবীদের অনুসরণ করুন। তারা যে যে বিষয়ে স্ট্যাটাস দেয়, আপনিও সে সে বিষয়ে স্ট্যাটাস দিতে থাকুন। না পারলে কপি-পেস্ট করুন। এটি বুদ্ধিজীবী হবার সবচেয়ে সস্তা উপায়।
৮) মৌলবাদ শব্দটি আপনার রক্ত-মাংস-চর্মে মিশিয়ে ফেলুন। রাতে আপনার নাক ডাকার শব্দ শুনলে যাতে বাসার লোকজন মনে করে, আপনি মৌলবাদ বিরোধী শ্লোগান দিচ্ছেন।
৯) আপনি মুসলিম হলে হিন্দুদের পক্ষে কথা বলুন, আর হিন্দু হলে মুসলিমদের পক্ষে। প্রয়োজনে আপনার নাম পরিবর্তন করুন। যেমন- শফিক রহমানের পরিবর্তে শান্তানু রেহমান কিংবা জহিরুল ইসলাম মামুনের পরিবর্তে জ. ই. মামুন।
১০) এসব করার পরেও যদি বুদ্ধিজীবী স্বীকৃতি না মেলে; হতাশ হবেন না। ‘তরুণ বুদ্ধিজীবী সম্মেলন’ নামে ছোট-খাট একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন, আর সেখানে প্রধান বুদ্ধিজীবী হিসাবে আপনার নাম ঘোষনা করুন। আমি নিশ্চিত, আপনি এবার স্বীকৃতি পাবেন-ই-পাবেন।
November 16, 2014 at 7:41 PM