দক্ষতা হলো অমূল্য, যার কোনো মূল্য নেই
ধরুন, আমি একটা নতুন কাজ শুরু করলাম। প্রথম কিছুদিন কাজটা করতে গিয়ে আমার বেশ দক্ষতা অর্জন হয়। কিন্তু কিছুদিন কাজটা করতে থাকলে নতুন করে আর দক্ষতা অর্জন হয় না, তখন অর্জিত দক্ষতা দিয়ে রোবটের মত কাজটা করে যেতে হয়।
যেমন, আমরা ব্যাংকে চাকরী শুরু করলে প্রথম কিছুদিন বেশ ট্রেনিং থাকে, এতে আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ট্রেনিং শেষে যখন আমরা কিছুদিন কাজটা করতে থাকি, তখন আর আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় না। তখন রোবটের মত কাজটা চালিয়ে যেতে হয়।
মজার ব্যাপার হলো, যতক্ষণ আমরা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে শ্রম দেই, ততক্ষণ জীবন মূল্যবান হয়, কিন্তু জীবিকা পেতে কষ্ট হয়। আবার, যখন আমরা দক্ষতাকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি না করে জমাকৃত দক্ষতাকে রোবটের মত কাজে লাগাতে থাকি, তখন আমাদের জীবন থেকে যায়, কিন্তু জীবিকা বৃদ্ধি পায়। দক্ষতা ও জীবিকার এ এক লুকোচুরি খেলা।
একটা উদাহরণ দিলে আরো স্পষ্ট হবে আশা করি। ধরুন, একজন মানুষ রিক্সা চালাতে পারে; এ দক্ষতা নিয়ে তিনি কাজ করতে গেলে কিছু জীবিকা তাঁর অর্জন হবে। কিন্তু রিক্সা চালানো শেখার পরে তিনি যদি সিএনজি চালানো শিখতে যান, এবং সিএনজি চালানো শিখার পর তিনি যদি মাইক্রোবাস চালানো শিখতে যান, এরপর যদি জাহাজ চালাতে শিখতে চান, এরপর যদি বিমান চালাতে শিখতে চান, তাহলে তিনি এ সময়টাতে চালক হিসাবে তিনি অনেক দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন ঠিক, কিন্তু জীবিকা অর্জন করতে পারবেন না। কিন্তু তিনি যদি সিএনজি চালানো শেখার পর মাইক্রোবাস চালানো না শিখে, সিএনজি চালানোর দক্ষতা নিয়ে কাজে নেমে পড়ে, তখন কিছু জীবিকা অর্জন করতে পারবেন।
জীবিকা ও দক্ষতা অর্জনের এই প্যারাডক্সের ভিত্তিতে মানুষকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
১. যারা কেবল দক্ষতা অর্জন করেন। এ জাতীয় মানুষ সম্মানিত হয়, কালজয়ী হয়, কিন্তু জীবিকার কষ্ট করে জীবন চালাতে হয়।
২. যারা দক্ষতা ও জীবিকা উভয়টা অর্জন করেন। অধিকাংশ মানুষ এমন হয়ে থাকে। এ জাতীয় মানুষ অনেক টাকা পয়সার মালিক হয় না, আবার অনেক সম্মানিত হয় না। তবে জীবনটা মোটামুটি ভালোভাবেই চলে।
৩. যারা জীবনের এক পর্যায়ে গিয়ে দক্ষতা অর্জন বন্ধ করে দেয়, এবং কেবল জীবিকা অর্জনের প্রতি নজর দেয়। এ জাতীয় মানুষ তাদের অর্জিত দক্ষতা অনুযায়ী জীবিকা অর্জন করে। যাদের বেশি দক্ষতা তারা বেশি সম্পদ অর্জন করেন, যাদের কম দক্ষতা তারা কম সম্পদ অর্জন করেন। তবে তুলনামূলকভাবে এরা কম সম্মানিত হতে পারেন।