জিনার শাস্তি শরিয়াহর কত ভাগ?

রাসূল সা ক্ষমতা গ্রহণ করার পরেরদিন-ই কিন্তু চুরি ও জিনার শাস্তি দেওয়া শুরু করেননি।

রাসূলের সা ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় ৬ বছর পর জিনার শাস্তি এবং প্রায় ১০ বছর পরে চুরির শাস্তি দেওয়া শুরু হয়েছে।

বর্তমান সময়ের কেউ কেউ রাসূল স এর যুগে থাকলে, রাসূল সা এর শাসনকেও ‘অ-ইসলামি’ বা ‘শরিয়াহ বহির্ভূত’ শাসন বলতেন। কারণ রাসূল সা তো ক্ষমতা গ্রহণ করার সাথে সাথে চুরি ও জেনার শাস্তি শুরু করেননি।

আসলে শরিয়াহ ও ইসলাম না বুঝার কারণে অনেকে কেবল চুরি বা জেনার শাস্তিকেই একমাত্র শরিয়াহ মনে করেন। এর বাইরে অন্য কিছুকে শরিয়াহ মনে করেন না।

ইসলামি স্কলারগণ শরিয়াহকে সাধারণত ৫ ভাগে ভাগ করেন।

১। ইবাদত: যেমন নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি।

২। মুআমালাত: আর্থিক লেনদেনের নিয়মকানুন, ব্যবসা-বাণিজ্যের আইন, চুক্তি বিষয়ক বিধান ইত্যাদি।

৩। মুআশারাত: সামাজিক সম্পর্ক ও পারিবারিক জীবনের বিধান, যেমন বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার ইত্যাদি।

৪। আদব: শিষ্টাচার, আচরণবিধি, নৈতিকতার নিয়মকানুন ইত্যাদি।

৫। হুদুদ: দণ্ডবিধি, যেমন চুরি, ব্যভিচার, মিথ্যা অভিযোগ, ইত্যাদি ক্ষেত্রে নির্ধারিত শাস্তি।

অর্থাৎ ইসলামি শরিয়াহকে যদি আপনি ১০০ ধরেন, তাহলে বিচার ও শাস্তি হলো শরিয়াহর ২০%।

শতাধিক বড় বড় অপরাধ ও অন্যায়ের কথা বলা হয়েছে কুরআন ও হাদিসে। এগুলোর শাস্তিও ইসলামে রয়েছে। কিন্তু কুরআনে কেবল ৫ টা অপরাধের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

১। চুরি। (সূরা আল-মায়িদাহ, ৫:৩৮)
২। ডাকাতি। (সূরা আল-মায়িদাহ, ৫:৩৩)
৩। ব্যভিচার (জিনা)। (সূরা আন-নূর, ২৪:২)
৪। মিথ্যা অভিযোগ। (সূরা আন-নূর, ২৪:৪)
৫। মুমিন হত্যা। (সূরা আন-নিসা, ৪:৯৩)

এ ছাড়াও অনেক শাস্তির কথা কুরআনে নেই। যেমন মদ পানের শাস্তি কুরআনে নেই, কিন্তু হাদিসে আছে।

এমন আরও শতাধিক শাস্তির বিধান কুরআনে বা হাদিসে সরাসরি নেই, কিন্তু ইসলামি আইনে আছে।

সম্পূর্ণ শরিয়াহর ২০% হলো শাস্তির বিধান। যদি আমি ২০% শরিয়াহকে ১০০ টি অপরাধের শাস্তি দিয়ে ভাগ দেই, তাহলে চুরি হলো ইসলামের ০.২% শরিয়াহ। বা জিনার শাস্তি হলো ইসলামের ০.২% শরিয়াহ।

কেবল চুরি ও জিনার শাস্তিকে বাস্তবায়ন করলে ইসলামের ০.৪% শরিয়াহ বাস্তবায়ন হবে। বাকি ৯৯.৬০% শরিয়াহ বাদ থেকে যাবে। অথচ চুরি ও জিনার শাস্তিকেই মনে করা হয় ১০০% শরিয়াহ।

তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, কুরআনে বর্ণিত ৫ টি অপরাধের শাস্তি-ই কেবল শরিয়াহ, হাদিসে বা ইসলামি আইনে বর্ণিত অন্য শাস্তিগুলো শরিয়াহ না। এখন আমি যদি ২০% শরিয়াহকে ৫ টি অপরাধের শাস্তি দিয়ে ভাগ দেই, তাহলে জিনার শাস্তি হলো ইসলামের ৪% শরিয়াহ।

জিনার শাস্তি বা ৪% শরিয়াহর বাস্তবায়ন করতে হলে আপনাকে ৪ জন সাক্ষী হাজির করতে হবে।

একজন পুরুষ ও নারী একটা ঘরে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিয়েছেন, এটা দেখলে হবে না।

অথবা একজন পুরুষ ও নারী একই কম্বলের নিচে শুয়ে আছে, এটা দেখলেও হবে না।

একজন ভিডিও করলো, আপনি সে ভিডিও দেখলেন, এটাও হবে না। ভিডিওকে সাক্ষী হিসাবে নেওয়া যায় না।

একজন পুরুষ ও নারী চোখের জিনা করেছে, হাতের জিনা করেছে, পায়ের জিনা করেছে, এসব বলেও লাভ নেই। আপনাকে সরাসরি দেখতে হবে তাদের মাঝে জিনা হচ্ছে।

এমন চারজন সাক্ষী হাজির না করতে পারলে, মিথ্যা অভিযোগের জন্যে ইসলামি আইনে আপনাকে শাস্তি দেওয়া হবে।

অর্থাৎ ৪% শরিয়াহ বাস্তবায়ন করতে হলে আপনাকে অনেকগুলো ধাপ পার করে আসতে হবে, নতুবা শারিয়াহ বাস্তবায়ন করতে গেলে ইসলামি আইন অনুযায়ী আপনাকেই শাস্তি পেতে হবে।

দেখুন, কুরআনে বর্ণিত একটি অপরাধ হলো হত্যা বা খুন।

খুনের শাস্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কি ইসলামি শরিয়াহ বাস্তবায়ন করা হয় না?

হত্যা ও খুন তো জিনার মতোই একটা বড় অপরাধ। আপনি যখন ইসলামি শরিয়াহর কথা বলেন, তখন কেবল ৪% শরিয়াহ বা জিনার কথা বলেন কেন? প্রতিদিন যে আমাদের চতুর্দিকে খুনগুলো হচ্ছে, শরিয়াহ বাস্তবায়নের জন্যে সে হত্যাগুলোর বিচার চান না কেন?

জিনার শাস্তি যেমন ৪% শরিয়াহ, হত্যার শাস্তিও তেমন ৪% শরিয়াহ। অথচ অনেকে হত্যার শাস্তি নিয়ে তেমন কোনও কথা বলেন না, বিভিন্ন হত্যার সঠিক বিচার ও শাস্তিকে শরিয়াহ মনে করেন না।

রাসূল স এর মতো ক্রমধারা অবলম্বন করুন। রাসূল স ক্ষমতায় আসার একদিনের মধ্যে চুরি-জিনা সব কিছুর শাস্তি বাস্তবায়ন করে ফেলেননি। ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় ৬ বছর পর জিনার শাস্তি এবং প্রায় ১০ বছর পরে চুরির শাস্তি দেওয়া শুরু হয়েছে।

বর্তমান বাংলাদেশে সকল হত্যার বিচার করা এবং শাস্তি নিশ্চিত করাও একটা ইসলামি শরিয়াহ। এ শরিয়াহ বাস্তবায়ন করুন।

আরো পোস্ট

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশ করা হবে না। তারকা (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক