বেকার

তুরস্কের মেয়েরা সাধারণত বেকার ছেলে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করে না, আর ছেলেরাও বেকার মেয়ে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করে না। তবে তুরস্কে ‘বেকার’ শব্দের অর্থ কর্মহীন নয়, বরং অবিবাহিত।

তুর্কি ভাষার ‘বেকার’ শব্দের মতো আমরাও হয়তো অবিবাহিত হতে পারি, কিন্তু আমরা বাংলা ‘বেকার’ শব্দের মতো কর্মহীন নই। ‘বেকার’ শব্দটি আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া একটি ধারণা মাত্র।

আপনি যদি কারো অধীনে বা কোনো অফিসে কাজ করেন, অন্যের ইচ্ছা পূরণ করেন, তাহলে আপনাকে বেকার বলা হবে না। কিন্তু আপনি যদি নিজের ইচ্ছা পূরণের জন্য কাজ করেন, তাহলে সমাজ আপনাকে বেকার বলে গণ্য করবে।

—-

বেকার” শব্দ‌টি‌র যে পা‌রিভা‌ষিক সজ্ঞা সৃ‌ষ্টি করা হ‌য়ে‌ছে তা মূলত পুঁ‌জিতা‌ন্ত্রিক সজ্ঞা। হয় আপনা‌কে ক‌র্পো‌রেট চাক‌রি বা সরকা‌রি চাক‌রি করা লাগ‌বে। ন‌চেৎ আপনি বেকার!

….

বাংলাদেশের মানুষের মাসিক গড় আয় যেখানে ২৫ হাজার টাকা, সেখানে ইন্দোনেশিয়ার মানুষের মাসিক গড় আয় ৫৫ হাজার টাকা। তাহলে আমরা কেন বেশি আয় করতে পারছি না?
.
বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া উভয়ই এশিয়ার মুসলিম প্রধান দেশ। বাংলাদেশের চেয়ে ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যা অনেক বেশি। বাংলাদেশের চেয়ে ইন্দোনেশিয়ার জনগণ ইসলামিক মূল্যবোধকে বেশি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করে। কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে ইন্দোনেশিয়ার মানুষের উৎপাদন এবং সেবা প্রদান করার ক্ষমতা বেশি। এ কারণে তাদের আয় বেশি।
.
আমার প্রশ্ন হলো: আমরা কীভাবে বাংলাদেশের মানুষের মাসিক গড় আয় ২৫ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫৫ হাজার টাকায় উন্নীত করতে পারি?
.
কয়েকটা পরামর্শ।
.
১। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন:
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কেবল বেকার উৎপন্ন করে। এ শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় সেবা ও পণ্য উৎপাদন আঞ্জাম দেওয়া যায় না। ফলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনীয় সেবা ও পণ্য বাংলাদেশ থেকেই আঞ্জাম দেওয়া যায়। বিদেশ থেকে কোনও সেবা বা পণ্যের মুখাপেক্ষী যাতে বাংলাদেশকে না হতে হয়।
.
২। উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার:
ইন্দোনেশিয়ার মতো হয়তো আমাদের খনিজ সম্পদ নেই। কিন্তু আমাদের অসংখ্য বেকার তরুণ আছে। তাঁদেরকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইটি সেবা প্রদান করতে পারে।
.
৩। শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি:
বেকার তরুণরা চাকরীর জন্যে না ঘুরে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সমাজের একটা সমস্যার সমাধান করার জন্যে কাজ শুরু করতে হবে। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। এগুলোই ধীরে ধীরে ভারী শিল্পে পরিণত হবে।
.
৪। সরকারি নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা:
সরকার চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি হ্রাস করতে পারলে এবং ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করলে, মানুষ কাজ করতে আগ্রহী হবে। অনেক মানুষ কাজে নেমে পড়বে। বেকারের সংখ্যা কমে আসবে।
.
৫। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা:
আমাদের দেশের জনসংখ্যা বেশি। আমরা চাইলেই, নিজেদের যে সেবা ও পণ্য প্রয়োজন, তার চাহিদা পূরণ করে অন্য দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারি। আন্তর্জাতিক বাজারে যেসব পণ্য ও সেবার চাহিদা আছে, সেগুলোর আঞ্জাম যাতে আমরা দিতে পারি, সে জন্যে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
.
এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশের মানুষের আয় বাড়বে ইনশাআল্লাহ।

বেকার হওয়া আপনার সমস্যা না, এটা সিস্টেমের সমস্যা

এলন মাস্কের $২৫০ বিলিয়ন ডলার যদি ১৭ কোটি বাংলাদেশীর মাঝে ভাগ করে দেওয়া হয়, তাহলে প্রত্যেক বাংলাদেশি প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা পাবে।

ঢাকার মেসে প্রতি মাসে যদি ৪ বা ৫ হাজার টাকা খাওয়ার জন্য প্রয়োজন হয়, তাহলে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা দিয়ে প্রায় ৩ বছর খাওয়া সম্ভব।

অর্থাৎ, এলন মাস্কের একজনের সম্পদ দিয়ে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ ৩ বেলা মেসের খাবারের মতো খেতে পারবে প্রায় ৩ বছর ধরে।

একজন ব্যক্তি এত টাকার মালিক হতে পেরেছে কেবল বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে ভিক্ষুকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, সেটাও এই সিস্টেমের ফল।

বিশ্বের ১% মানুষ বিশ্বের ৯৯% সম্পদের মালিক। বাকি ১% সম্পদ দিয়ে চলছে বিশ্বের ৯৯% মানুষ।

বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গরিবকে আরও গরিব করে তোলে এবং বড়লোককে আরও ধনী করে দেয়।

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় কুরআনে বলা হয়েছে:

**”كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ”**

“ধন-সম্পদ যেন শুধু তোমাদের ধনী লোকদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।” (কুরআন ৫৯:৭)

তাহলে এখন আমাদের করণীয় কী?

ব্যাংকগুলোকে এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যেন ৫০% ঋণ গরিবদের জন্য বরাদ্দ করা হয় এবং সুদমুক্ত ঋণের প্রচলন করতে হবে।

অর্থ কি অনর্থের মূল?

বাংলা ভাষায় ‘অর্থ’ শব্দটির তিনটি প্রধান অর্থ রয়েছে:

১. অর্থ (Money): টাকা-পয়সা বা ধন-সম্পদ, যা লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন, “আমার অর্থ-সম্পদ নেই।”

২. অর্থ (Meaning): কোনো শব্দ বা বাক্যের উদ্দেশ্য বা ভাব বোঝায়। যেমন, “এই শব্দের অর্থ কী?”

৩. অর্থ (Purpose): কোনো কাজ বা কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য, ফলাফল বা উপযোগিতা বোঝায়। যেমন, “তার এই প্রচেষ্টা একেবারেই নিরর্থক।”

“মানুষ অর্থ-সম্পদকে এমনভাবে ব্যবহার করা উচিত যাতে তাঁর জীবনটা অর্থপূর্ন হয়” – এ বাক্যে দুইবার ‘অর্থ’ শব্দটি ব্যাবহার হয়েছে। প্রথম ‘অর্থ’ শব্দটি দ্বিতীয় ‘অর্থ’ শব্দের বিপরীত নয়। কিন্তু ‘অর্থ অনর্থের মূল’ – এ বাক্যে প্রথম ‘অর্থ’ শব্দটি দ্বিতীয় ‘অর্থ’ শব্দের বিপরীতে ব্যবহার হয়েছে। এর কারণ কী?

আসলে অর্থ-সম্পদ হলো পানির মতো। গরীবের জন্যে টাকা-পয়সা হলো খাবার পানির মতো, যা সে পান করে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু ধনীর জন্যে এই অর্থ হলো সাগরের পানির মতো, যেখানে সে ডুবে মরে।

অথবা অর্থ-সম্পদ হলো আগুনের মতো। গরীবের জন্যে টাকা-পয়সা হলো চেরাগের মতো, যা দিয়ে সে শুকনো পাতায় আগুন দিয়ে খাবার রান্না করে। ধনীর জন্যে টাকা-পয়সা হলো বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের আগুনের মতো, যা দিয়ে ঘর বাড়ি পুড়ে যায়, মানুষ মরে যায়।

তাহলে অর্থ সবসময় অনর্থের মূল নয়। বরং দেখতে হবে ‘অর্থ’ কার কাছে আছে এবং তা কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গরীবকে অর্থ দিলে তার জীবন অর্থপূর্ণ হয়। অন্যদিকে, ধনীরা যদি অর্থ নিজের কাছে ধরে রাখে, তবে তা তাদের জীবনে অনর্থ বয়ে আনতে পারে।

মূসা আ এর যুগে বনী ইসরাঈল ফিরাউনের চাকরী করতো।

মূসা আ সব চাকুরীজীবীকে উদ্যোক্তা বানিয়ে দিলেন। এরপর বনী ইসরাঈল নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করার চেষ্টা শুরু করলেন।

—-

বিলাল (রা.) উমাইয়ার কাছে চাকরি করতেন।

‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ বলে তিনি উমাইয়ার চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন এবং আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে আল্লাহর ঘরে মানুষকে ডাকার দায়িত্ব নেন।

‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ বলা মানুষ স্বাভাবিকভাবেই কারো দাসত্ব করে না। এক মানুষের দাসত্ব করা প্রকৃতিগতভাবে অন্য মানুষের স্বাভাব নয়।

দাসত্ব একটি অস্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু বর্তমানে এটিকে স্বাভাবিক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সোনার হরিণে পরিণত করা হয়েছে।

—–

কোনও মানুষ-ই বেকার বা কর্মহীন হতে পারে না। বেকার বা কর্মহীন হওয়াটা একটা পাপও বটে।

কারণ, কুরআনে যতবার ঈমান আনার কথা বলা হয়েছে, প্রায় ততবার-ই বলা হয়েছে সৎ কাজ করার জন্যে।

প্রতিটি মুমিন বান্দার কর্তব্য হলো সৎ কাজ করা।

অনেকে মনে করেন, সৎ কাজ মানে কেবল নামাজ রোজা করা।

না, অসৎ কাজ ছাড়া বাকি সকল কাজ-ই হল সৎ কাজ।

ঈমান আনার পরেও কেউ যদি কাজ বা সৎ কাজ না করে কর্মহীন হয়ে বসে থাকে, তাহলে সেটা আল্লাহর আদেশকে অমান্য করা হলো। বেকার ও কর্মহীন হয়ে বসে থাকা একটা পাপও বটে।

…..

পৃথিবী কষ্টের স্থান। কারণ, কষ্টই মানুষকে কর্মঠ ও ক্রিয়েটিভ বানায়। জান্নাতের সুখ পেলে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে, তাই জান্নাতে কোনো সৃজনশীল কাজ নেই।

যার সময় আছে, সে গরিব না।

গরিব সে, যে সময়কে কাজে লাগাতে চায় না।

সময়কে কাজে লাগানোর পরেও যদি কেউ গরিব থাকে, সে দোষ গরিবের না। সে দোষ সিস্টেমের।

সিস্টেম আমাদেরকে গরিব বানায়। অথচ আল্লাহ আমাদের জন্যে অনেক সম্পদ রেখেছেন, যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। (কুরআন ১৪:৩৪)

কেউ গরিব হয়ে থাকতে না চাইলে সিস্টেমের বাহিরে এসে আমাদের জন্যে বরাদ্দকৃত আল্লাহর সম্পদ খুঁজতে হবে।

—-

সময়কে শক্তিতে রূপান্তর করুন

আমাদের সবারই সময় আছে, কিন্তু খুব প্রয়োজনীয় কিছু কেনার শক্তি হয়তো আমাদের নেই। আমরা যদি আমাদের সময়কে শক্তিতে পরিণত করতে পারি, তাহলে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আমরা খুব সহজেই কিনতে পারব। আমাদের সময়ের সাথে একটু দক্ষতা যুক্ত করলেই, সময় শক্তিতে রূপান্তরিত হবে।

ধরুন, একজন ব্যক্তি ৫ ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে ৫০০ টাকা আয় করেন। যদি তিনি ৪ ঘণ্টা রিকশা চালান, তাহলে ৪০০ টাকা পাবেন। এই ৪০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পরিবারের খাবারের জন্য রেখে, বাকি ১০০ টাকা এবং ১ ঘণ্টা সময় ব্যবহার করে যদি তিনি সিএনজি চালানো শিখেন, তাহলে কিছুদিন পর তিনি ৫ ঘণ্টায় ১,০০০ টাকা আয় করতে পারবেন।

দক্ষতা অর্জনের আগে যার ৫ ঘণ্টার মূল্য ছিল ৫০০ টাকা, দক্ষতা অর্জনের পর তার ৫ ঘণ্টার মূল্য দাঁড়াল ১,০০০ টাকা। এটাই হলো সময়কে শক্তিতে পরিণত করা।

—-

একজন মানুষ যতই মূর্খ, অশিক্ষিত ও ফকির হোক, তাঁর মূল পরিচয় সে পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি বা খলিফা। তাঁর মূল কাজ পৃথিবীকে পরিচালনা ও রক্ষা করা। (কুরআন ২:৩০, ৪৫:১৩)

একজন মানুষকে মূর্খ ও ফকির হিসাবে না দেখে আল্লাহর খলিফা হিসাবে দেখলে, তাকে দিয়ে পৃথিবী পরিবর্তন করে ফেলা যায়।

একজন ফকির কখনো ফকির থাকবে না যদি সে তার সময়কে সম্পদে পরিণত করতে পারে।

মানুষের সবচেয়ে বড় নিয়ামত বা সম্পদ হলো তার সময়। যারা সময়কে কাজে লাগাতে পারে না, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। (কুরআন ১০৩:২)

জাতীয়ভাবে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমাদের অনেক সময় আছে, কিন্তু সে সময়কে আমরা সম্পদে পরিণত করতে পারি না।

ব্যক্তি ও জাতীয়ভাবে কীভাবে আমাদের সময়কে সম্পদে পরিণত করা যায়, এ নিয়ে অনেক চিন্তা করা প্রয়োজন।

—-

ব্যবসা মানে অপরকে সহযোগিতা করা।

ইসলাম টাকা অর্জনকে ব্যবসার সফলতা হিসাবে না দেখে সামাজিক প্রভাবকে সফলতা হিসাবে দেখে।

জন্মগতভাবে মানুষ পৃথিবীর পরিচালক। আল্লাহ মানুষকে তার প্রতিনিধি বানিয়ে পৃথিবীকে পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছেন। হয়তো কারো দায়িত্ব বেশি বা কারো দায়িত্ব কম, কিন্তু সবার কিছু না কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে পৃথিবীকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্যে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“তিনিই তোমাদের পৃথিবীর খলিফা বানিয়েছেন এবং তোমাদের একজনকে আরেকজনের ওপরে মর্যাদায় উন্নত করেছেন, যেন তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন।” সূরা আনআম (৬:১৬৫)

“হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলিফা বানিয়েছি, সুতরাং মানুষের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে বিচার কর।” সূরা সাদ (৩৮:২৬)

আল্লাহর একজন খলিফা হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবার পরে কোনও কাজ না করে বসে থাকা অন্যায়। আমাদের কাজ হলো পৃথিবীকে সাজানো এবং গোছানো।

মানুষ দুর্বলতা: নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করা। (কুরআন, ৯৬: ৬,৭)

মানুষের শক্তি: অন্যের সাথে সংঘবদ্ধ থাকা। (কুরআন, ৩: ১০৩)

পৃথিবীতে কীভাবে নিজের অবদান রাখতে হবে, গরিব মানুষকে সমাজ এটা দেখিয়ে দেয় না।

ফলে একজন মানুষ গরিব হওয়াটা তাঁর নিজের সমস্যা না। এটা সমাজের সমস্যা।

রাসূল স একজন ভিখারিকে দেখিয়েছেন, কীভাবে একজন উদ্যোক্তা হওয়া যায়। কীভাবে পৃথিবীতে অবদান রাখা যায়। কীভাবে ঘৃণার জীবন থেকে নিজেকে মুক্ত করা যায়।

হাদিসটি দেখুন

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আনসারের এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে কিছু চাইলেন।

রাসূল সা. বললেন, ’তোমার ঘরে কি কোন জিনিস নেই?’

লোকটি বলল, ‘একটি কমদামী চাদর আছে। এটার একাংশ আমি গায়ে দেই, আর অপর অংশ বিছিয়ে নিই। এছাড়া কাঠের একটি পেয়ালা আছে। এ দিয়ে আমি পানি পান করি।’

রসূল স. বললেন, ‘এ দু’টো জিনিস আমার কাছে নিয়ে এসো।’

লোকটি এ জিনিস দু’টি নবীর কাছে নিয়ে এলো।

রাসূল স. জিনিসগুলো নিজের হাতে নিয়ে বললেন, ‘এ দু’টি কে কিনবে?’

এক ব্যক্তি বললেন, ‘আমি এক দিরহামের বিনিময়ে কিনতে প্রস্তুত।’

রসূল স. বললেন, ‘এক দিরহামের বেশী দিয়ে কে কিনতে চাও?’

এ কথাটি রাসূল ’দু’ কি তিনবার’ বললেন।

(এ সময়) এক ব্যক্তি দু’ দিরহাম বললে তিনি দু’ দিরহাম নিয়ে আনসারীকে দিয়ে দিলেন।

অতঃপর রাসূল তাকে বললেন, ‘এ এক দিরহাম দিয়ে খাদ্য কিনে পরিবারের লোকজনকে দিবে। দ্বিতীয় দিরহামটি দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে আসবে।’

সে ব্যক্তি কুঠার কিনে রসূল স এর কাছে এলো। তিনি নিজ হাতে কুঠারের একটি মজবুত হাতল লাগিয়ে দিয়ে তাকে বললেন, ‘এটা দিয়ে কাঠ কেটে বিক্রি করবে। এরপর আমি এখানে তোমাকে পনের দিন যেন দেখতে না পাই।’

লোকটি চলে গেল। বন থেকে লাকড়ী কেটে জমা করে (বাজারে) এনে বিক্রি করতে লাগল।

(কিছু দিন পর) সে যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে এলো তখন সে দশ দিরহামের মালিক। এ দিরহামের কিছু দিয়ে সে কিছু কাপড়-চোপড় কিনল আর কিছু দিয়ে খাদ্যশস্য কিনল।

রসূল স. (তার অবস্থার এ পরিবর্তন দেখে) বললেন, কিয়ামতের (কিয়ামতের) দিন ভিক্ষাবৃত্তি তোমার চেহারায় ক্ষত চিহ্ন হয়ে ওঠার চেয়ে এ অবস্থা কি উত্তম নয়?

(মনে রাখবে), শুধু তিন ধরনের লোক হাত পাততে পারে, ভিক্ষা করতে পারে। প্রথমতঃ ফকীর যাকে কপর্দকহীনতা মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যে ভারী ঋণে লাঞ্ছিত হবার পর্যায়ে। তৃতীয়তঃ রক্তপণ আদায়কারী, যা তার যিম্মায় আছে (অথচ তার সামর্থ্য নেই)।

হাদিসটি সহীহ : আবূ দাঊদ ১৬৪৫, আত্ তিরমিযী ২৩২৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৭৮৭, সহীহ আল জামি‘ আস্ সগীর ৬০৪১।

হাদিসটির আরবি পড়ুন এখান থেকে

এ হাদিস থেকে প্রমাণিত, মানুষ মূলত গরিব না। সমাজ মানুষকে গরিব করে রাখে। সমাজ যদি মানুষকে একটু সুযোগ দেখিয়ে দেয়, তাহলে সে আর গরিব থাকতো না।

দানের জীবন একবার, ব্যবসার জীবন বারবার

দান-সদকা হলো জরুরি চিকিৎসা, ব্যবসা হলো দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা।

দান-সদকার ফলে মানুষ তাঁর জীবনের কেবল একটা সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু ব্যবসার ফলে মানুষ তাঁর জীবনের অসংখ্য সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

যেসব সংগঠন দানের মাধ্যমে মানুষের সমস্যার সমাধান করেন, তারা অন্যের উপর চেয়ে থাকতে হয়। কিন্তু যেসব ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের সমস্যার সমাধান করেন, তারা অন্য কারো উপর নির্ভর করে চলতে হয় না।

—-

‘ভিক্ষুকরা’ কেউ কাছে আসতে দেখলেই বন্ধুরা কেউ কেউ খুব নিশ্চয়তার ভঙ্গিতে বলে ওঠেন-‘ঢাকায় একটা ভিক্ষুকও নাই! সব এদের ব্যবসা, এদের টাকা দেয়া উচিত না’। বন্ধুদের ভাব দেখে মনে হয়, আস্ত সমাজ-বিশ্লেষক। ধার্মিক বন্ধুরা অবশ্য অন্যভাবে বলেন-‘রাসূল স. এক ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেন নি, এদের ভিক্ষা দেয়া উচিত না’। শুনে মনে হয়, অলেমে-দ্বীন। তাঁদের এ ধরণের বিশ্লেষণ তাৎক্ষণিক ভাবে অসহায় মানুষটিকে অরো বেশি অসহায় করে দেয়; দুঃখকে বাড়িয়ে দেয় শত গুনে।

‘সমাজ-বিশ্লেষক পণ্ডিত’ বন্ধুদের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম, জ্ঞানের অহংকার তাঁদের অন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু ধার্মিক বন্ধুদের এ-জাতীয় কথা আমার ঠিক বুঝে আসে না। এ কথা সত্য যে, অসহায় মানুষদের কাতারে কিছু ভেজাল মানুষও আছেন; কিন্তু তাই বলে পুরো অসহায় সমাজকে তো আর ‘না’ বলে দেয়া যায় না। সব ধরণের মানুষের মাঝেই কিছু ভেজাল মানুষ থাকে; এটি রাষ্ট্রের সমস্যা, অসহায় মানুষদের তো এখানে কোন হাত নেই।

যে সব ধার্মিক বন্ধুরা রাসূলের স. দোহাই দিয়ে অসহায় মানুষকে বঞ্চিত করেন, তাঁদের কাছে প্রশ্ন- সত্যি সত্যি কি রাসূল স. এমনি ছিলেন?

যে কয়টি হাদিস পড়ার সুযোগ হয়েছে, কখনো-কোথাও দেখিনি, রাসূল স. কোন যুক্তির বাহানা দিয়ে কোন অসহায়কে কখনো নিষেধ করেছেন। বরং সারা জীবন অসহায়দের কাছে এসেছেন, আপন হয়েছেন; আর দান-সাদাকার প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছেন, শিখিয়েছেন। কেবল ওহী আসার পরে না, আগেও তিনি ছিলেন অসহায়ের বন্ধু। প্রথম ওহী আসার পর তিনি যখন নিজেক বুঝতে পারছিলেন না, তখন খাদিজা রা. তাঁকে ‘অসহায়ের বন্ধু’ বলে প্রেরণা দিয়েছিলেন।

লক্ষণীয় যে, রাসূল স. অসহায়টিকে শুধু ভিক্ষা করতে বারণ করেই ছেড়ে দেন নি; সাথে সাথে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ আমরা অসহায়দের হক আদায় তো করছিই না; বরং খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়ে তাদেরকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত করে চলেছি।

—-

ব্যবসা করার একটি প্রধান শর্ত হলো মুখে হাসি থাকা। যার মুখে হাসি নেই, তার ব্যবসা হয় না। রাসূল সা. ইসলাম প্রচারের পূর্বে ব্যবসা করতেন, এবং ব্যবসায়ীদের মতো হাসি দিয়ে মানুষের মন জয় করার কৌশলটা অর্জন করেছিলেন। রাসূল স. বলেছিলেন:

تَبَسُّمُكَ فِي وَجْهِ أَخِيكَ لَكَ صَدَقَةٌ

“তোমার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসাটাও সাদাকাহ”। (তিরমিজি, ১৯৫৬)

ছোট বেলা থেকে ব্যবসা করতেন। ব্যবসা সফলের মূল মন্ত্র হলো, কাস্টমারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিক্রি করতে পারা। যারা কাস্টমারকে যত বেশি মূল্যায়ন করতে পারেন, তারা তত বড় ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন। এ জন্যে তিনি ব্যবসায় ভালো করেছিলেন।

পরবর্তীতে ব্যবসার পদ্ধতি তিনি রাজনীতিতে প্রয়োগ করেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে কাস্টমার ভুল করলেও যেমন কাস্টমারকে স্যার স্যার বলা হয়, তেমনি ভোটারদেরকে তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন।

তিনি যে রাজনীতি করতেন, সে রাজনৈতিক দলের অফিসে আগে জুতা নিয়ে প্রবেশ করা যেতো না। তিনি বললেন, এ নিয়ম চলবে না। জুতা খোলা ছাড়াই যে কেউ অফিসে প্রবেশ করতে পারবে। তাঁর রাজনৈতিক দলের মিটিং আগে নারীরা প্রবেশ করতে পারতো না। কিন্তু তাঁর মতে, দোকানে যেমন নারীও যায়, পুরুষও যায়। তেমনি রাজনৈতিক মিটিং এ নারী এবং পুরুষ উভয়ে থাকবে।

একটি কর্পোরেট কোম্পানি যেমন নতুন পণ্য বাজারে আসলে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় গিয়ে প্রচারণা চালায়, তেমনি নির্বাচনের কয়েক বছর আগে থেকেই তিনি প্রচারণা চালাতেন।

এভাবেই তিনি ব্যবসার শিক্ষাকে রাজনীতিতে প্রয়োগ করেন। এবং রাজনীতিতে সফল হন। তিনি ব্যবসার কৌশল রাজনীতিতে প্রয়োগ করে রাজনীতিতে সফল হবার চেষ্টা করেছেন। আর অন্যরা রাজনীতির শক্তিকে ব্যবসায় প্রয়োগ করে ব্যবসায় সফল হবার চেষ্টা করছেন।

এটাই এরদোয়ান এবং অন্যদের মাঝে পার্থক্য।

রাসূল সা, আবু বকর রা ও উমার রা সহ অনেকই আগে ছিলেন ব্যবসায়ী, পরে হয়েছেন রাজনীতিবিদ। এর উলটা যদি হয়, তাহলে নানা সমস্যা হয়।

কেউ আগে ব্যবসায়ী পরে রাজনীতিবিদ হলে, ব্যবসাকে পুঁজি করে রাজনীতি করে। এতে রাজনীতির উন্নতি হয়। অন্যদিকে কেউ আগে রাজনীতি করে পরে ব্যবসায়ী হলে, রাজনীতিকে পুঁজি করে ব্যবসা করে। ফলে রাজনীতির অবনতি হয়।

সম্প্রতি শিল্পী সাইফুল্লাহ মানসুরের সাথে জামায়াতে ইসলামির কারো কারো দ্বন্দ্ব যে দ্বন্দ্ব লেগেছে, তাতে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

একটু ব্যাখ্যা করি।

দেশ একটা বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। দেশের মানুষ সরকারের কাছে টাকা জমা করে যাতে সরকার এ টাকা দিয়ে বিভিন্ন প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবন-যাত্রা উন্নতি করতে পারে।

রাজনীতিতে সফল হন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী চিন্তা-ভাবনা না থাকলে দেশের মানুষের টাকা ভুল জায়গায় ব্যয় করার মাধ্যমে দেশের বিরাট লস হয়। ব্যবসায়ীরা জানে, কীভাবে টাকাকে সঠিকভাবে ব্যয় করে লাভ তুলে আনতে হয়।

অন্যদিকে, যারা আগে রাজনীতি করে পরে ব্যবসা করতে নামে, তারা আসলে কোনও জিনিস থেকে কীভাবে লাভ করতে হয়, তা জানে না। ফলে তারা রাজনীতিকে ব্যবহার করে অতিরিক্ত লাভের জন্যে। এতে ব্যবসার কিছুটা উন্নতি হলেও রাজনীতি বা দেশের সর্বনাশ হয়ে যায়।

—-

আবূ হুরায়রার বিরুদ্ধে অনেক সাহাবী অভিযোগ করে বলতেন, আবূ হুরায়রা খুব বেশি হাদীস বর্ণনা করেন।

এ অভিযোগটি খণ্ডন করে আবূ হুরায়রা রা বলেন – আমার অন্য সাহাবী ভাইদের মত আমি ব্যবসা করি নাই, বা জমা-জমির কাজে ব্যস্ত ছিলাম না। আমি খেয়ে না খেয়ে তুষ্ট থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে লেগে থাকতাম।

আবূ হুরায়রার এ কথাটি খুব ভালো লাগে আমার। জ্ঞান অর্জনের জন্য যে কত ত্যাগ করতে হয়, তা কেবল জ্ঞানের পথিক-ই জানেন।

ব্যবসা ও সুদ

মূর্তির সাথে সাথে সুদ ব্যবস্থারও বিরোধিতা করা উচিত। কারণ, মূর্তির চেয়েও বড় শিরক হলো সুদ ব্যবস্থা। কোর’আনে বলা হয়েছে, যারা সুদের ব্যবসা করে, তারা আল্লাহ তায়ালার সাথে যুদ্ধ করে।

فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا۟ فَأْذَنُوا۟ بِحَرْبٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ۖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَ‌ٰلِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ

অর্থাৎ, “তোমরা যদি সুদের ব্যবসা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করবে না এবং তোমাদের সাথেও কেউ অত্যাচার করবে না ।” [সূরা ২/বাকারা – ১৭৯]

এ আয়াতটিকে আমি যেভাবে বুঝেছি –

পৃথিবীর যাবতীয় অপরাধের মূল হলো অর্থের লোভ। অর্থের প্রতি লোভ থাকার কারণে মানুষ সুদের পন্থা আবিষ্কার করে। সুদ ব্যবস্থা তখনি শুরু হয়, যখন মানুষ দান-সদকা করতে চায় না। আর দান-সদকা তখনি মানুষ করতে চায় না, যখন তার অন্তরে দয়া ও ভালোবাসা থাকে না। মানুষের হৃদয়ে তখনি দয়া ও ভালোবাসার পরিধি বৃদ্ধি হয় না, যখন তার কাছে সত্যের জ্ঞান না থাকে। আর, সত্যের জ্ঞান মানে হলো আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান বা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস।

সুতরাং, সুদ হলো এমন একটি অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার নাম, যা আল্লাহ প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি করে। অর্থাৎ, সুদ শিরকের মতই একটি জুলম বা অন্যায়। তাই আল্লাহ তায়ালা সুদ ব্যবসায়ীদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

মূর্তি নিয়ে আমরা যত সোচ্চার আলহামদুলিল্লাহ, সুদি ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ে কিন্তু আমরা ততটা সোচ্চার নই। আসুন, আদালত থেকে মূর্তি সরানোর আগে, নিজের সম্পদকে সুদ ব্যবস্থা থেকে নিরাপদ করি।

—-

ধর্ম চর্চার পাশাপাশি ব্যবসা

আমাদের মসজিদগুলোর সভাপতি হয় সাধারণত টাকাওয়ালা লোকেরা। যিনি মসজিদ নির্মাণ করতে বা সংস্কার করতে পারবেন, ইমাম-মুয়াজ্জিন-খাদিমদের বেতন দিতে পারবেন, অথবা টাকা সংগ্রহ করার মত সাংগঠনিক দক্ষতা যার আছে, তাঁকেই সভাপতি বানানো হয়।

অনেকে বলেন, ‘মসজিদ কমিটির সভাপতি এমন একজনকে বানানো দরকার যিনি ইমামের অনুপস্থিতিতে ইমামতি করতে পারেন’।

হ্যাঁ। এমন সভাপতি তখনি পাওয়া যাবে, যখন সভাপতির মতো ইমামও টাকা ছাড়া নামাজ পড়াবেন। আর টাকা ছাড়া নামাজ পড়াতে হলে ইমামকে অন্য কোনো ব্যবসা বা চাকরী করতে হবে।

সোজা কথা হলো, কেবল নামাজ পড়ানোর মত যোগ্যতাসম্পন্ন সভাপতি চাইলে হবে না। মসজিদ নির্মাণ করার মত যোগ্যতাসম্পন্ন ইমামও আমাদের প্রয়োজন। পরবর্তীতে তিনি নিজের নির্মিত মসজিদে নিজে ইমাম ও সভাপতি উভয়টা হবেন। যেমন রাসূল সা মসজিদে নববী নিজে তৈরি করে নিজেই সভাপতি ও ইমাম উভয়টা হয়েছিলেন।

কখন অন্যকে চাররী দিবেন?

কিছু কিছু মানুষ আছেন, এত ব্যস্ত থাকেন যে, ফরজ ইবাদাত করাও সময় পান না।

এ ধরণের মানুষরা আসলে ভুল পদ্ধতিতে ব্যবসা বা চাকরী করেন। তারা তাদের কাজে কোনও সাহায্যকারী গ্রহণ করতে চান না। সব কাজ একাই করতে চান, এবং কাজের ফলও একাই খেতে চান। এ ধরনের মানুষ জীবনে খুব বেশি সফল হতে পারে না। সফল মানুষরা নিজেদের কাজ অন্যদেরকে বন্টন করে দেন, এবং কাজের ফলে যে লাভ হয়, সেটাও সাহায্যকারীদেরকে প্রদান করেন। এতে যে কেউ খুব দ্রুত সমৃদ্ধি লাভ করেন।

এর অনেক উদাহরণ আছে কুরআনে।

মূসা আ তাঁর কাজে তাঁর ভাই হারুনকে সাহায্যকারী হিসাবে নিয়েছেন। এবং এর দুইটা কারণ তিনি উল্লেখ করেছেন।

১. সবগুলো কাজ যাতে মূসা আ এর জন্যে সহজ হয়ে যায়।

২. আল্লাহকে যাতে অধিক স্বরণ করা যায়।

মূসা আ আল্লাহকে বলেন:

وَٱجْعَل لِّى وَزِيرًا مِّنْ أَهْلِى – هَـٰرُونَ أَخِى – ٱشْدُدْ بِهِۦٓ أَزْرِى – وَأَشْرِكْهُ فِىٓ أَمْرِى – كَىْ نُسَبِّحَكَ كَثِيرًا – وَنَذْكُرَكَ كَثِيرًا

“আমার পরিবারবর্গের মধ্য থেকে আমার ভাই হারুনকে আমার একজন সাহায্যকারী বানিয়ে দিন। তার মাধ্যমে আমার কোমর মজবুত করুন। এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন। যাতে আমরা বেশী করে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করতে পারি। এবং বেশী পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি।” (২০:২৯-৩৪)

—–

নারীরা কেন বেকার থাকা উচিত নয়?

“দানশীল পুরুষ এবং দানশীল নারী, যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে, তাঁদেরকে (সম্পদ) বাড়িয়ে দেয়া হবে, এবং তাদের জন্যে রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।” [সূরা ৫৭/হাদীদ – ১৮]

কোর’আনের এই আয়াতটি বুঝার জন্যে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া জরুরী।

১) আমাদের সমাজে পুরুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা রয়েছে, তাই পুরুষরা আল্লাহর জন্যে মানুষকে ঋণ দিতে পারেন, কিন্তু নারীদের কি অর্থনৈতিক সচ্ছলতা রয়েছে?

২) নারীরা কিভাবে অর্থনৈতিক দিক থেকে সচ্ছল হবেন? কিভাবে তাঁরা অন্যকে ঋণ দিতে পারবেন?

৩) স্বামীরা কি নারীদের হাতে যথেষ্ট টাকা পয়সা দেয়?

৪) নারীরা কি স্বামীর অনুমতি ব্যতীত যাকে ইচ্ছে এবং যখন ইচ্ছে যে কাউকে ঋণ দিতে পারেন?

৫) অন্যকে ঋণ দেয়া একটি ইবাদাত। এর জন্যে কি স্বামীর অনুমতি নিতে হবে?

৬) নারীরা যদি স্বামীদের থেকে টাকা না পান, তাহলে নারীরা কি ব্যবসা বা চাকরী করতে পারবেন?

৭) কিভাবে নারীরা নিজেদের সম্পদ বাড়াতে পারবেন? এবং কিভাবে নারীরা আল্লাহর সম্মানজনক পুরস্কার পাবেন?

প্রশ্নগুলোর ইতিবাচক উত্তর দেয়া ছাড়া উপরোক্ত আয়াতটি বুঝা সম্ভব নয়।

—-

সুদ ও মানুষের সাইকোলোজি

কোর’আনের প্রতিটি ঘটনাই আমাদের জন্যে শিক্ষণীয়। কেবল নবী রাসুলদের ইতিহাস জানানোর জন্যে আল্লাহ তায়ালা কোর’আনে বিভিন্ন কাহিনী দিয়ে ভরে রাখেননি, বরং প্রতিটি কাহিনীর পিছনে আমাদের জন্যে অসংখ্য শিক্ষা রয়েছে।

যেমন,

আদম (আ)-কে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেয়ার ঘটনাকে আমরা একটি ঐতিহাসিক তথ্য আকারে গ্রহণ করি। অথবা, মূসা (আ)-এর নদী পার হয়ে যাবার ঘটনাকে আমরা একটি অলৌকিক মুজিযা আকারে গ্রহণ করি। কিন্তু এসব ঘটনা কেবল ঐতিহাসিক কোনও তথ্য দেয়ার জন্যে, অথবা কোনও নবীর মুজিযা প্রকাশ করার জন্যে বর্ণনা করা হয়নি। বরং আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্যেই এসব ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ আদম (আ)-এর কাহিনীটি কল্পনা করা যাক,

কোর’আনে আদম (আ)-কে জান্নাত থেকে নামিয়ে দেয়ার কাহিনীটি যখন বর্ণনা করা হয়, তখন আমরা ভাবতে থাকি, এটি আদম (আ)-এর কাহিনী, সুতরাং এই ঘটনাটি থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার তেমন কিছু নেই। অথচ আদম এর ঘটনাটি আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রতিদিন ঘটে থাকে।

দেখুন, আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের সব গাছ থেকেই খাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন, কিন্তু কেবল একটি গাছ থেকে খেতে নিষেধ করেছিলেন। তেমনি, আমাদেরকেও আল্লাহ তায়ালা সবকিছু খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু সুদ খেতে নিষেধ করেছেন।

এরপর,

আদম (আ)-এর কাছে শয়তান এসে বললো –

يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَىٰ شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلَىٰ

“হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত রাখবে এমন বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর ক্ষমতার কথা? [সূরা ২০ / তা-হা – ১২০]

আদম (আ) অনন্ত জীবন লাভের আশায় শয়তানের এ কুমন্ত্রণাটি গ্রহণ করলেন। এর ফলে আদম (আ) জান্নাতে যে সুখ ও শান্তি ভোগ করছিলেন, তাঁর থেকে তা কেড়ে নেয়া হলো।

একইভাবে, শয়তান এসে আমাদের মনে কুমন্ত্রণা দিয়ে বলে যে, “হে সুমন সাহেব! আমি কি আপনাকে একটা সুন্দর পদ্ধতি শিখিয়ে দিব? আপনি ব্যাংকে কিছু টাকা জমা রাখলে আজীবন কোনও চিন্তা এবং পরিশ্রম করা ছাড়াই খেয়ে যেতে পারবেন। আপনি মারা গেলে আপনার সন্তান, তারা মারা গেলে তাদের সন্তানও এভাবে বিনা পরিশ্রমে সারা জীবন খেয়ে যেতে পারবে। সুতরাং, আপনি ব্যাংকে কিছু টাকা জমা রাখুন, এবং এর বিপরীতে আমরা আপনাকে প্রতি মাসে মাসে যে টাকা ‘ইন্টারেস্ট’ হিসাবে দিব, তা দিয়ে আপনি ও আপনার বংশধর সবাই নিশ্চিন্তে খেয়ে যেতে পারবেন”।

অন্যদিকে, আরেক শ্রেণীকে শয়তান এসে কুমন্ত্রণা দিয়ে বলে যে, “দেখো, তুমি এখন যে অবস্থায় আছো, তা থেকে আরো বেশি উন্নত এবং সমাজে আরো বেশি সম্মানিত হবার জন্যে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অথবা অন্য কোনও ব্যাংক থেকে কিছু টাকা ঋণ নাও, মাসে মাসে ব্যাংকে অল্প কিছু টাকা শোধ করে দিতে পারলেই তুমি বিশাল ব্যবসা ও সম্মানের মালিক হয়ে যাবে। সুতরাং, ধরো, যা ইচ্ছে ঋণ নাও”।

আদম (আ)-কে শয়তান যেভাবে লোভ দেখিয়েছে, ঠিক একইভাবে আমাদেরকেও শয়তান লোভ দেখিয়ে ইন্টারেস্ট বা সুদ খাওয়ার জন্যে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। এবং আমরা আদম (আ)-এর মতো ভুল করেই সেই কুমন্ত্রণাটি গ্রহণ করে ফেলি।

শয়তান আমাদেরকে বুঝিয়ে বলে যে, অল্প একটু ইন্টারেস্ট বা সুদ খেলে পৃথিবীতে সারাজীবন খুবই সুখে ও শান্তিতে কাটিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু, আমরা যখন নিজে সুদ খাই অথবা অন্যকে সুদ দেই, তখন আল্লাহ তায়ালা আমাদের হৃদয় থেকে প্রশান্তি কেড়ে নিয়ে যান, যেমন, আদম (আ) থেকে জান্নাতটি কেড়ে নেয়া হয়েছিলো।

এরপর,

আদম (আ)-এর মতো আমরা যখন আমাদের ভুল বুঝতে পারি, এবং ইন্টারেস্ট থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারি, তখন আল্লাহ তায়ালা আবার আমাদেরকে প্রকৃত সুখ ও শান্তি ফিরিয়ে দেন।

অনেকেই আছেন, যারা ইন্টারেস্ট বা সুদের আদান-প্রদান করেন না, তাহলে আদম (আ)-এর এ গল্পটি তাঁদের জীবনে কিভাবে কাজে লাগবে?

আপনার কোনও সন্তান বা ভাই-বোন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী হয়ে থাকলে, তার গণিত বইটি খুলুন। দেখবেন, সেখানে ইন্টারেস্টের অনেক ফর্মুলা বা সূত্র রয়েছে। এগুলো পড়ানোর সময় তাদেরকে আদম (আ) এর গল্পটি মনে করিয়ে দিতে পারেন, এবং শয়তানের কুমন্ত্রণাটিও বুঝিয়ে দিতে পারেন। একইসাথে বুঝিয়ে দিতে পারেন যে, আমাদের পাঠ্যপুস্তক কিভাবে আমাদেরকে কোর’আনের শিক্ষা থেকে দূরে নিয়ে যায়, এবং কিভাবে সুদ খাওয়ার কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে।

জেনে বা অজান্তে, যখনি আমরা সুদের সাথে সম্পর্কিত হয়ে যাবো, তখনি আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু যাবে। আল্লাহ তায়ালা কোর’আনে বলছেন –

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ – فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। আর, যদি তোমরা সুদ পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না।”

আধুনিক যুগে যারা প্রকৃত অর্থেই জিহাদ করতে চায়, তাঁদের কাজ হলো প্রথমত নিজেকে এবং নিজের পরিবারকে সুদমুক্ত রাখা। এবং দ্বিতীয়ত, সকল মানুষকে সুদের বিরুদ্ধে সচেতন করা।

____________

তো, শুরুতে যা বলছিলাম, কোর’আনের গল্পগুলোকে আমাদের দৈনন্দিন সমস্যার সাথে মিলিয়ে বুঝতে পারলে দুটি কাজ হবে।

১। কোর’আনের গল্পগুলোকে কেবল একটি ঐতিহাসিক তথ্য বা অপ্রয়োজনীয় গল্প মনে হবে না।

২। পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষাব্যবস্থা ও আমাদের চারপাশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আমরা কোর’আনের কাহিনীগুলো থেকে বের করতে পারবো।

সুদমুক্ত সুখী জীবন

_______

অর্থনীতিতে একটি সূত্র আছে, “মানুষের চাহিদা অসীম, সম্পদ সীমিত”। এ সূত্রটিকে অর্থনীতিতে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা হয়, কিন্তু ইসলামে নেতিবাচকভাবে গ্রহণ করা হয়।

অর্থনীতিতে উপরোক্ত সূত্রকে ইতিবাচকভাবে দেখার অনেক কারণ আছে।

মানুষ কোনো কিছুতেই সন্তুষ্ট হয় না। মানুষ কোনো জিনিস একটা পেলে দুইটা পেতে চায়, দুইটা পেলে তিনটা পেতে চায়। অর্থাৎ, স্বভাবগতভাবেই মানুষ চাহিদাকে সীমিত করতে পারে না। মানুষের এ অভ্যাসকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতির উপরোক্ত সূত্রটি আবিষ্কার করা হয়েছে। ফলে, এ সূত্রটিকে অর্থনীতিতে ইতিবাচকভাবে দেখা হয়।।

বর্তমান পৃথিবীর অর্থনীতি সম্পূর্ণটাই দাঁড়িয়ে আছে সুদের ভিত্তিতে। উপরোক্ত সূত্রের দ্বারা সুদের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, যেহেতু আমাদের সম্পদ সীমিত, এবং যেহেতু আমাদের চাহিদা অসীম, তাই আমাদের চাহিদা পূরণ করার জন্যে সুদের বিনিময়ে আমাদের টাকা ঋণ নেয়া প্রয়োজন। এতে আমরা আমাদের সকল চাহিদা পূরণ করতে পারবো।

অন্যদিকে, ইসলাম উপরোক্ত সূত্রটিকে নেতিবাচকভাবে দেখারও অনেক কারণ আছে।

১) “মানুষের চাহিদা অসীম, কিন্তু সম্পদ সীমিত” – এ সূত্রের ঠিক বিপরীত সূত্র দেয়া হয়েছে আল কোর’আনে। আল্লাহ বলেন –

وَاٰتٰيكُمْ مِنْ كُلِّ مَا سَاَلْتُمُوهُۜ وَاِنْ تَعُدُّوا نِعْمَتَ اللّٰهِ لَا تُحْصُوهَاۜ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَظَلُومٌ كَفَّارٌ۟

“তোমরা যা চেয়েছো (তোমাদের যা চাহিদা), সবকিছুই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন। তোমরা যদি আল্লাহর নিয়ামত গণনা কর, তাহলে নিয়ামতের সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই অতিমাত্রায় জালিম, অকৃতজ্ঞ”। [সূরা ১৪/ইব্রাহীম – ৩৪]

উপরোক্ত আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় বুঝা যায় –

i) অর্থনীতিতে বলা হচ্ছে, “মানুষের চাহিদা অসীম, এবং সম্পদ সীমিত”। কিন্তু কোর’আনে বলা হচ্ছে, “মানুষের সম্পদ অসীম, কিন্তু চাহিদা সীমিত”। অর্থাৎ, ইসলামে সম্পদের ধারণার সাথে অর্থনীতির সম্পদের মিল নেই। একইভাবে ইসলামের চাহিদার ধারণার সাথে অর্থনীতির চাহিদার মিল নেই।

ii) পৃথিবীতে মানুষের যত চাহিদা আছে, আল্লাহ তায়ালা সব চাহিদা পূরণ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, মানুষের অপূরণীয় কোনো চাহিদা নেই। অন্যদিকে, পৃথিবীতে মানুষের জন্যে সৃষ্ট আল্লাহর সম্পদের কোনো শেষ নেই। মানুষ সম্পদের হিসাব করেও শেষ করতে পারবে না। অর্থাৎ, সম্পদ অসীম।

iii) ইসলামে মানব জীবনের জন্যে প্রয়োজনীয় সবকিছুকেই সম্পদ বা নিয়ামত মনে করা হয়। কিন্তু, অর্থনীতিতে কেবল এমন জিনিসকে সম্পদ মনে করা হয়, যা বিক্রয়যোগ্য। যেমন, সুস্বাদু-পরিচ্ছন্ন-স্বাস্থ্যকর বৃষ্টির পানিকে অর্থনীতিতে সম্পদ মনে করা হয় না, কিন্তু প্লাস্টিকের বোতলে ভর্তি বিভিন্ন কোম্পানির পানিকে সম্পদ মনে করা হয়।

iv) সুদের মাধ্যমে অতিরিক্ত সম্পদ অর্জন করাকে ইসলামে জুলুম বলা হয়, কিন্তু অর্থনীতিতে তাকে ব্যবসা মনে করা হয়। একইভাবে, অতিরিক্ত চাহিদার অধিকারী মানুষকে ইসলাম অকৃতজ্ঞ বলে ভৎসনা করে, কিন্তু আধুনিক অর্থনীতি মানুষকে অতিরিক্ত চাহিদার জন্যে উৎসাহ প্রদান করে।

২) অসীম চাহিদার মানুষদেরকে ভৎসনা করে কোর’আনে অনেক আয়াত নাযিল হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন –

اَلْهٰيكُمُ التَّكَاثُرُۙ – حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَۜ

“প্রচুর সম্পদের চাহিদা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও”। [সূরা ১০২/তাকাছুর – ১,২]

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন –

وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَاَز۪يدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَاب۪ي لَشَد۪يدٌ

“তোমাদের প্রতিপালকের ঘোষণা স্মরণ করো। তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই বাড়িয়ে দিবো। আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর”। [সূরা ১৪/ইব্রাহীম – ৭]

উপরের দুটি আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি –

i) সম্পদের প্রতি মানুষের চাহিদা কখনোই শেষ হয় না। এমনকি কবর যাবার আগ পর্যন্ত মানুষের চাহিদা থাকে। কিন্তু, মানুষের এমন অসীম চাহিদা কোর’আনের দৃষ্টিতে খুবই খারাপ।

ii) মানুষ যদি তাদের চাহিদাকে সীমাবদ্ধ করতে পারে, এবং আল্লাহর দেয়া সম্পদের প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারে, তাহলে আল্লাহ তার সম্পদ আরো বাড়িয়ে দিবেন। কিন্তু, কেউ যদি তার অসীম চাহিদার কারণে আল্লাহর দেয়া সম্পদের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে না পারেন, তাহলে সে নিজেই অনেক অশান্তির মধ্যে থাকবে। এবং তার অশান্তিকে আল্লাহ আরো বাড়িয়ে দিবেন।

সমস্ত আলোচনার মূল কথা হলো, অতিরিক্ত চাহিদা মানুষকে সুদ দেয়া-নেয়ার প্রতি উৎসাহিত করে। একজন ব্যক্তির চাহিদা যদি কম থাকে, তাহলে তিনি ব্যাংক থেকে সুদের বিনিময়ে টাকা ঋণ নিবেন না, বরং জীবনে উপর ধৈর্য ধারণ করবেন। কিন্তু, যাদের চাহিদা বেশি, তারা জীবনের ওপর ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না, বরং ব্যাংক থেকে সুদের বিনিময়ে টাকা নিয়ে নিজেদের চাহিদা পূরণ করবেন। এতে তাদের চাহিদা আরো বাড়তে থাকবে, এবং না পাবার হতাশাও আরো বাড়তে থাকবে। পরিশেষে তিনি একটি অশান্ত ও অসুখী জীবন নিয়েই মরতে হবে। তাই সুখী জীবনের জন্যে সুদমুক্ত থাকুন। এবং সুদমুক্ত থাকার জন্যে চাহিদাকে সীমাবদ্ধ করুন, এবং আপনাকে দেয়া আল্লাহর অসীম নেয়ামতকে অনুভব করুন।

—-

প্রথাগত পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়া করা কোটিপতি

বিল গেটস – মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী। তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন, তবে প্রোগ্রামিং এবং সফটওয়্যারের প্রতি তাঁর আগ্রহের কারণে পড়াশোনা সম্পূর্ণ না করেই বেরিয়ে আসেন।

মার্ক জাকারবার্গ – ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছিলেন, কিন্তু ফেসবুকের কাজ শুরু করার জন্য তিনি কলেজ ছেড়ে দেন।

স্টিভ জবস – অ্যাপল ইনকর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি রিড কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু পড়াশোনা করার মাত্র ৬ মাস পরে কলেজ ছেড়ে যান।

ল্যারি এলিসন – ওরাকল কর্পোরেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়েস এবং ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগোতে ভর্তি হন, কিন্তু কোনোটিই শেষ করেননি।

রিচার্ড ব্র্যানসন – ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ডিসলেক্সিয়া সমস্যার কারণে স্কুল জীবনেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন এবং পরে কলেজে ভর্তি হলেও সেটা শেষ করতে পারেননি।

—–

নারীরা কি বেকার?

বউ জামাইকে বা জামাইকে বউকে দান করাও সাদকা

ইবনু মাস’উদ (রা.) এর স্ত্রী যায়নাব (রা.) এসে রাসূলকে (স.) বললেন, ‘হে আল্লাহর নবী, আজ আপনি সাদকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সাদকা করব ইচ্ছা করেছি। ইবনু মাস’উদ (রা.) মনে করেন, আমার এ সাদকায় তাঁর এবং তাঁর সন্তানদেরই হক বেশী। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবনু মাস’উদ (রা.) ঠিক বলেছে। তোমার স্বামী ও তোমার সন্তানই তোমার এ সাদকায় অধিক হকদার।

সহীহ বুখারী, ইফা নং ১৩৭৭

আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, (রাসূল স.) বলেন, একজন পুরুষ ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য সওয়াবের নিয়তে যখন খরচ করে, তখন সেটা তার জন্যে সদকা হয়।

সহীহ বুখারী, ইফা নং ৫৩

—-

নারীরা কি বেকার?

নারীরা সারাদিন কাজ করেন, তারপরও তাদের বেকার বলা হয়। কারণ, “বেকার” শব্দটি কাজের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং চাকরির সাথে। আপনি যতই উন্নতমানের কাজ করুন না কেন, যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, নির্দিষ্ট কারো অধীনে কাজ না করেন, তাহলে আপনাকে বেকার বলা হবে। যেহেতু নারীরা নির্দিষ্ট সময়ে কারো অধীনে চাকরি করেন না, তাই তাদের বেকার বলা হয়।

“বেকার” শব্দটি নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটি অপবাদ। একজন নারী বা পুরুষ নিজে অনেক কাজ করলেও, যদি তারা কারো অধীনে চাকরি না করেন, তাহলে তাদের বেকার বলে অপমান করা হয়। অথচ অন্যের অধীনে চাকরি করা আমাদের জন্য সবসময় সম্মানজনক নয়।

আমরা সম্মানিত হবো তখনই, যখন সম্মানজনক কাজ করবো। আর এর জন্য অন্যের অধীনে চাকরি করা বাধ্যতামূলক নয়। চাকরি ছাড়াও সম্মানজনক কাজ করা সম্ভব।

সম্মানজনক কাজের সঙ্গে টাকারও সম্পর্ক নেই। টাকা ছাড়াও সম্মানজনক কাজ করা যায়।

ধরুন, আমি যদি জিজ্ঞাসা করি, “একটি বাড়ি এবং একজন মানুষ—এই দুটির মধ্যে কোনটি বেশি সম্মানিত?” আপনি বলবেন, “মানুষ।” সে হিসেবে, একটি বাড়ি নির্মাণ এবং একজন মানুষকে লালন-পালন করার মধ্যে কোন কাজটি বেশি সম্মানজনক? অবশ্যই মানুষকে লালন-পালন করা।

মানুষ লালন-পালনের মতো সম্মানজনক কাজের জন্য শুধু ইচ্ছাই যথেষ্ট। এর জন্য কারো অধীনে চাকরি করা বা টাকা-পয়সার দরকার নেই। কিন্তু আমাদের সমাজ মানুষ লালন-পালনকে কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। যারা সন্তান লালন-পালন করেন, তাদের বেকার বলা হয়। অপমান করা হয়।

একটি নিম্ন চেতনাসম্পন্ন বাড়ি নির্মাণকে যতটা সম্মানজনক মনে করা হয়, আমাদের সমাজ একটি উচ্চ চেতনাসম্পন্ন মানুষ নির্মাণকে ততটা সম্মানজনক মনে করে না। কেন?

এর দুটি কারণ আছে।

প্রথমত, আমরা শুধু টাকাকেই সম্পদ মনে করি। সম্পর্ক, সমাজ, সম্মান, সন্তান এবং সময়—এগুলোকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করি না। অথচ যেটা টাকা দিয়ে অর্জন করা যায়, সেটাই সম্পর্ক, সমাজ, সম্মান, সন্তান বা সময় দিয়ে অর্জন সম্ভব, এটা আমরা ভুলে যাই।

দ্বিতীয়ত, আমরা মানুষকে কেবল টাকার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করি, কাজের ভিত্তিতে নয়। একজন গরিব নারী যদি একজন সন্তানকে লালন-পালন করার জন্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে যান, ব্যাংক তাকে বিশ্বাস করবে না, ঋণ দেবে না। মানুষ নির্মাণের মত একটা মহান কাজের সুযোগ দিবে না। অন্যদিকে, একজন অসৎ মানুষও যদি বাড়ি নির্মাণ করার জন্যে ব্যাংকে যায়, ব্যাংক তাকে বিশ্বাস করবে এবং ঋণ দেবে। বাড়ি নির্মাণে সহযোগিতা করবে।

সবকিছুকে টাকার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার ফলে আমরা কাজ এবং অকাজের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারি না। এর ফলস্বরূপ, অনেক সম্মানজনক কাজকেও অকাজ বা বেকারত্ব বলে মনে করি। যেমন, সন্তানকে সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলাকে অনেকেই বেকারত্ব বলে গণ্য করেন। অথচ এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী সম্পদ নির্মাণের কাজ।

মূল কথা হলো, যারা সন্তান লালন-পালন করেন, সন্তানকে সম্পদে পরিণত করেন, তারা আসলে বেকার নন। তারাও সমাজ ও সম্পদ উন্নয়নের জন্য সন্তান গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন।

কুরআনে সন্তানকে সম্পদের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে,

الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا

“ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি হলো পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য। তবে স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম।” (১৮/সূরা কাহাফ: ৪৬)

সন্তান ও সম্পদ—এই দুটোই মানুষের জীবনে সুখের কারণ। কিন্তু দেখুন, যারা সম্পদ নির্মাণের কাজ করছেন, তাদের ‘বেকার’ বলা হয় না। অথচ যারা মানুষ গড়ার কাজে নিয়োজিত, তাদের ‘বেকার’ বলা হচ্ছে। এটা অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক।

কেউ বলতে পারেন, নারীরা উচ্চ চেতনাসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলেন বলে তারাই সেরা। আবার কেউ বলতে পারেন, পুরুষেরা আধুনিক যন্ত্র, বস্তু এবং সম্পদ তৈরি করেন বলে তারাই সেরা। কিন্তু ইসলাম এমনভাবে কাউকে সেরা বা অধম হিসেবে মূল্যায়ন করে না।

একজন মানুষ সম্পদ নির্মাণ করছেন নাকি সন্তান লালন-পালন করছেন, তার ভিত্তিতে ইসলাম তাকে সম্মান বা অপমান করে না। ইসলাম দেখে তিনি কাজ করছেন কিনা। নারী বা পুরুষ কেউ সৎ কাজ করলে তাঁর সম্মান ও প্রতিদান দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য করে না ইসলাম। সন্তান বা মানুষ লালন-পালন করেন বলে নারীদেরকে বেকার বলে না ইসলাম।

আল্লাহ বলেন –

وَمَن يَعمَل مِنَ الصَّالِحَاتِ مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُو۟لَـٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا

 
“পুরুষ হোক বা নারী হোক, যেই সৎ কাজ করবে, সেই বিশ্বাসী। এবং তাঁরা সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাঁদের প্রতি বিন্দু পরিমাণ জুলুম বা বৈষম্য করা হবে না”। [সূরা ৪/নিসা – ১২৪]

এই আয়াতে স্পষ্ট যে, নারী হোক বা পুরুষ হোক, মানুষকে তার কাজের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। এবং সেখানে নারী বা পুরুষের মাঝে বিন্দু পরিমাণ কোনো বৈষম্য করা হবে না।

পুরুষ অন্যের অধীনে চাকরী করলে তিনি সম্মানিত হবেন, আর নারী নিজের ইচ্ছায় নিজের ঘরে সন্তান লালন-পালনের কাজ করলে তাকে বেকার বলে অপমান করা হবে, এমন ধারণা ইতিহাসবিরোধী, অস্বাভাবিক, অযৌক্তিক, অন্যায় এবং ইসলাম বিরোধী চিন্তা।

—-

আমাদের গ্রামে কোনও ভিক্ষুক নেই। কিন্তু আমাদের উপজেলা শহরে প্রচুর ভিক্ষুক। কোনও কিছু কিনতে গেলেই দেখি পিছনে একজন ভিক্ষুক এসে দাঁড়িয়ে আছেন।

শহরে টাকা পয়সা বেশি লেনদেন হয়। চতুর্দিকে সব বড় বড় মার্কেট। এখানে তুলনামূলক গ্রামের চেয়ে ভিক্ষুক কম থাকার কথা। কিন্তু যে শহর যত বড়, সে শহরে তত বেশি ভিক্ষুক কেন?

আপনি এখানে ভিক্ষুকদের দোষ দিতে পারেন। কিন্তু আসলে ভিক্ষুকদের দোষ খুব কম। আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই ভিক্ষুকদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। আমাদের অর্থনীতির কোনও অর্থ ও নীতি নেই।

“وَالَّذِي خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًا”
“আর যা অশুভ, তা কষ্টসাধ্যভাবে ছাড়া কিছুই উৎপন্ন করে না।”

সঠিক কাজটা না কারলে কেবল কষ্টই হয়, কোনও লাভ হয় না। কোনও বরকত হয় না।


আয়ের চেয়ে ব্যায় যাতে আমাদের বেশি না হয়। ইউসুফ আ এর কাহিনী অথবা কুরআনের নিচের আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

“وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا”
“এবং তোমার হাতকে (অর্থ খরচের ক্ষেত্রে) সম্পূর্ণ প্রসারিত করো না, ফলে তুমি হতাশ এবং পরিশ্রান্ত অবস্থায় বসে থাকবে।”

আরো পোস্ট

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশ করা হবে না। তারকা (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক