|

‘মুত্তাকীন’ [مُتَّقِينَ] ও ‘মুহসিনীন’ [مُحْسِنِينَ] শব্দের মাঝে পার্থক্য কি?

সূরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন –

ذَ‌ٰلِكَ ٱلْكِتَـٰبُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًۭى لِّلْمُتَّقِينَ
এ সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকীন বা পরহেজগারদের জন্য এটি হেদায়েত। [সূরা ২/বাকারা – ২]

কিন্তু, সূরা লোকমানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন –

تِلْكَ ءَايَـٰتُ ٱلْكِتَـٰبِ ٱلْحَكِيمِ هُدًۭى وَرَحْمَةًۭ لِّلْمُحْسِنِينَ
এগুলো প্রজ্ঞাময় কিতাবের আয়াত। সৎকর্মপরায়ণদের জন্য এটি হেদায়েত ও রহমত। [সূরা ৩১/লোকমান – ২,৩]

প্রশ্ন – ১, সূরা বাকারার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা কেবল ‘হুদা’[هُدًى] শব্দটি ব্যবহার করেছেন, কিন্তু সূরা লোকমানের শুরুতে ‘হুদা’ শব্দের সাথে অতিরিক্ত ‘রাহমাহ’ [رَحْمَةً] শব্দটিও ব্যবহার করেছেন। কেন?

প্রশ্ন – ২, ‘মুত্তাকীন’ [مُتَّقِينَ] ও ‘মুহসিনিন’ [مُحْسِنِينَ] শব্দের মাঝে পার্থক্য কি?

উত্তর:

কোর’আনে ‘মুত্তাকীন’ [مُتَّقِينَ] শব্দটি ব্যবহার হয়, যারা কেবল নিজেদেরকে ফেতনা ও বিপদ থেকে রক্ষা করে। কিন্তু, ‘মুহসিনিন’ [مُحْسِنِينَ] শব্দটি ব্যবহার হয়, যারা নিজেদের এবং অন্যদেরকে ফিতনা ও বিপদ থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ, যারা অন্য মানুষের জন্যে নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ স্বীকার করে, তাদেরকেই ‘মুহসিন’ বলা হয়।

যেমন, কোর’আনের দুটি আয়াত দেখুন,

وَأَحْسِن كَمَآ أَحْسَنَ ٱللَّهُ إِلَيْكَ
“তুমি সেভাবে অনুগ্রহ কর, যেভাবে আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন”। [সূরা ২৮/কাসাস – ৭৭]

وَبِٱلْوَ‌ٰلِدَيْنِ إِحْسَـٰنًۭا وَبِذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَٱلْيَتَـٰمَىٰ وَٱلْمَسَـٰكِينِ وَٱلْجَارِ ذِى ٱلْقُرْبَىٰ وَٱلْجَارِ ٱلْجُنُبِ وَٱلصَّاحِبِ بِٱلْجَنۢبِ وَٱبْنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَـٰنُكُمْ
“পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর। আর, নিকটাত্মীয়, এতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট-প্রতিবেশী, দূর-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, পথ শিশু, এবং নিজের চাকর-চাকরানীর প্রতি অনুগ্রহ করবে”। [সূরা ৪/নিসা – ৩৬]

সূরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা ‘মুত্তাকী’ বান্দা হবার জন্যে কেবল ‘হুদা’[هُدًى] শব্দটি ব্যবহার করেছেন, কিন্তু সূরা লোকমানে ‘মুহসিন’ বান্দা হবার জন্যে ‘হুদা’ শব্দের সাথে অতিরিক্ত ‘রাহমাহ’ [رَحْمَةً] শব্দটিও ব্যবহার করেছেন। কারণ, এককভাবে নিজেকে ফিতনা ও বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যে কেবল ‘হুদা’ বা পথ-নির্দেশন লাভ করাই যথেষ্ট। কিন্তু অন্যকে ফিতনা ও বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্যে নিজের কাছে যেমন ‘হুদা’ থাকতে হবে, একইভাবে ‘দয়া’ও থাকতে হবে। অন্যের প্রতি ‘দয়া’ করা ছাড়া ‘মুত্তাকী’ হওয়া গেলেও ‘মুহসিন’ হওয়া যায় না।

তাই, আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারায় ‘মুত্তাকী’ বান্দা হবার জন্যে কেবল ‘হুদা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, কিন্তু সূরা লোকমানে ‘মুহসিন’ বান্দা হবার জন্যে ‘হুদা’ ও ‘রাহমাহ’ উভয় শব্দ ব্যবহার করেছেন।

[উস্তাদ ফাদেল সালেহ আস-সামারায়ি এর লেকচার থেকে]

আরো পোস্ট

একটি মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রকাশ করা হবে না। তারকা (*) চিহ্নিত ঘরগুলো পূরণ করা আবশ্যক