কওমী শিক্ষার সংস্কার কেন প্রয়োজন?

বাংলাদেশে প্রধানত দুটি শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। একটি কওমী মাদ্রাসা বা দেওবন্দী ধারা, অন্যটি সাধারণ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারা। উভয় শিক্ষা ব্যবস্থাকে সংস্কার করতে হবে।

দেওবন্দী কওমী মাদ্রাসাগুলো এমন শিক্ষা অর্জন করে, যার প্রয়োজন এখন শেষ হয়ে গিয়েছে।

নদওয়াতুল উলামা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী মোংগীরীর মতে, বর্তমান সময়ে জ্ঞান পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আগে যে-সমস্ত দার্শনিক সমস্যা ও প্রশ্ন ছিলো, তা এখন কেউ জানতে চায় না। তাই বর্তমানে অতীতের প্রশ্নগুলোর উত্তর শেখার কোনো প্রয়োজন নেই। এখন নতুন জগত, নতুন বীজ, নতুন পানি।

ইসলামের শত্রুতা আধুনিক দর্শনের উপর ভিত্তি করে বর্তমান সময়ে এমন নতুন নতুন প্রশ্ন করে, যে প্রশ্ন আগে কেউ কখনো করেনি। এসব নতুন নতুন প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক উত্তর পুরাতন মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় ছিলো না। যদিও কেউ দাবী করে যে নতুন সমস্যাগুলোর সমাধান তাঁদের কাছে আছে, আসলে কিন্তু নেই।

আগে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতা করতো এবং বর্তমানে যারা ইসলামের শত্রুতা করে, তাদের উভয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। আগের শত্রুরা যেসব প্রশ্ন ইসলামের দিকে যেসব প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতো, বর্তমানের শত্রুরা ভিন্ন ধরণের প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে। ফলে, আগের নিয়মে বর্তমান প্রশ্নের উত্তর দিলে, তা সন্তোষজনক হবে না।

বর্তমানে নতুন দর্শন, নতুন বিজ্ঞান, নতুন বিষয় ও নতুন গবেষণাকর্ম এসেছে। তাই আমাদের আলেমদেরকে এই নতুন জ্ঞানগুলো অর্জন করে ইসলামের বিরুদ্ধে করা নতুন প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে, এবং নতুন সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে। ইসলামের বিরুদ্ধে নতুন যে সন্দেহগুলো সৃষ্টি হয়েছে, সন্তোষজনক জবাবের মাধ্যমে সে সন্দেহগুলো দূর করতে হবে। আর এ জন্যে আমাদের দেওবন্দি কওমী মাদ্রাসাগুলোর পাঠ্যসূচি সংস্কার ও পরিবর্তন করতে হবে।

উপরের কথাগুলো আমি বলিনি, বরং উস্তাদ আবুল হাসান আলী নদভী নিজেই বলেছেন আরো বিস্তৃতভাবে। [দেখুন, ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব, পৃ – ৮৪- ৮৮]

এবার আসি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায়।

আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন শিক্ষা দেয়া হয়, যা আমাদের দেশের কোনো কাজে লাগে না। ঢাবিতে পড়ার সময়ে আমাদের শিক্ষকরা আমাদেরকে বলতেন, ইসলামী স্টাডিজ পড়লে বিসিএস ও ভালো সরকারী চাকরি পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ইসলামিক স্টাডিজের উদ্দেশ্য ইসলামকে জানা নয়, বরং সরকারী চাকর পাওয়া। একইভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যা শেখানো হয়, সবই পশ্চিমা দর্শন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলো বাঙ্গালী মুসলিম। অথচ, বাঙ্গালী ও মুসলিমদের দর্শন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় না। এ জন্যে, আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা যা শিখছি, তা আমার আমাদের সমাজের কোনো কাজে লাগাতে পারি না। আর এ কারণেই একটি শিক্ষার্থী সারাজীবন সমাজবিজ্ঞান পড়ে, অবশেষে গিয়ে ব্যাংকের চাকরি করে।

সুতরাং, কেবল মাদ্রাসার সংস্কার নয়, বরং আমাদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকেও এমনভাবে সংস্কার ও পরিবর্তন করা প্রয়োজন, যাতে এই অর্জন করে সেটাকে আমরা কাজে লাগাতে পারি।

মোট কথা হলো, আমাদের দেশের প্রধান দুটি শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের নিজেদের সমস্যার সমাধান দিতে পারছে না। তাই উভয় শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন।

আরো পোস্ট