ক্ষুদে চিন্তা – ৪

১৫১

গুনাহ করলে সাথে সাথে তওবা করতে হয়। কারণ, মানুষ পানিতে পড়লেই মারা যায় না, পানি থেকে না উঠতে পারলেই মারা যায়।

– রূমি।

Bir günah işlediğinde hemen tövbe et. İnsan suya düştüğü için değil, sudan çıkamadığı için boğulur.

১৫২

ওরা বলে: চোখের আড়াল হলে মনেরও আড়াল হয়।
আমি বলি: মনে যে রয় সে চোখের আড়ালে গেলে কি হয়?

– রূমি।

Dediler ki: Gözden ırak olan gönülden de ırak olur.
Dedim ki: Gönüle giren gözden ırak olsa ne olur.

১৫৩
যে কোনো সংগঠন যখন জন্ম লাভ করে, তখন সংগঠনটি নিষ্পাপ থাকে। সে চেষ্টা করে ভালো কিছু করতে। সংগঠনটি তরুণ ও যুবক হওয়া পর্যন্ত ভালো কাজ করে যেতে থাকে। কিন্তু, সংগঠনটির বয়স হবার সাথে সাথে সংগঠনটি অসুস্থ হতে শুরু করে। ভালো ডাক্তার বা সংস্কারকের পরামর্শে সংগঠনটিকে ঔষধ ও ভিটামিন না খাওয়ালে সংগঠনটি অকাল মৃত্যুবরণ করে।

১৫৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে জিনিসটা আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, তার নাম ইগো বা অহংকার।

১৫৫

মানুষের প্রতিটি কাজে আল্লাহর পক্ষ থেকে হৃদয়ে একটি দিক-নির্দেশনা আসে। কিন্তু, মানুষ তার স্বার্থপরতা, লোভ ও পুরাতন অভ্যাসের কারণে হৃদয়ের দিক-নির্দেশনা অনুসরণ করে না।

১৫৬

প্রেয়সী নারীদেরকে চাঁদের সাথে তুলনা করা হয়। কারণ, চাঁদ যেমন নিজ থেকে আলো ছড়ায় না, বরং সূর্যের আলো
প্রতিফলিত করে; তেমনি নারীরাও নিজ থেকে ভালোবাসা ছড়ায় না, বরং পুরুষের ভালোবাসাকেই প্রতিফলিত করে।

১৫৭

জানা এবং বোঝা এক নয়। একজন মানুষ সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানলেই তাকে বোঝা যায় না।

একজন মানুষকে জানতে অন্য মানুষের খুব বেশি সময় লাগে না, কিন্তু একজন মানুষকে বুঝতে অন্য একজন মানুষের সারাজীবন লেগে যায়।

১৫৮

চিন্তা করা মানে দুটি কাজ করা। এক – অতীতের কোনো কিছুর কারণ খুঁজে বের করা। দুই – ভবিষ্যতের কোনো কিছু বাস্তবায়ন করার পদ্ধতি খুঁজে বের করা। এই দুটি কাজ করা ছাড়া কোনো কিছু ব্যাখ্যা করা যায় না। আর ব্যাখ্যা করা ছাড়া কোনো কিছু বুঝা যায় না। এবং কোনো কিছু বুঝা না গেলে নিজেকে বা বিশ্বকে পরিবর্তন করা যায় না।

অর্থাৎ, চিন্তা ও পরিকল্পনা ব্যতীত বিশ্বকে পরিবর্তন করা যায় না।

১৫৯

মূর্খ লোকেরা গোলাপের সৌন্দর্য দেখে না, কাঁটা দেখে।

– মাওলানা রূমি।

১৬০

যে ইতিহাস ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনা প্রদান করে না, সেটা গল্প, ইতিহাস নয়।

১৬১

বিয়েকে কেউ আনন্দ হিসাবে নেয়, কেউ ইবাদত হিসাবে নেয়। যারা আনন্দের জন্যে বিয়ে করেন, তারা বিয়ের পরপর-ই হতাশ হন, এবং এ হতাশা চলতে থাকে আজীবন। আর, যারা ইবাদত পালনের উদ্দেশ্যে বিয়ে করেন, তারা বউয়ের উপর সন্তুষ্ট হন, এবং এই সন্তুষ্টি চলতে থাকে আজীবন।

১৬২

ইবনে সিনার “কিতাব আশ-শিফা” বইয়ের তার্কি অনুবাদে ভূমিকা লিখেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। এ ছাড়াও দর্শন ও কালামের অনেক বইয়ের ভূমিকা এরদোয়ান লিখেছেন। কারণ, তিনি জ্ঞানকে ভালোবাসেন। তাঁর রাজনৈতিক মুখপত্র হলেন ইব্রাহীম কালীন, যিনি তুরস্কের প্রধান বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম। প্রফেসর দাউতউলু প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিলেও এখনো একে পার্টির সাথে আছেন।

কিন্তু, বাংলাদেশের ইসলামিস্টদের কাছে মেধার মূল্য নেই। ফলে, ইসলামী আন্দোলন থেকে মেধাবীরা বরাবরই পদত্যাগ করছে।

১৬৩

কবিরা ভাষার সংস্কারক। পুরাতন শব্দ থেকে নতুন শব্দ আবিষ্কার করেন তাঁরা। কবিদের যথোপযুক্ত মর্যাদা না দিলে ভাষার সমৃদ্ধি হয় না। আর, ভাষা ব্যতীত চিন্তা বিকশিত হয় না। এবং চিন্তা ব্যতীত সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব নয়।

ইসলামী খিলাফতের বিভিন্ন সময়ে কবি-সাহিত্যিকদের জন্যে রাষ্ট্রীয় ভাতা ছিলো। এবং তাদের কাজ ছিলো কেবল সাহিত্য রচনা করা।

১৬৪

শয়তান মানুষদের থেকে সতর্ক থাকো। কারণ, শয়তান মানুষরা আসল জ্বিন শয়তানকে বিশ্রামে পাঠিয়েছে।

– ইমাম গাজালী।

واحترز من شياطين الإنس فإنهم أراحوا شياطين الجن
[إحياء علوم الدين 1/ 41]

১৬৫

ফেইসবুকের অঙ্গনে ফ্যাসিবাদ হলো, একটু মতে বিরোধী কেউ কমেন্ট করলে তাকে আনফ্রেন্ড করা, কমেন্ট ডিলেট করে দেয়া এবং প্রয়োজনে তাকে ব্লক করে দেয়া।

১৬৬

বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্র সংগঠনগুলোতে চার শ্রেণীর মানুষ রয়েছে।

১) ব্রাহ্মণ বা সদস্য,
২) ক্ষত্রিয় বা সাথী,
৩) বৈশ্য বা কর্মী
৪) শূদ্র বা সমর্থক

যতদিন এই বৈষম্য দূর না হবে, ততদিন তারা গণ মানুষের দলে পরিণত হতে পারবে না।

১৬৭

ঘরে বউ না আসলে মায়ের দুঃখ বুঝা যায় না, অথচ, অনেক মা ছেলেকে বিয়ে করাতে চায় না।

১৬৮
এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার আগে তুরস্কে দুইটা ভয় ছিলো। সেক্যুলারদের ভয় ছিলো, ইসলামিস্টরা ক্ষমতায় আসলে তো আমাদের সবার হাত কেটে ফেলবে। এবং ইসলামিস্টদের ভয় ছিলো, সেক্যুলার সংবিধান থাকলে তো মসজিদে নামাজ পড়া যাবে না।

এই দুইটা ভয়কেই এরদোয়ান জয় করেছেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ইসলামিস্টরা ক্ষমতায় আসলেও সেক্যুলারদের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে, এবং, সেক্যুলার সংবিধান থাকলেও খুব ভালোভাবে ইসলাম পালন করা যায়।

বাংলাদেশে যারা নতুন দল গঠন করার চেষ্টা করছেন, তাদেরকে দুইটা ভয়কে জয় করতে হবে।

১৬৯

আমরা মুসলিমদের গণতন্ত্রে প্রবেশ করার জন্যে ইসলামী রাজনীতি থেকে বের হয়ে গিয়েছি। আমরা গণতন্ত্রপন্থী মুসলিম, আমরা আমাদেরকে ইসলামী রাজনীতির অংশ মনে করি না।

– উস্তাদ রশিদ ঘানুশী।

نخرج من الإسلام السياسي لندخل في الديموقراطية المُسْلمة. نحن مسلمون ديمقراطيون ولا نعرّف انفسنا بأننا (جزء من) الإسلام السياسي

১৭০

রাষ্ট্র ছাড়াও তো মানুষ চলতে-ফিরতে পারে, খেতে পারে, বাঁচতে পারে। তাহলে রাষ্ট্রের প্রয়োজন কেন?

রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয় মানুষের নিরাপত্তার জন্যে। যদি কোনো রাষ্ট্র তার নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তার মানে, সেখানে কোনো রাষ্ট্র নেই।

বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ রাষ্ট্রের কারণে আগুনে পুড়ে মরছে, গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে; এরপর রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে একটি ভাষণ দিচ্ছে, এবং তাতেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব শেষ বলে মনে হচ্ছে।

অথচ, আগুনে পুড়ে মরার জন্যে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলরাই প্রধানত দায়ী।

১৭১

আমাদের যুগে তথ্য বা ইনফরমেশনের কোনো অভাব নেই, সব তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। আমাদের যুগে জ্ঞানেরও তেমন অভাব নেই, হাজার হাজার বই লেখা হচ্ছে প্রতিদিন।

আমাদের যুগে সবচেয়ে বড় অভাব আদর্শ মানুষের। এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম, যাদেরকে কাছ থেকে দেখে আমরাও তাদের মতো হতে চাইবো।

যাদের সংস্পর্শে আমাদের জীবন পাল্টে যাবে, এমন মানুষের খুবই অভাব বোধ করছি।

১৭২

জ্ঞান একটি আলো। আল্লাহ তায়ালা যাকে ইচ্ছে তা দান করেন। (কোর’আন ও হাদিস) থেকে অনেক বেশি উদ্ধৃতি দিলেই আলেম হওয়া যায় না।

– ইমাম মালিক।

وَقَالَ مالك العلم نور يجعله الله حيث يشاء وليس بكثرة الرواية
[إحياء علوم الدين 1/ 27]

১৭৩

সমালোচনা একটি একাডেমিক কাজ। ব্যক্তিগত আক্রমণ ও গালাগালি করা না হলে কোনো সমালোচনাকেই ভয় পাওয়া কিংবা ঘৃণা করা উচিত নয়।

১৭৪

নামাজের জন্যে যেমন অজু করা শর্ত, তেমনি একাধিক বিয়ের জন্যে প্রথম স্ত্রীর সাথে ইনসাফ করা শর্ত।

– আহমদ আত-তাইয়েব, প্রধান ইমাম, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়।

১৭৫
ধর্মে প্রবেশের আগে যুক্তির অনেক প্রয়োজন হয়, কিন্তু ধর্মে প্রবেশ করার পর যুক্তির প্রয়োজনীয়তা ধীরে ধীরে কমে যায়। এ কারণে, অবিশ্বাসীদেরকেই কেবল আল্লাহ তায়ালা বুদ্ধি খাটাতে বলেছেন।

১৭৬
যুক্তি না জানা ব্যক্তি তার নিজের জ্ঞানকেও বিশ্বাস করতে পারেন না।

– ইমাম গাজালি

مَنْ لَا يُحِيطُ بِهَا فَلَا ثِقَةَ لَهُ بِعُلُومِهِ أَصْلًا
[المستصفى ص: 10]

১৭৭
জিহাদ ও ইজতিহাদ আরবি একই শব্দমূল (ج – ه – د) থেকে এসেছে। জিহাদ হলো ইসলামের জন্যে শারীরিক চেষ্টার নাম, আর ইজতিহাদ হলো ইসলামের জন্যে বুদ্ধিবৃত্তিক চেষ্টার নাম।

১৭৮
সৌদি ইসলামের সাথে সালাফিজম কিংবা ইবনে তাইমিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। সৌদি ইসলাম নিজেই একটা ভার্সন।

– উস্তাদ আহমদ রাইসুনী।

১৭৯
চিন্তা চর্চার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতার অনেক মিল রয়েছে। দৌড় প্রতিযোগিতার মতো, চিন্তা চর্চার ক্ষেত্রে যারা প্রথম হবার জন্যে এগিয়ে যান, তারা একা হয়ে যান।

১৮০
আজ কার্ল মার্ক্স-এর মৃত্যু বার্ষিকী।

কার্ল মার্ক্স থেকে সবচেয়ে বড় যে শিক্ষা আমি নিয়েছি, তা হলো, বিপ্লবী হতে হলে তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হয়। কার্ল মার্ক্স ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন। এবং তাঁর বউ তাকে বিপ্লবী হতে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন।

সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশে অল্প বয়সে বিয়ে করতে পারাটাই একটা বিপ্লব।

১৮১
“অতীত হলো ভবিষ্যতের কম্পাস। তুর্ক জাতি কাদের সাথে মোকাবেলা করেছে, কিভাবে নিজেদের অস্তিত্ব লাভ করেছে, কিভাবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এসব না জানলে স্বাধীনতার মূল্য বুঝা যাবে না।”

– এরদোয়ান।

একই কথা বাঙালি মুসলিমদের জন্যেও প্রযোজ্য। বাঙালি মুসলিমরা নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ইতিহাস না জানলে এবং নতুন বয়ান সৃষ্টি না করতে পারলে, কখনোই স্বাধীন হতে পারবে না।

১৮২
“সমাজবিজ্ঞান হলো পশ্চিমা সেক্যুলারদের ধর্মতত্ত্ব। আমাদেরকে নিজেদের ঘরে ফেরা প্রয়োজন। নিজেদের ঘরে ফেরা মানে ইবনে খালদুনের কাছে যাওয়া।”

– জামিল মেরিচ, মুসলিম সমাজবিজ্ঞানী।

১৮৩
কেবল বিজয়ীদের নয়, কখনো কখনো হেরে যাওয়া মানুষকেও বিজয়ীদের চেয়ে বেশি মনে রাখা হয়। যেমন, মুয়াবিয়া ও আলী (রা)-এর যুদ্ধে মুয়াবিয়া (রা) জয়ী হয়েছিলেন, এবং আলী (রা) হেরে গিয়েছিলেন। অথচ, মানুষ বাচ্চাদের নাম মুয়াবিয়া রাখেন না, নাম রাখেন – আলী।

১৮৪
পৃথিবীর প্রতিটি বই একে অপরের ব্যাখ্যা বা তাফসীর।

১৮৫

 

আমার এক বন্ধু তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, উপনিবেশ হবার কারণে মুসলিমরা দুর্বল হয়ে গেছে। আমি বলেছি, কথাটা উল্টো হয়েছে; মুসলিমরা দুর্বল হয়ে যাবার কারণে উপনিবেশের অধীনে চলে যেতে হয়েছে।

– ড আহমদ রাইসুনী, মুসলিম স্কলারদের সভাপতি।

১৮৬
যে মুসলিমরা জ্যামিতিক আকৃতিতে ভারতের তাজমহল, ইরানের এসফাহন মসজিদ এবং বিভিন্ন মাদ্রাসা তৈরি করেছেন, সেই মুসলিমরা এখন তাদের মাদ্রাসা ও মসজিদে একটা জ্যামিতির বক্সও রাখেন না।

১৮৭
আমাদের সমাজে নানান শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। কেউ কম শিক্ষিত, কেউ বেশি শিক্ষিত। কেউ কথায় কথায় যুক্তি খোঁজেন, কেউ খোঁজেন না।

যারা কোনো কাজেই যুক্তি খোঁজেন না, তাদের ইসলাম বুঝার জন্যে সালাফিজম খুবই ভালো একটা পদ্ধতি। কিন্তু, যারা ধর্মকে যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করতে চান, তাদের জন্যে হানাফি পদ্ধতিটা খুব ভালো।

১৮৮
“হে মানুষ! তোমার ররের কাছে পোঁছা পর্যন্ত তোমাকে অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হবে। এরপরেই তাঁর সাক্ষাৎ মিলবে।” [সূরা ৮৪ ইনশিকাক – ৬]

১৮৯

পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিস্ট এবং সৌদি সালাফিজমের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।

পশ্চিমা ওরিয়েন্টালিস্ট বুদ্ধিজীবীরা বলেন, ইসলামের কোনো চিন্তার ঐতিহ্য নেই, ইসলামের নিজস্ব কোনো দর্শন নেই। একইভাবে, সৌদি সালাফি আলেমরা বলেন, ইসলামে কালাম বা দর্শন বলে কিছু নেই, সবি বিদায়াত।

১৯০
মাজহাব জানার বিষয়, মানার বিষয় নয়। ইমাম গাজালির মতে, যারা ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায়, তাঁদেরকে সর্বপ্রথম কোর’আন পড়তে হবে। এরপর হাদিস পড়তে হবে। এবং আরো অনেক কিছু জানার পরে ফিকহ ও মাজহাব সম্পর্কে পড়তে হবে। অর্থাৎ, মাজহাব জানা স্কলারদের কাজ, সাধারণ মানুষের কাজ নয়।

সাধারণ মানুষের কাজ কেবল কোর’আন, হাদিস ও রাসূলের জীবনী পড়ে, এবং তা বুঝে আমল করার চেষ্টা করা। কিন্তু, কেউ যখন কোর’আন-হাদিস থেকে জনকল্যাণের জন্যে নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করতে চাইবে, তখন তাঁকে অবশ্যই মাজহাব বা ইসলামী মেথডলজি সম্পর্কে জানতে হবে।

১৯১

ইনকিলাব বা বিপ্লব শব্দটি আরবি কলব বা হৃদয় শব্দ থেকে এসেছে। তাই, বিপ্লব ও হৃদয় শব্দ দুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যে কোনো সমাজে বিপ্লব করতে হলে বা যে কোনো সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে আগে সাধারণ মানুষের হৃদয় জয় করতে হয়।

১৯২
চিন্তার ক্ষেত্রে আমি সদা পরিবর্তনশীল। যে কেউ আমার চিন্তার বিপরীতে শক্তিশালী যুক্তি প্রদান করলে আমি সাথে সাথেই তা মেনে নিতে রাজি।

আপনার চিন্তার বিপরীতে আমি কোনো কথা বললে আমাকে গালাগালি করবেন না, প্লিজ। গালাগালির দ্বারা আমি চিন্তার পরিবর্তন করি না। আমি পরিবর্তিত হই আমার চিন্তার চেয়েও শক্তিশালী চিন্তা দ্বারা।

১৯৩
কোর’আনের উপর লিখিত যে কোনো বইয়ের চেয়ে কোর’আন পড়া সহজ।

১৯৪
কোনো জিনিস চোখের খুব দূরে হলে আমরা দেখি না, আবার চোখের খুব কাছে হলেও আমরা দেখি না। আল্লাহ আমাদের খুব দূরে বলে আমরা আল্লাহকে দেখি না, তা নয়; বরং আল্লাহ আমাদের খুব কাছে বলেই আমরা আল্লাহকে দেখি না।

১৯৫
বিজ্ঞান কোনো কিছু আবিষ্কার করলেই আপনারা কোর’আন নিয়ে আসেন কেন?

উত্তর।

কেবল বিজ্ঞান নয়, যে কোনো তত্ত্ব আবিষ্কার হলেই আমরা সেটাকে কোর’আন ও হাদিস দ্বারা পরীক্ষা করি। যদি তত্ত্বটি কোর’আন ও হাদিসের বিপরীত হয়, তাহলে তা বর্জন করি। আর যদি তা কোর’আন ও হাদিসের বিপরীত না হয়, তাহলে তা গ্রহণ করি।

১৯৬
পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই, যিনি বিতর্কিত নন। পৃথিবীতে এমন কোনো দল নেই, যাকে অন্য একটি দল বাতিল ফেরকা বলে না। সুতরাং, কে কাকে কাফির বললো, আর কে কাকে বাতিল ফতুয়া দিলো, তা দেখে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।

নবী-রাসূলগণ হলেন সত্যের একমাত্র মাপকাঠি। বাকি অন্য কোনো মানুষ কিংবা অন্য কোনো দলের মধ্যে পূর্ণ সত্য পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু সবার মধ্যেই আংশিক সত্য রয়েছে। আমাদের কাজ হলো সবার থেকে সত্য অনুসন্ধান করে নিজের সত্যকে পূর্ণ করার চেষ্টা করা, যদিও পরিপূর্ণ সত্য কখনোই কেউ অর্জন করতে পারে না।

১৯৭
পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা হলো সেক্যুলার ধর্মের একটি উপাসনার নাম, যা মানুষকে অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক, ঐতিহ্যহীন, পশ্চাৎপদ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন কাজের দিকে আহবান করে।

১৯৮
অনেকে বলেন, “আমাদের বিজ্ঞান সম্মত ইসলামী শিক্ষা প্রয়োজন”। আসলে কথাটা একটু উল্টো হয়েছে। বলা প্রয়োজন, “আমাদের ইসলাম সম্মত বিজ্ঞান প্রয়োজন”।

 

আরো পোস্ট