মাওলানা মওদুদির কি কোনো শিক্ষক ছিলো না?

১৯২১ সালে মওদুদী ভারতীয় আলেমদের সংগঠন ‘জামিয়াতে উলামায়ে হিন্দ’ এর সভাপতি মাওলানা মুফতি কেফায়াতুল্লাহ এবং সেক্রেটারি মাওলানা আহমদ সাদের সাথে দেখা করেন। মুফতি কেফায়াতুল্লাহ ও মাওলানা আহমদ সাদ উভয়ে দেওবন্দি আলেমদের কাছে খুবই প্রসিদ্ধ ও প্রশংসিত ছিলেন। মওদুদী যখন উনাদের সাথে দেখা করলেন, তখন উনাদের সংগঠন ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’ একটি পত্রিকা চালু করেছিলো। পত্রিকাটির নাম ছিলো ‘মুসলিম’। ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’ সেই পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে মওদুদীকে আমন্ত্রণ জানায়, এবং মওদুদী সেখানে পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে যোগ দান করেন।

পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি মওদুদী দেওবন্দের বড় বড় আলেমদের সাথে জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডা দিতেন ও আলাপ-আলোচনা করতেন। দেওবন্দি আলেমদের থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে মওদুদী দরসে নিজামী বা দেওবন্দি সিলেবাস অনুসরণ করে কোর’আন, হাদিস, তাফসীর, ফিকাহ, মানতিক ও দর্শন পড়া শুরু করেন। তিনি মাওলানা আবদুস সালাম নিয়াজির কাছে ফিকাহ, মানতিক, কালাম সহ দরসে নিজামী সিলেবাসের কিতাবগুলো পড়তে লাগলেন।

দুই বছর এভাবে পড়ার পর ১৯২৩ সালে সরকার যখন ‘মুসলিম’ পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়, তখন তিনি দিল্লী থেকে ভোপাল চলে যান। এক বছর পরে, ১৯২৪ সালে, খেলাফত আন্দোলনের নেতা মুহাম্মদ আলীর আমন্ত্রণে মওদুদী আবার দিল্লী আসেন। মুহাম্মদ আলী মওদুদীকে তাদের ‘হামদর্দ’ পত্রিকায় কাজ করতে বলেন। কিন্তু, এ দিকে ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’ নতুনকরে ‘আল জামায়াত’ নামে আরেকটি পত্রিকার প্রকাশ শুরু করে। খেলাফত আন্দোলনের পত্রিকা ‘হামদর্দ’ এবং ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের’ পত্রিকা ‘আল জামায়াত’ উভয়ে মওদুদীকে নিতে চেষ্টা করে। কিন্তু মওদুদী ‘জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের’ পত্রিকায় সম্পাদক হিসাবে কাজ করতে আগ্রহ বোধ করেন। কারণ, ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের’ পত্রিকায় কাজ করলে ভারতীয় বড় বড় আলেম-উলামাদের সাথে তিনি উঠাবসা করতে পারবেন বলে মনে করেছিলেন।

মওদুদী এবার আবার দরসে নিজামীর কিতাবাদি পড়াতে শুরু করলেন। দেওবন্দের দুইজন বড় আলেমের কাছে, পুরাতন দিল্লীর ফাতিহপুরি মসজিদে মওদুদী নিয়মিত দারসে নিজামের কিতাবাদি পড়তে যেতেন। মাওলানা ইসহাকুর রহমান কান্দিহলভীর কাছে তিনি তাফসীরে বাইজাভী এবং আরবি ভাষাতত্ত্ব বা বালাগাত শিক্ষা গ্রহণ করতেন। এবং মাওলানা মুহাম্মদ শরিফুল্লাহর কাছে তিনি ফিকাহের জ্ঞান অর্জন করতেন। তারা উভয়ে মওদুদীকে একজন দেওবন্দি আলেম হিসাবে ইজাজা বা সার্টিফিকেট প্রদান করেছিলেন।

ইমাম মালিক থেকে শুরু করে শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী, শাহ আবদুল আজীজ, মাওলানা মুহাম্মদ মাজহার নানুতবী, খলিল আহমেদ আমবাতবি পর্যন্ত সকল আলেমের সিরিয়ালে মওদুদীকে যুক্ত করে নেন মাওলানা ইসহাকুর রহমান। এবং মওদুদীকে মাওলানা খেতাব প্রদান করেন।

[Seyyed Vali Reza Nasr, Mawdudi and the Making of Islamic Revivalism, Oxford University Press, USA, 1996, pp. 17-18]

মাওলানা মওদুদী ১১ বছর বয়সে মিশরের প্রখ্যাত লেখক কাসিম আমিনের المرأة الجديدة বা “আধুনিক নারী” বইটি আরবী থেকে উর্দু ভাষায় অনুবাদ করেন।

[Seyyed Vali Reza Nasr, Mawdudi and the Making of Islamic Revivalism, Oxford University Press, USA (1996), p. 13]

মাওলানা মওদুদীর দাদা তাঁর বাবাকে ক্রিকেট খেলতে দেননি। বলেছেন, “এটা হলো ইংরেজদের খেলা”। মওদুদীর বাবা ক্রিকেট খেলা শেখার কারণে, মওদুদীর দাদা তাঁর বাবাকে অন্য শহরে পাঠিয়ে দেন, এবং অন্য একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন।

মওদুদীর বাবা পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত একজন আইনবিদ ও উকিল হলেও আস্তে আস্তে চিশতিয়া তরিকায় প্রবেশ করেন। এবং ধীরে ধীরে একজন পীরে পরিণত হন। ফলে, মওদুদীর বাবা তাঁর সন্তান আবুল আলাকে পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত হবার ভয়ে কোনো স্কুল-কলেজে না পাঠিয়ে নিজেই নিজের সন্তানকে উর্দু, ফার্সি, আরবি ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে তোলেন। একই সাথে কোর’আন, হাদিস, ফিকাহ ও যুক্তিবিদ্যা শিক্ষা দেন।

[Seyyed Vali Reza Nasr, Mawdudi and the Making of Islamic Revivalism, Oxford University Press, USA (1996), pp. 11-12]

২৮/১/১৯

আরো পোস্ট